রাজপথের দখল নিয়েছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। —নিজস্ব চিত্র
অন্যবার দুপুর একটা থেকে শুরু হয় ধর্মতলার ২১ জুলাইয়ের সভা। এ বার সভা শুরুর সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছিল। তাই ভোর গড়িয়ে সকাল হওয়ার আগেই ধর্মতলামুখী জনতার ঢল নেমে গিয়েছিল শহরের রাস্তায়।
এক দিকে থেকে থেকে কখনও ঝমঝমিয়ে, আবার কখনও হাল্কা বৃষ্টি। তার মধ্যে এ দিন শহরের যান চলাচল একদম যাতে স্তব্ধ না হয়, সেটাই চ্যালেঞ্জ ছিল কলকাতা পুলিশের। সেই পরীক্ষায় অনেকটাই এ দিন সফল পুলিশ। যদিও সভা চলাকালীন যথারীতি স্তব্ধ থাকল গোটা মধ্য কলকাতা।
অন্য বছর দক্ষিণ থেকে বা দ্বিতীয় হুগলি সেতু দিয়ে আসা সমর্থকদের বাস ও গাড়ির জন্য হেস্টিংস এবং ময়দান সংলগ্ন জায়গায় পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের জায়গা থাকলেও, উত্তর কলকাতায় মিছিলের গাড়ি রাখার সমস্যা থাকে। অধিকাংশ বাস-গাড়িকেই পার্কিংয়ের জায়গা দিতে হত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে। তাই অল্প সময়ের মধ্যেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে গাড়ির গতি শ্লথ হতে হতে থেমে যেত। মিছিল শেষ হওয়ার পরও সেই ভিড় সামলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে অনেকটাই সময় লাগত। ফলে উত্তর-দক্ষিণের মত আটকে যেত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের সংযোগকারী পূর্ব-পশ্চিমের রাস্তাগুলিও।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের পাল্টা ব্রিগেড ডাকল বিজেপি, বক্তা মোদী
সেই সমস্যা কমাতে এ বার স্ট্র্যান্ড ব্যাঙ্ক রোডে, মহাত্মা গাঁধী রোডে এবং আমহার্স্ট স্ট্রিটে নতুন পার্কিংয়ের জায়গা করা হয়। তার ফলে এ বার ভোর থেকেই শ্যামবাজার দিয়ে শহরে যে গাড়ি ঢুকেছে, সবগুলিকেই নির্দিষ্ট পার্কিং লটে পাঠিয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ যান চলাচলের উপযোগী রাখা হয়। ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, “তার ফলে অরবিন্দ সরণি, বিবেকানন্দ রোডের মত রাস্তাগুলি অন্য বারের থেকে বেশি সচল ছিল। বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট এবং গণেশ অ্যাভিনিউ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরও, উত্তর-দক্ষিণ যোগাযোগ পুরো বিচ্ছিন্ন হয়নি এ দিন।” তবে শিয়ালদহের পর থেকে এ জে সি বোস রোডে সব দিক থেকে আসা দক্ষিণমুখী গাড়ির চাপ বাড়ায় যান চলাচল অনেকটাই শ্লথ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: প্যান্ডেল বাঁধতে পারে না, দেশ গড়বে? বিজেপিকে খোঁচা মমতার
দূরের জেলা থেকে তৃণমূল সমর্থক ভর্তি বাস শুক্রবার বিকেল থেকেই আসা শুরু করে কলকাতায়। সকাল থেকে বাস আসা শুরু করেছিল নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে। সকাল আটটার পর থেকেই তাই শহরে ঢোকার মুখে বি টি রোডে যান চলাচল কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। দমদম চিড়িয়ামোড় থেকে টালা ব্রিজ পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। অন্য দিকে ডায়মন্ড হারবার রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডেও যান চলাচলের গতি অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল।
বেলা দশটা বাজার আগেই শিয়ালদহ-হাওড়া থেকে মিছিল ধর্মতলামুখী হতে শুরু করে। শ্যামবাজার থেকেও একের পর এক মিছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে এগোতে থাকে। প্রথম দিকে মিছিলের ফাঁকে ফাঁকে গণেশ অ্যাভিনিউ, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিট দিয়ে দক্ষিণমুখী এবং ডাফরিন রোড দিয়ে উত্তরমুখী যানবাহনের গতি পরিবর্তন করে শহর সচল রাখার চেষ্টা করে পুলিশ।
কিন্তু ১১টা বেজে যাওয়ার পরই মিছিলের সংখ্যা বেড়ে যায়। শিয়ালদহ থেকে হাওড়া থেকে মূল মিছিলগুলি রাস্তায় নামতেই ধীরে ধীরে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে যান চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। একই ভাবে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হয় এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণিতেও। হাজরা থেকে দক্ষিণ কলকাতার মূল মিছিল ডোরিনা মোড়ে পৌঁছে যায় ১১টার কিছু পরেই। বন্ধ করে দিতে হয় ডোরিনা মোড়।
রাস্তা বন্ধ থাকবে এই আশঙ্কায় নিত্যযাত্রীদের একটা বড় অংশই মেট্রোতে সওয়ার হন এ দিন। তার সঙ্গে ছিল মিছিলের ভিড়ও। তাই সকাল থেকেই মেট্রোতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না।
সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এ দিন তুলনামূলক ফাঁকা থাকায় সভা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যেই সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হয়। ডোরিনা থেকে জওহরলাল নেহরু রোডও খুলে দিয়ে উত্তর এবং দক্ষিণে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। কিন্তু চাপ বাড়ে রেড রোডে। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দ্বিতীয় হুগলি সেতুগামী গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায়, রেড রোডে দীর্ঘ ক্ষণ যানজট তৈরি হয়। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার কথায়— এত কিছু সত্বেও, আরও পরিকল্পনা মাফিক সভার গাড়ির পার্কিংয়ের কারণে, ২১ জুলাইয়ে ট্রাফিক অন্য বছরের থেকে বেশি সচল ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy