Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দু’বছর পরে টিউব ছেড়ে মুখে খেলেন ফুরকান

দু’বছর মুখে কিছু তুলতে পারতেন না। খেতে ভরসা ছিল রাইল্স টিউব। নদিয়ার করিমপুরের কাঁঠালিয়ার বাসিন্দা ফুরকান মণ্ডল কখনও ভাবেননি ফের তিনি মুখ দিয়ে খেতে পারবেন। অবশেষে এসএসকেএম হাসপাতালের নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের সৌজন্যে তা সম্ভব হল।

হাসপাতালে ফুরকান। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে ফুরকান। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

দু’বছর মুখে কিছু তুলতে পারতেন না। খেতে ভরসা ছিল রাইল্স টিউব। নদিয়ার করিমপুরের কাঁঠালিয়ার বাসিন্দা ফুরকান মণ্ডল কখনও ভাবেননি ফের তিনি মুখ দিয়ে খেতে পারবেন। অবশেষে এসএসকেএম হাসপাতালের নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের সৌজন্যে তা সম্ভব হল।

সম্প্রতি দুপুরে রাইল্স টিউব খুলতেই ফুরকান নিজেই গ্লাসে চুমুক দিয়ে আধা-তরল খাবার খেয়ে দেখান তিনি। পরে ধরা গলায় হেসে বলেন, ‘‘ডাক্তারবাবুরা বলেছিলেন, নিজেই খেতে পারব। আজ পেরেছি!’’ এসএসকেএম-এর ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক বলেন, ‘‘ওঁকে এখন আধা-তরল খাবার খেতে বলা হয়েছে। আশা করছি, দু’-তিন মাসের মধ্যে উনি পুরো সুস্থ হবেন।’’

ফুরকানের ছেলে বাকু জানান, দু’বছর আগে জমিতে চাষ করার সময়ে হঠাৎ শরীর অসাড় লাগতে শুরু করে তাঁর বাবার। নিজেই সাইকেল চালিয়ে বাড়ি চলে আসেন। কিন্তু বারান্দায় পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারান। প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, ফুরকানের স্ট্রোক হয়েছে। বাকু বলেন, ‘‘ওখানে বাবাকে দু’বার চা খেতে দেওয়া হয়। প্রথম বার ঢোক গিলতে পারলেও, এর পর থেকে পারেননি।’’

এর পরে জেলা হাসপাতাল, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করেও ফুরকান সুস্থ হননি। শেষে বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসে ভর্তি করা হয় ফুরকানকে। সেখানে শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও মুখ দিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা হারান তিনি। অগত্যা রাইল্স টিউব লাগানো হয়। টানা দু’বছর সেটি ব্যবহারের ফলে শেষ দিকে নিজেই রাইল্স টিউব খুলতে ও পরতে পারতেন ফুরকান। চিকিৎসকদের সামনে নিজেই টিউবটি খোলেন প্রৌঢ়।

বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেসের চিকিৎসক বিমানকান্তি রায় জানান, ফুরকানের মস্তিস্কের নীচের অংশ মেডুলাতে স্ট্রোক হওয়ায় খাদ্যনালীর স্নায়ু চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাতেই খাদ্যনালীর ক্রিকোফ্যারিংক্স অংশের পেশি শক্ত হয়ে স্বাভাবিক কাজ বন্ধ করে। ফলে ফুরকান গিলতে পারতেন না।

বিমানবাবু জানান, এই ধরণের স্ট্রোকে মুখে দিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা তিন মাসেই ফিরে আসে। কিন্তু দু’বছর ধরে চেষ্টা করেও উন্নতি না হওয়ায় ফুরকানকে এসএসকেএমে চালু হওয়া নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি।

রাজেশবাবু বলেন, ‘‘তরল জিনিস কী ভাবে খেতে হবে ফুরকানকে তার কিছু পদ্ধতি শেখানো হয়।’’

এসএসকেএম-এর ইএনটি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অরুণাভ সেনগুপ্তের সহযোগিতায় ফুরকানের গলায় এন্ডোস্কোপির মাধ্যমে বিশেষ ইঞ্জেকশন (বটুলিনিয়াম টক্সিন) দেওয়া হয়। ১০ দিন পরে ক্রিকোফ্যারিক্স অংশের মাংসপেশি কিছুটা নরম হয়। ফুরকানকে আধা-তরল খাওয়ানো শুরু হয়।

চিকিৎসকেরা জানান, স্ট্রোকের পরে সাধারণত রোগীকে স্যালাইন, রাইল্স টিউব লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে সাধারণ ফিজিয়োথেরাপি দেওয়া হয়। তবে রোগীর মুখে খেতে পারা জরুরি। কারণ, রোগী টিউবে সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হলে তরল খাবার ফুসফুসে জমে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Neuro Rehabilitation Clinic SSKM Stoke
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE