Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাহায্য-বার্তায় ছেয়ে গিয়েছে ফেসবুক, উঠছে প্রশ্নও

কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার সহনাগরিকদের এমন মানসিকতার প্রশংসা করে অনেকেই বলেছেন, ‘‘পুলিশের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের এই উদ্যোগ সত্যিই আশা জাগায়।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দীক্ষা ভুঁইয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৪৪
Share: Save:

এলাকার উল্লেখ করে কোনও পোস্টে লেখা, ‘দিনে বা রাতে কোনও মেয়ে বিপদে পড়লে আমাদের ফোন করুন’। সঙ্গে দেওয়া বেশ কয়েকটি ফোন নম্বর। রাতবিরেতে বিপদ হলে বা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে মেয়েদের বাড়ি পৌঁছে দিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি হয়ে গিয়েছে আস্ত গ্রুপও। নিজের ফোন নম্বর দিয়ে কেউ কেউ সেখানে লিখছেন, ‘রাত করে বাড়ি ফিরি। ওই এলাকায় কোনও মেয়ে বিপদে পড়লে নির্দ্বিধায় ফোন করতে পারেন। বাইক নিয়ে পৌঁছে যাব।’

গত সপ্তাহে হায়দরাবাদের অদূরে বছর ছাব্বিশের তরুণীকে গণধর্ষণ ও পুড়িয়ে মারার ঘটনার পরে সোশ্যাল মিডিয়া ছেয়ে গিয়েছে এমনই সব সাহায্য-বার্তায়। কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকার সহনাগরিকদের এমন মানসিকতার প্রশংসা করে অনেকেই বলেছেন, ‘‘পুলিশের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মের এই উদ্যোগ সত্যিই আশা জাগায়।’’ তবে নেটিজেনদের অনেকে আবার পাল্টা প্রশ্ন করছেন, শহরের পরিস্থিতি কি তা হলে এতটাই খারাপ যে পুলিশ-প্রশাসনের উপরে আর ভরসা রাখা যাচ্ছে না? না হলে এমন পোস্ট কেন দিতে হবে? কেনই বা বাড়ির মেয়ে, বান্ধবী, এমনকি অপরিচিত মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য সন্ধ্যার পরে মোটরবাইক কিংবা সাইকেল নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে তাঁদের! এই ধরনের পোস্টের উপরে ভরসা করলে তা আবার অন্য বিপদ ডেকে আনবে কি না, সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন কেউ কেউ।

গত শনিবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন, কোনও রকম জরুরি প্রয়োজনে কিংবা কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে তাঁরা যেন সঙ্গে সঙ্গে ১০০ নম্বরে ডায়াল করেন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘এই ধরনের পোস্ট দেখে অচেনা কাউকে বিশ্বাস না করাই ভাল। কোনও রকম বিপদে পড়লে ১০০ নম্বরে ডায়াল করুন কিংবা বাড়ির লোককে ফোন করে নিজের অবস্থান জানান।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের পোস্ট কারা দিচ্ছেন, তা জানতে ইতিমধ্যেই গোয়েন্দা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন পোস্ট দেওয়া এক যুবক এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশকে ফোন করার পরে অনেক সময়ে দেখা যায়, পুলিশ আসার আগেই বিপদ ঘটে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দেখে আমার মতো কয়েক জন একসঙ্গে জোট বেঁধে ঠিক করেছি, আমাদের এলাকায় কেউ বিপদে পড়লে এগিয়ে গিয়ে সেই মহিলাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেব।’’ আর একটি পোস্টে এক যুবক লিখেছেন, ‘জানি না কী ভাবে ধর্ষণ আটকানো যায়। তবে রাতে কোনও দিদি, বোন, বান্ধবী বা কেউ বাড়ি ফেরার সময়ে ভয় পেলে আমি সাইকেল নিয়ে তাঁর সঙ্গে যেতে পারি।’

তবে এই ধরনের পোস্ট নিয়ে যে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠছে, তা তাঁরা জানেন। এক যুবকের কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তাই আমরা ঠিক করেছি স্থানীয় ক্লাব এবং থানায় নিজেদের পরিচয় জানিয়ে এই কাজ করব।’’ একাধিক ক্লাবও নিজেদের একাধিক ফোন নম্বর জানিয়ে এমন পোস্ট দিচ্ছে ফেসবুকে।

পরিচয় জানানোর বিষয়ে জোর দিয়েছে রাজ্য মহিলা কমিশনও। কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই নম্বরগুলি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসাই ভাল। যত দিন তা না হয়, ততদিন সরাসরি পুলিশের কাছে সাহায্য চাওয়াই উচিত। তবে সহনাগরিকদের এই নম্বর দেখে পুলিশ যদি এগিয়ে আসে এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তা হলে মেয়েদের নিরাপত্তা রক্ষায় সাধারণ মানুষকেও শামিল করা সম্ভব হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাও খুবই জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Rape Crime Telangana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE