এক সময় মহালয়ার ভোরে রেডিওয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শুনে পুজোর আমেজ শুরু করত বাঙালি। এ বার যদি সব ঠিক থাকে তা হলে মহালয়া থেকেই শহরের পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে যাবে উৎসব! কারণ, এ বার মহালয়া থেকেই পুজোর উদ্বোধন শুরু করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পুজো ময়দানের খবর, সোমবার মহালয়ার দিন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চেতলা অগ্রণীর উদ্বোধন দিয়ে শুরু করবেন তিনি। পরে নাকতলা, সুরুচি সঙ্ঘ, হিন্দুস্থান পার্ক সর্বজনীন, ৯৫ পল্লি, কুমোরটুলি সর্বজনীনের মতো শহরের বিভিন্ন পুজোর উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সূত্রের খবর, উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে এ বার সবথেকে বেশি পুজোর উদ্বোধনে যাবেন মমতা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ‘ভিআইপি’র সূচি মেনে কয়েকটি পুজোয় মহালয়ার দিন থেকেই উদ্বোধনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ রাস্তায় নামবে পঞ্চমী থেকে। এক পুলিশকর্তা জানান, উদ্বোধন হলেও চতুর্থীর আগে কোনও মণ্ডপ সাধারণের জন্য খোলা হবে না বলেই উদ্যোক্তারা তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন।
পুজোয় নামীদামি ব্যক্তিত্বকে দিয়ে উদ্বোধনের রেওয়াজ নতুন নয়। গত দশকেও পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে ‘ভিআইপি’ বলতে রাজ্যপালই ছিলেন। কারণ, বাম আমলের কোনও মুখ্যমন্ত্রী দলীয় অনুশাসনই হোক বা আদর্শ—পুজো উদ্বোধনে থাকতেন না। কিন্তু পালাবদলের পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুজোর উদ্বোধনে যান। এমনকী, পুলিশ-দমকল-প্রশাসনকে নিয়ে পুজো কমিটির সঙ্গে বৈঠকও করেন। পুজো কমিটির লোকেরাই জানাচ্ছেন, সেই বৈঠকেই অনেকে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্বোধনের আর্জি জানান। তাঁরা জানেন, মুখ্যমন্ত্রী নিজে সময় না
দিলে অন্য কোনও মন্ত্রী-সান্ত্রিকে উদ্বোধনে পাঠাবেন।
সূত্রের খবর এ বারও শহরের বেশ কয়েকটি পুজোর উদ্বোধন করবেন রাজ্যপাল। কিছু পুজো আবার চেনা গতের তারকার বাইরে হেঁটে অন্য ধারায় উদ্বোধন করবে। যেমন এন্টালি উদয়ন সঙ্ঘের থিম বর্তমান পৃথিবীতেও মানুষরূপী অসুর আছে। তাদের নিধন করবে সমাজের নারী শক্তি-ই। পুজোর সভাপতি বিশ্বজিৎ দেব বলছেন, ‘‘আমাদের পুজোর উদ্বোধন করবে বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলের ছাত্ররা।’’
গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, পুজোর নির্ঘণ্ট এগিয়ে এনেছেন সাধারণ মানুষ। আগে ষষ্ঠীর দিন থেকে পথে নামতেন লোকজন। সপ্তমী পেরিয়ে অষ্টমীতে জনজোয়ারে ভাসত মহানগরী। কিন্তু পুজোগুলি এখন চতুর্থী থেকেই মণ্ডপ খুলে দেয়। ফলে ফাঁকায় ঠাকুর দেখার আশায় রাস্তায় নেমে পড়েন লোকজন। তাতেই বাধে যানজট। গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে এক যুবক বলছেন, পঞ্চমীর রাতে নাইট ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরার পথে তিনি ভেবেছিলেন, আহিরিটোলা-কুমোরটুলির মণ্ডপ দেখে যাবেন। কিন্তু রবীন্দ্র সরণিতে ঢুকেই বুঝলেন ভুল করে ফেলেছেন। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ওই এলাকায় থিকথিক করছে মানুষ এবং গাড়ি।
গত বছর পঞ্চমীর রাতেই গড়িয়াহাট এলাকায় মাঝ রাতেও ভিড় হয়েছিল। গড়িয়াহাট এলাকার এক মণ্ডপের বাইরে দাঁড়িয়ে এক পুজোকর্তা তখনও শেষ মুহূর্তের কাজের তদারকি করছিলেন। তার মধ্যেই লোকজন দেখে বললেন, ‘‘আজই এই ভিড়। অষ্টমীতে কী হবে ভাবুন!’’ সন্তোষপুরের একটি মণ্ডপে ‘ফিনিশিং টাচ’ দিচ্ছিলেন শিল্পী। তার মধ্যেই ভিড় ঢুকে পড়ায় রীতিমতো অস্বস্তিতে তিনি। পঞ্চমীর রাতেই হরিদেবপুরের রাস্তা তখন কার্যত অবরুদ্ধ। পুলিশের অনেকেই মনে করছেন, এ বারও একই পরিস্থিতি হবে।
পরিস্থিতি যদি প্রতি বছরই এমন হয় তা হলে পুলিশি আয়োজনে বদল আনা হবে না কেন?
কলকাতা পুলিশের একাধিক অফিসার বলছেন, পুজোর ভিড়-আইনশৃঙ্খলা সামলাতে প্রচুর পুলিশ লাগে। কার্যত গোটা বাহিনীই রাস্তায় নেমে পড়ে। কিন্তু খুব বেশি দিন গোটা বাহিনীকে রাস্তায় নামানো সম্ভব না। তাই আগে ষষ্ঠী থেকে রাস্তায় নামত লালবাজার। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে গত দু’বছর ধরে পঞ্চমী থেকে পুরোদস্তুর রাস্তায় নামছে পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ বছর পুজোর সঙ্গে মহরমও পড়েছে। ফলে ১৮ অক্টোবর পঞ্চমী থেকে রাস্তায় নামবেন আমাদের কর্মীরা। মহরম-পুজোর বিসর্জন শেষ করে এই ডিউটি শেষ হবে লক্ষ্মীপুজোর দুপুরে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, মোটরবাইক বাহিনী ও ইভটিজার রুখতে বিশেষ বাহিনী রাখা হবে। ভিড়ে মিশে থাকবেন সাদা পোশাকের মহিলা কর্মীরাও। গোয়েন্দা বিভাগের কর্মী-অফিসারেরা সাদা পোশাকে এক-একটি দলে ভাগ হয়ে ৩-৪টি করে পুজোর উপরে নজর রাখবেন। শহরের নামী পুজোগুলির ভিড় সামলাতে সেক্টর ভিত্তিক দল থাকছে। লালবাজারের মূল ও ট্রাফিক কন্ট্রোল রুম ছাড়াও বিভিন্ন ডিভিশনের কন্ট্রোল রুমগুলি সক্রিয় থাকবে। পুলিশকর্তারা আরও জানান, পুজোর আগে পুজোর বাজারেও নজর রাখতেও বাহিনীকে সক্রিয় রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy