Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পাম্প-বিভ্রাট, দেখভালে ফাঁকি আর মালিকানা-কাজিয়ার ফাঁকে আগুন?

গত বছর এলাকার অন্য একটি বহুতল বাজারের আগুন নেভানোর কাজে লেগেছিল বাগড়ি মার্কেটের পাম্পের জল। কিন্তু বাগড়ি মার্কেটে যখন আগুন লাগল, সেই পাম্পের জল ব্যবহারই করা গেল না! আগুনে খাক হয়ে গেল বা়ড়িটি।

তৎপর: চলছে আগুন নেভানোর কাজ। —নিজস্ব চিত্র

তৎপর: চলছে আগুন নেভানোর কাজ। —নিজস্ব চিত্র

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৩
Share: Save:

অগ্নিদেব ঢুকলেন কোন পথে? নিজেই ঢুকলেন? নাকি তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ঢোকানো হল?

গত বছর এলাকার অন্য একটি বহুতল বাজারের আগুন নেভানোর কাজে লেগেছিল বাগড়ি মার্কেটের পাম্পের জল। কিন্তু বাগড়ি মার্কেটে যখন আগুন লাগল, সেই পাম্পের জল ব্যবহারই করা গেল না! আগুনে খাক হয়ে গেল বা়ড়িটি।

কেন জল ব্যবহার করা গেল না?

বাড়ির মালিক পক্ষের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছেন বাগড়ির ব্যবসায়ীরা। বাজারের কেয়ারটেকার অজয় তিওয়ারি এবং রামেশ্বর তিওয়ারিও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের জন্য মালিক পক্ষকেই দুষছেন। অজয় ও রামেশ্বর জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে তাঁরা একতলায় নেমে দেখেন, জলের পাম্পের সামনেই আগুন জ্বলছে। তাঁরা বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেন। জেনারেটরের সাহায্যে অন্য একটি পাম্প চালিয়ে জল দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু পরেই জেনারেটরের তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় লড়াই চালাতে পারেননি।

দোষারোপ-অভিযোগের মধ্যেই উঠে আসছে একটি রন্ধ্রের কথা। সেই রন্ধ্রই অগ্নিদেবের প্রবেশপথ কি না, জাগছে সেই প্রশ্ন। প্রশ্নটিকে জোরদার করছে শনিবারের একটি ঘটনা। বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, মার্কেটের মালিকানা ভাগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ল়ড়াই চলছে। শনিবার শীর্ষ আদালতের ‘ভ্যালুয়ার’ এসেছিলেন। তার পরেই গভীর রাতে এই অগ্নিকাণ্ড। পুরোটাই কি কাকতালীয়? পরস্পরের মধ্যে কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠছে। পুলিশ শুধু জানিয়েছে, তদন্ত শুরু হয়েছে।

বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রের খবর, পঞ্চাশের দশকে তৈরি বাগড়ি এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের শেয়ার বাইরের কাউকে বিক্রি করা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত
নিয়েছিলেন সুকান্তচাঁদ বাগড়ি। তাঁর মৃত্যুর পরে এত বড় বাজারের শেয়ার ভাগ হয় শরিকদের মধ্যে। তাঁদেরই এক জন মোহন বাগড়ি।মোহনের পুত্রবধূ রাধাদেবী। বাগড়ি মার্কেটের শেয়ার-সংখ্যা এখন ১৪০০। তার মধ্যে রাধাদেবীর হাতে রয়েছে ৩৭০টি শেয়ার এবং ছেলে বরুণরাজের হাতে আছে ১৭০টি। এই মার্কেটের আর এক বড় শরিক কৃষ্ণ কোঠারি ওরফে কাল্লু। এই মালিকানা ভাগ নিয়েই মামলা চলছে সর্বোচ্চ আদালতে।

আরও পড়ুন: আগুন নেভাতে সেনা ডাকবে কি না, ভেবেই পেল না মন্ত্রিগোষ্ঠী!

বাগড়ি মার্কেট ভাড়াটে সমিতির সম্পাদক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘এই এস্টেটের সব থেকে প্রভাবশালী ডিরেক্টর রাধা বাগড়ি। উনি সব রকমের রক্ষণাবেক্ষণ বন্ধ করে দিয়েছেন। আদালতের নির্দেশও মানেন না উনি। ওঁর জন্যই এত ব়ড় ক্ষতি হয়ে গেল!’’ কেয়ারটেকার অজয় বলেন, ‘‘কোনও রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।’’ আর অনেক দোকানদারের অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ তাঁদের কাছ থেকে টাকা নিয়েও কাজ হয়নি।

মার্কেটের কেয়ারটেকারেরা জানান, ২০১৪-’১৫ সালে বাজারে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে বেশির ভাগ অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রই অকেজো হয়ে গিয়েছিল। ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, বিদ্যুতের বিল নিয়েও মালিক পক্ষ গোলমাল করত। বিলের উপরে অতিরিক্ত টাকা নিত। সেই তরজাও আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, মার্কেটে তার-সহ বিদ্যুৎ ব্যবস্থাতেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ছিল।

কার্যকালে পাম্পের অকেজো হয়ে পড়া, রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টিকে অবহেলা করা, সর্বোপরি মালিকানা ভাগাভাগি নিয়ে কাজিয়া— আগুন কি এই ত্র্যহস্পর্শের ফল? উত্তর মিলছে না। কেননা রবিবার রাত পর্যন্ত আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে লালবাজার বা দমকল সরকারি ভাবে কোনও বিবৃতিই দেয়নি।

বাজারের অন্যতম মালকিন রাধাদেবীর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁর ৮১ বালিগঞ্জ প্লেসের বাড়িতে পৌঁছলে বাদল গিরি নামে এক ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন। তিনি নিজেকে ওই বাড়ির কেয়ারটেকার বলে দাবি করে বলেন, ‘‘মালকিন বা়ড়ি নেই। সেই সকালেই বেরিয়ে গিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE