Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ভুয়ো পারমিট নিয়ে গ্রেফতার

মাস দুয়েক আগে মায়ের হাত ভাঙার খবর আসে। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, তাই চাইলেও তিনি বাংলাদেশের ভিসা পাবেন না। তাই শুভ ভারতের ভিসা নিয়ে এ দেশে আসেন।

শুভ বিশ্বাস

শুভ বিশ্বাস

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০১:৫০
Share: Save:

সাত-আট মাস ধরে মরক্কোর রাস্তায় ঝাঁট দিয়ে, ভিক্ষা চেয়ে বেশ কিছু ইউরো জমিয়ে ফেলেছিলেন। তখন আলাপ হয় সে দেশের এক দালালের সঙ্গে। কিছু ইউরোর বিনিময়ে ঠিক হয়, সেই দালাল পৌঁছে দেবেন স্পেনের মাদ্রিদে।

আদতে বাংলাদেশের নাগরিক, ৩২ বছরের শুভ বিশ্বাসের জীবন এর পরে পরিকল্পনামাফিকই চলছিল। রাতের অন্ধকারে জেলে ডিঙিতে করে মাদ্রিদ। সেখান থেকে ফ্রান্সের প্যারিস। সেখানে ফলের দোকানে কাজ। আর তার পরে রাজনৈতিক আশ্রয়। কিন্তু, মাস দুয়েক আগে খবর মেলে, পড়ে গিয়ে হাতের হাড় ভেঙেছে মায়ের। তাই বাড়ি ফিরে আসেন। সেখানে কিছু দিন কাটিয়ে ফ্রান্সে ফেরার পথেই তিনি ধরা পড়ে যান কলকাতা বিমানবন্দরে। আপাতত বিমানবন্দর পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন তিনি।

পুলিশ সূত্রের খবর, বাংলাদেশের খুলনা ডিভিশনের মগুরা জেলায় শুভর বাড়ি। সেখানে ছোটখাটো কাজ করতেন তিনি। কিন্তু দারিদ্র চেপে বসেছিল। মা ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। একটি সংস্থায় সেলস-এর কাজও করেছেন। তখনই জানতে পারেন, মরক্কো হয়ে ফ্রান্সে যেতে পারলে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া যাবে। বদলে যাবে জীবন। বাংলাদেশি পাসপোর্ট বানিয়ে মরক্কোর ভিসা জোগাড় করে তিনি পৌঁছে যান মরক্কোয়। সেখানে তাঁর দেশেরই পূর্ব পরিচিতেরা ছিলেন। এর পরে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করতে শুরু করেন।

পুলিশকে শুভ জানিয়েছেন, ফ্রান্সের ভিসা নিয়ে সে দেশে গেলে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে সমস্যা হবে— বলেছিলেন বন্ধুরা। তাই মরক্কো থেকে লুকিয়ে ফ্রান্সে ঢুকে রাজনৈতিক আশ্রয় চান শুভ। বাংলাদেশ মুসলমান রাষ্ট্র, আর তিনি হিন্দু, এই যুক্তি দেখিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে সমস্যা হয়নি তাঁর, দাবি করেছেন শুভ। এখন তিনি ফ্রান্সের নাগরিক।

মাস দুয়েক আগে মায়ের হাত ভাঙার খবর আসে। যেহেতু বাংলাদেশ থেকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, তাই চাইলেও তিনি বাংলাদেশের ভিসা পাবেন না। তাই শুভ ভারতের ভিসা নিয়ে এ দেশে আসেন। কলকাতায় এসে দালাল ধরে বেআইনি ভাবে সীমান্ত পেরিয়ে তিনি বাড়িতে যান। মা ও স্ত্রীর সঙ্গে কিছু দিন কাটিয়ে তিনি যখন ভারতে ফেরেন, তত দিনে তাঁর ভারতে থাকার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। তাই বিদেশি হিসেবে তাঁর এ দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ‘এগজিট পারমিট’-এর প্রয়োজন ছিল। সরকারি ভাবে তা চাইতে গেলে তাঁকে কেন ভারতে এসেছেন, তার যুক্তিগ্রাহ্য প্রমাণ দিতে হত। কোনও ভাবে লুকিয়ে বাংলাদেশ যাওয়ার খবর বেরিয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে, এই ভেবে খড়দহের বাসিন্দা এক দালালের কাছ থেকে ২১ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি জাল এগজিট পারমিট নেন। তা নিয়েই কলকাতা থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে ধরা পড়েন তিনি।

পুলিশ খড়দহ থেকে অভিযুক্ত ওই দালাল ননীগোপাল গোস্বামীকেও গ্রেফতার করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE