Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পায়ে হেঁটে নর্মদার উৎস থেকে মোহনা

মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক থেকে শুরু হয়ে গুজরাতের খাম্বাত উপসাগরে গিয়ে মিশেছে পুণ্যতোয়া নর্মদা। বয়ে গিয়েছে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের উপর দিয়ে।সেই নর্মদা অববাহিকায় অভিযান করতে গত ১৩ জুলাই গুজরাত থেকে সফর শুরু করেন চন্দন।

অভিযান: যাত্রাপথের শেষে অমরকণ্টকে চন্দন বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

অভিযান: যাত্রাপথের শেষে অমরকণ্টকে চন্দন বিশ্বাস। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৪২
Share: Save:

দীর্ঘ ১,০০৭ কিলোমিটার পথ। কখনও দুর্ভেদ্য জঙ্গল, কখনও পাহাড়। সফরসঙ্গী বলতে পিঠের রুকস্যাকটুকু। এ ভাবেই মাত্র ৪৬ দিনে নর্মদা নদীর মোহনা থেকে উৎস পর্যন্ত পাড়ি দিলেন বারাসতের হৃদয়পুরের বাসিন্দা, বছর বত্রিশের চন্দন বিশ্বাস। মূলত পায়ে হেঁটেই!

মধ্যপ্রদেশের অমরকণ্টক থেকে শুরু হয়ে গুজরাতের খাম্বাত উপসাগরে গিয়ে মিশেছে পুণ্যতোয়া নর্মদা। বয়ে গিয়েছে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্র ও গুজরাতের উপর দিয়ে।সেই নর্মদা অববাহিকায় অভিযান করতে গত ১৩ জুলাই গুজরাত থেকে সফর শুরু করেন চন্দন। এর পরে কখনও নদীপার্শ্বের গ্রাম, কখনও জঙ্গল অথবা সাতপুরা-বিন্ধ্যের পাহাড়ি পথ— সঙ্গী ও বাহনহীন পথে এ ভাবেই চলেছে তাঁর অভিযান। অবশেষে গত ২৮ অগস্ট অমরকণ্টকের মাই কি বাগিচায় পৌঁছে শেষ হয় তাঁর নর্মদা-পরিক্রমা।

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের সাক্ষী নর্মদা অববাহিকায় এই অভিযানের কারণ কী? যুবকের জবাব, ‘‘গত বছর আমার মা অমরকণ্টক ঘুরে এসে নর্মদা ট্রেকের কথা বলেছিলেন। তখনই এই অভিযানের কথা আমার মাথায় ঢোকে। কোনও ধর্মীয় কারণ নয়, স্থানীয় লোকজন আর তাঁদের সংস্কৃতিকে জানা এবং অ্যাডভেঞ্চারের নেশা থেকেই এই পথ বেছে নেওয়া।’’

কেমন ছিল এই পরিক্রমা? দেড় মাসের সফরে কোনও দিন হেঁটেছেন ২৫-৩০ কিলোমিটার পথ, কোনও দিন তারও বেশি। কখনও রাত কাটিয়েছেন মন্দির প্রাঙ্গণে, কখনও গ্রামবাসীরাই সোৎসাহে নিজেদের বাড়িতে রাত কাটানোর অনুরোধ করেছেন। চন্দনের কথায়, ‘‘নর্মদার তীর ধরে যাঁরা হেঁটে যান, তাঁদের সাক্ষাৎ শিব বলে বিশ্বাস করেন এখানকার লোকেরা। ফলে আমায় তাঁরা এক প্রকার মাথায় করে রেখেছিলেন।’’ পথে পড়েছে শূলপানেশ্বর, পানিসার ও অমরকণ্টকের জঙ্গলও। বৃষ্টি আরও কঠিন করেছিল অভিযান।ফলে দুর্ভেদ্য শূলপানেশ্বর জঙ্গলের একাংশ গাড়িতে পার করতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।

অভিযানের ঝুলিতে অভিজ্ঞতাও কম নয়। কখনও দেখেছেন গ্রামে জোতদার প্রথার কুৎসিত রূপ, আবার কখনও উপলব্ধি করেছেন প্রাচীন আদিবাসীদের উচ্ছেদ-দুর্দশার করুণ কাহিনি। চন্দন বলছেন,‘‘নর্মদার উপরে বাঁধ তৈরির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এলাকার কোল-ভীল উপজাতির মানুষেরা।’’ পথে সমস্যাও কিছু কম ছিল না। চন্দনের কথায়, ‘‘পাহাড়ি মানুষদের মতো এখানকার লোকেদের কাছে ট্রেক করাটা খুব পরিচিত ছবি নয়। কেন আমি হেঁটে চলেছি, এটা তাঁদের বোঝানোটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল।’’

২০১৭ সালে অরুণাচল থেকে লাদাখ পর্যন্ত সাইকেলে ট্রান্স হিমালয় অভিযান করে নজর কেড়েছিলেন পেশায় সিনেমাটোগ্রাফার ও লেখক চন্দন। এ বারের পরিক্রমায় অবশ্য ব্রাত্য থেকেছে সাধের সাইকেলটি। পরের লক্ষ্য? চন্দন বলছেন, ‘‘আফ্রিকা অথবা উত্তর আমেরিকায় সাইকেল ট্রেক— তাড়াতাড়িই বেরিয়ে পড়তে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Trekking Narmada Source Walking Chandan Biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE