Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশ হতে চান গঙ্গায় ঝাঁপ দিতে যাওয়া যুবক

পাভলভ হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সুস্থ হেমন্ত গগৈ নামে ওই যুবক অবশেষে বাড়ি ফিরলেন আদালতের নির্দেশে।

ফেরা: অসমে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে হেমন্ত। —নিজস্ব চিত্র

ফেরা: অসমে যাওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে হেমন্ত। —নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

হাসপাতালে ১৫ দিন কাটিয়ে সুস্থ, ধোপদুরস্ত যুবককে দেখে তখন চেনার উপায় নেই। শার্ট-প্যান্ট, হুডওয়ালা জ্যাকেট পরে মায়ের সঙ্গে হাসিমুখে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির তিনি।

উত্তর বন্দর থানার পুলিশ আধিকারিককে দেখে বলেন, ‘‘স্যার সে দিন আপনি সিংহ আর ইঁদুরের কথাটা না বললে সত্যিই হয়তো গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে দিতাম।’’ শুনে পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘আর যেন ও সব মাথায় না আসে!’’ পরে ওই পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘ছেলেটা যখন হাওড়া সেতুর রেলিং ধরে ঝুলছে, তুলে আনার জন্য ওকে বলেছিলাম, তোমার চেহারা তো সিংহের মতো। কাজকর্ম ইঁদুরের মতো কেন? চার ঘণ্টা ধরে টানা এ সবই বলে গিয়েছি। এই কথাটা কাজে লেগেছিল। ভাল থাকুক। জীবনে ফিরে আসুক।’’

পাভলভ হাসপাতালে চিকিৎসার পরে সুস্থ হেমন্ত গগৈ নামে ওই যুবক অবশেষে বাড়ি ফিরলেন আদালতের নির্দেশে। হাওড়া স্টেশন দিয়ে কিছুতেই যেতে রাজি না হওয়ায় শনিবার হেমন্তকে তাঁর মা মিনু গগৈ গোহাইনের সঙ্গে বিমানে গুয়াহাটি পাঠানো হয়েছে। তার আগে ব্যাঙ্কশাল আদালতে হাজির হয়ে পুলিশ আধিকারিকদের হেমন্ত জানিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। হেমন্ত এ-ও বলেছেন, ফিরে গিয়ে পুলিশের চাকরির পরীক্ষায় বসতে চান তিনি। উত্তর বন্দর থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ভাল ছাত্র, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের দেখে ওঁর এখন পুলিশ হওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। বলেছেন, আপনারা আমায় বাঁচিয়েছেন। আমিও এমন কাজ করতে চাই।’’

হাওড়া সেতুর রেলিং থেকে এ ভাবেই উদ্ধার করা হয়েছিল হেমন্তকে। —নিজস্ব চিত্র

গত ৫ জানুয়ারি হাওড়া সেতুর রেলিং ধরে ঝুলতে থাকা হেমন্তকে নিয়েই হিমশিম খেয়েছিল পুলিশ। এর জেরে সেতুর এক দিকের রাস্তা এবং ফুটপাত বন্ধ হয়ে যায়। চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে যাওয়া সাধারণ মানুষ। অনেকে আবার সময়ে ট্রেনই ধরতে পারেননি বলে অভিযোগ। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা বোঝানোর পরে পরে হেমন্ত সামান্য আচ্ছন্ন হয়ে পড়লে তাঁর হাত-পা বেঁধে তুলে আনেন উত্তর বন্দর থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যেরা। এর পরে আদালতের নির্দেশে তাঁকে ভর্তি করানো হয় পাভলভ হাসপাতালে। পাভলভ হাসপাতালের সুপার গণেশ প্রসাদ মঙ্গলবার জানান, ১৫ দিনের চিকিৎসায় হেমন্ত একেবারে সুস্থ।

তাঁকে তুলে আনার জন্য পুলিশকর্মীদের চেষ্টা করতে দেখে তাঁর মনে হয়েছে, অন্তত কেউ তাঁকে ভালবাসে। তাঁকে বাঁচাতে চায়। এই বোধটা চিকিৎসায় কাজে লেগেছে। তবে শেষে একটাই সমস্যা ছিল হেমন্তের। তাঁর ধারণা ছিল, হাওড়া সেতু দিয়ে হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ধরতে গেলে তাঁকে কেউ মারবে। এই জন্যই তাঁকে বিমানে অসমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পুলিশকর্মীরা জানাচ্ছেন, ছেলেকে নিয়ে কলকাতা ছাড়ার আগে বারবার কেঁদেছেন হেমন্তের মা মিনুদেবী। তিনি নিজে অসমের একটি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মী। হেমন্তের বাবা প্রয়াত হয়েছেন। তাঁদের নিজেদের ব্যবসাও রয়েছে। তবে মিনুদেবী চেয়েছিলেন, হেমন্ত ইঞ্জিনিয়ার হোক। তাঁর দাবি, সেই স্বপ্নপূরণের মধ্যেই নেশাগ্রস্ত হয়ে কুসঙ্গে জড়িয়ে পড়েন হেমন্ত। চাকরিও চলে যায় কয়েক দিনের মধ্যেই। কিছু না জানিয়েই এক দিন বাড়ি ছাড়েন হেমন্ত। কলকাতা পুলিশই ফোনে হেমন্তর মাকে ছেলের খোঁজ দেয়।

ছেলেকে ফিরে পেয়ে মিনুদেবী এখন বলছেন, ‘‘ও ইঞ্জিনিয়ার হোক, পুলিশ হোক— যা চায়, তাই হোক। অন্তত ভাল মানুষ হয়ে বাঁচুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Attempted Suicide Howrah Bridge
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE