ভস্মীভূত: আগুন নেভাতে ব্যস্ত দমকলকর্মীরা। বৃহস্পতিবার, রাজারহাটের লাঙলপোতায়। নিজস্ব চিত্র
তিনতলা বাড়িকে ঘর সাজানোর সামগ্রীর কারখানার চেহারা দেওয়া হয়েছে। রাজারহাটের লাঙলপোতায় সেই বাড়ির সামনে আবার টিনের ছাউনি দিয়ে ঘেরা গুদাম ঘর। বাড়ির পাশাপাশি গুদামে মজুত ছিল প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ। বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই কোনও ভাবে আগুন লাগে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেয়ে যায় দমকলের ১৪টি ইঞ্জিন। আতঙ্ক ছড়ায় গোটা এলাকায়। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সুদৃশ্য ফুলের তোড়া, বেল শুকিয়ে তার উপরে নানা রকম নকশার কাজ-সহ ঘর সাজানোর একাধিক সামগ্রী ওই কারখানায় তৈরি করতেন কারিগরেরা। রাজারহাটের গ্রামাঞ্চল থেকে তা রফতানি করতেন কারখানার মালিক, বাঙুরের বাসিন্দা বিনয় ধারার। ওই বাড়ির দোতলায় কর্মরত এক শ্রমিক মঙ্গল মিদ্যা জানান, কারখানায় ২০ জন কাজ করলেও ঘটনার সময়ে তাঁরা ছ’জন ছিলেন। সকাল ৭টা নাগাদ হঠাৎই এক শ্রমিকের চোখে পড়ে, গোটা ঘর ধোঁয়ায় ভরে গিয়েছে। কোথা থেকে ধোঁয়া ঢুকল দেখতে গিয়ে তিনি দেখেন, বাড়ির সামনের গুদাম দাউদাউ করে জ্বলছে। মুহূর্তের মধ্যে বাড়িটির একতলা ও দোতলায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রিঙ্কু ভুঁইয়া নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘কোনও রকমে নীচে নেমে আসি।’’
গুদাম থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারাই তৎপর হয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু রং, পাট, বেত-সহ দাহ্য পদার্থ স্তূপাকৃতি হয়ে থাকায় আগুনের লেলিহান শিখার গ্রাসে চলে আসে বাড়ির মধ্যে থাকা কারখানা। সাড়ে ৮টার কিছু পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আরও একটি ইঞ্জিন পৌঁছতে সকাল সাড়ে ন’টা হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেও বহু ক্ষণ পর্যন্ত আগুন আয়ত্তে না আসায় পাঠানো হয় আরও ১২টি ইঞ্জিন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দমকল দেরিতে পৌঁছেছে। তাঁদের বক্তব্য, ঘটনাস্থল সংলগ্ন একটি স্কুল ও বসতি এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। ঝুঁকি না নিয়ে নার্সারি ওই স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়। আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, দুপুর নাগাদ তা নিশ্চিত করতে সক্ষম হন দমকলকর্মীরা। এর পরে পুরোদমে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে আসেন দমকলের ডিজি জগমোহন। স্থানীয় সূত্রের খবর, দেরিতে পৌঁছনোর জন্য রাজারহাট মোড় থেকে লাঙলপোতা পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশাকে কাঠগড়ায় তোলেন দমকলকর্মীরা।
পরে দমকলের ডিজি বলেন, ‘‘কারখানার নিজস্ব অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। দমকলের ছাড়পত্র ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারখানার মালিকের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।’’ গুদামের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক অশোক নন্দীকে আটক করেছে রাজারহাট থানার পুলিশ।
রাস্তার বেহাল দশা প্রসঙ্গে পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘নগরায়ণের কথা মাথায় রেখে ভিআইপি রোডের মতো রাজারহাটের ওই রাস্তাও ২১ মিটার চওড়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে দু’দিকের সার্ভিস রোড তৈরির কাজ চলছে। বৃষ্টি কমলে পুরোদমে নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আশা করছি, পুজোর আগে বাসিন্দাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy