Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের বিয়ে দেখা হল না প্রৌঢ়ের

সমস্ত পরিকল্পনাই শেষ হয়ে গেল তীব্র গতিতে ছুটে আসা একটি গাড়ির ধাক্কায়। রবিবার সকালে বাইপাসের মিলনমেলা প্রাঙ্গনের কাছে অদিতি আগরওয়াল নামে এক তরুণীর গাড়ির ধাক্কায় মারা গেলেন তিনি। অভিযোগ, ওই তরুণী মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। মত্ত অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই তিনি হরিমোহনকে ধাক্কা মারেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় প্রৌঢ়ের।

এনআরএসের মর্গের সামনে মৃত হরিমোহন রামের (ডান দিকে) পরিজনেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

এনআরএসের মর্গের সামনে মৃত হরিমোহন রামের (ডান দিকে) পরিজনেরা। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫৮
Share: Save:

বড় ছেলের বিয়ে আর দেখা হল না হরিমোহন রামের! আগামী মার্চের গোড়ায় বিয়ে রাজু রামের। তাই এখন থেকেই একটু একটু করে বিয়ের জিনিসপত্র কিনছিলেন বছর পঞ্চাশের হরিমোহন। রবিবার সকালে কারখানায় যাওয়ার আগে সেই সব জিনিস গুছিয়ে ব্যাগে ভরেছিলেন। ভেবেছিলেন, বিহারে তাঁদের গ্রামে কেউ গেলে তাঁর হাত দিয়ে জিনিসগুলো পাঠিয়ে দেবেন।

কিন্তু সমস্ত পরিকল্পনাই শেষ হয়ে গেল তীব্র গতিতে ছুটে আসা একটি গাড়ির ধাক্কায়। রবিবার সকালে বাইপাসের মিলনমেলা প্রাঙ্গনের কাছে অদিতি আগরওয়াল নামে এক তরুণীর গাড়ির ধাক্কায় মারা গেলেন তিনি। অভিযোগ, ওই তরুণী মদ্যপান করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। মত্ত অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই তিনি হরিমোহনকে ধাক্কা মারেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় প্রৌঢ়ের।

আদতে বিহারের বৈশালি জেলার সারথা গ্রামের বাসিন্দা হরিমোহন কর্মসূত্রে কলকাতার পাগলাডাঙা রোডে টালির চালের একটি ঘরে একাই থাকতেন। প্রতিবেশী নিমতা গিরি বলেন, ‘‘রবিবার সকালে প্রতিদিনের মতো টিউবওয়েল থেকে খাওয়ার জল তোলেন হরিমোহন। তার পরে তৈরি হয়ে কারখানায় বেরিয়ে যান।’’ আর এক প্রতিবেশী উত্তম সিংহ বলেন, ‘‘রবিবারও কেন কারখানা যাচ্ছেন জিজ্ঞাসা করায় হরিমোহন জানান, ওভারটাইম করবেন বলে যাচ্ছেন।’’ প্রতিবেশীরা জানান, মাস কয়েক বাদেই বড় ছেলের বিয়ে। তার জন্য অনেক কেনাকাটা করছিলেন। পড়শিরা জানান, তাঁদের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল হরিমোহনের। যে তরুণী মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাঁর কঠিন শাস্তি চাইছেন তাঁরা।

শুধু প্রতিবেশীরাই নন, অভিযুক্তের কঠিন শাস্তির দাবি তুলেছেন হরিমোহনের ছোট ছেলে মিঠুন রাম থেকে শুরু করে যে কারখানায় তিনি কাজ করতেন, সেখানকার সহকর্মীরাও। বাবার দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কয়েক জন আত্মীয়কে নিয়ে বিহার থেকে কলকাতায় ছুটে এসেছেন মিঠুন। সোমবার বিকেলে তাঁরা ও হরিমোহনের সহকর্মীরা ভিড় করেছিলেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে। ময়না-তদন্ত শেষ হলে সেখান থেকেই হরিমোহনের দেহ বিহারে নিয়ে যাবেন তাঁরা।

মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে মিঠুন বললেন, ‘‘রবিবার দুপুরে বাবার দুর্ঘটনার খবর পাই। কয়েক জন আত্মীয়কে নিয়ে পড়িমরি করে ট্রেন ধরে কলকাতায় ছুটে আসি। সামনে দাদার বিয়ে। তার আগে বাবা এ ভাবে চলে গেল! মানতে পারছি না।’’ হরিমোহনের সহকর্মী লালবাবু রাম বলেন, ‘‘আমাদের কারখানায় হরিমোহনের মতো ভাল মানুষ খুব কম আছেন। কর্মসূত্রে পরিবারের থেকে দূরে থাকতেন। কিন্তু মন পড়ে থাকত বিহারে, নিজের গ্রামে। অভিযুক্ত ওই মহিলার কঠিন শাস্তি চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Death Elderly Man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE