Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পড়তে চেয়ে মরতে হলো মেয়েটাকে

শ্রাবন্তীর পরিজনদের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের মানসিক অত্যাচারের জেরেই এমনটা ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই হোসিয়ারি ব্যবসায়ী বিশ্বদেব মিত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা শ্রাবন্তীর।

শ্রাবন্তী মিত্র ও বিশ্বদেব মিত্র

শ্রাবন্তী মিত্র ও বিশ্বদেব মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৪
Share: Save:

বাংলায় এমএ করেই থেমে থাকতে চাননি। আরও পড়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ছোটবৌয়ের অত পড়াশোনা পছন্দ নয় শ্বশুরবাড়ির। মেয়েকে বোঝাতে ডাক পড়েছিল বৃদ্ধ মা-বাবার। অসুস্থ বাবা যেতে পারেননি, ছুটে গিয়েছিলেন মা ও দিদি। শ্বশুরবাড়ির একতলার ঘরে বসে শুরুও হয়ে গিয়েছিল নালিশ পর্ব। কথাবার্তা চলার মাঝেই ওপরতলা থেকে উদ্ধার হল বধূর ঝুলন্ত দেহ।

বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে দমদমের সুভাষনগরে। মৃতার নাম শ্রাবন্তী মিত্র (২৫)। মৃতার স্বামী বিশ্বদেবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ রাতে দায়ের হয়েছে খুনের অভিযোগ।

পুলিশ জানিয়েছে, নীচে যখন সকলে কথা বলছিলেন তখন হঠাৎ বাড়ির ছোট ছেলের চিৎকার ভেসে আসে দোতলা থেকে। সকলে ছুটে গিয়ে দেখেন, দোতলায় ছোটবৌয়ের শোয়ার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। পরে সেই ঘরের দরজা ভেঙে দেখা যায়, সিলিং ফ্যান থেকে গলায় ওড়না জড়ানো অবস্থায় ঝুলছে শ্রাবন্তীর দেহ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

আরও পড়ুন: ‘ম্যানমেড’ কেন, ব্যাখ্যা সেচমন্ত্রীর

শ্রাবন্তীর পরিজনদের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ির লোকেদের মানসিক অত্যাচারের জেরেই এমনটা ঘটেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসেই হোসিয়ারি ব্যবসায়ী বিশ্বদেব মিত্রের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা শ্রাবন্তীর। তাঁর পড়াশোনার ইচ্ছে পছন্দ হচ্ছিল না শ্বশুরবাড়ির। বিশেষ করে তাঁর বড় জায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন পরিজনেরা। শ্রাবন্তীর মা সুপ্রীতি বসুর অভিযোগ, তাঁর মেয়ে আরও পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন, তাতে বাধা দেন তাঁর শ্বশুরবাড়ির অনেকেই। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়েছিলেন শ্রাবন্তী। বৃহস্পতিবার তাঁর এমএ-র মার্কশিট নিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগের দিনই শ্বশুরবাড়িতে ডাক পড়ে তাঁর বাবা-মায়ের। সুপ্রীতিদেবীর অভিযোগ, ‘‘কখনও নিজের ঘরে বসে ও গল্পের বই পড়লেও খুব বকাবকি করতেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। বলা হতো, নীচে নেমে কাজ করতে হবে। কাজ করার জন্য এ বাড়িতে এসেছে ও।’’

অভিযোগ মানতে নারাজ শ্রাবন্তীর শ্বশুর প্রদীপ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘ওর পড়াশোনা নিয়ে সমস্যা ছিল না।’’ শ্রাবন্তীর বড় জা শম্পাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তাঁর মা মায়া সাহা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এ বাড়িতে ১২ বছর কাটিয়ে দিল। সমস্যা হয়নি।’’ এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘মেয়েটা শান্ত ছিল। বেশি সময়ে বাড়িতেই থাকত। কী ভাবে যে এমন হল!’’

প্রতিবেশীরা বলছেন, তাঁরা কখনও মেয়েটি অসুস্থ হতে দেখেননি। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছেন, এমনও শোনেননি। কিন্তু দমদমের সুভাষনগরে মৃতা শ্রাবন্তী মিত্রের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা দাবি করেছেন, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তাঁদের ছোটবউ পড়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসকের নির্দেশে তাঁর গর্ভপাত করাতে হয়। শ্রাবন্তীর বড় জা শম্পার মা মায়া সাহাও বলেন, ‘‘মেয়েটা মাঝেমধ্যে অজ্ঞান হয়ে যেত শুনেছি। সিঁড়ি থেকে পড়েও গিয়েছে কয়েক বার।’’

শ্বশুরবাড়ির এই দাবি মানতে নারাজ শ্রাবন্তীর পরিজনেরা। শ্রাবন্তীর মামা প্রবীর পালের দাবি, শ্বশুড়বাড়ির সদস্যেরা জোর করে তাঁর গর্ভপাত করান। এর পরে মানসিক ভাবে আরও ভেঙে পড়েন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন শ্রাবন্তীর শ্বশুরবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি ডায়েরি উদ্ধার হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, বাড়ির পরিস্থিতির জন্য তাঁর মন ভাল নেই। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছিলেন শ্রাবন্তী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE