স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বিরূপ। তাই রাজ্য সরকারের ‘পারমিট’ থাকলেও ‘গতিধারা’ প্রকল্পে অনুমোদিত রুটে গাড়ি চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ ২৫ জন ম্যাক্সি-ক্যাব চালকের।
মানুষের যাতায়াতের সুবিধার কথা ভেবে দমদম ক্যান্টনমেন্ট হেলথ থেকে রাজচন্দ্রপুর পর্যন্ত নতুন একটি রুট অনুমোদন করে পরিবহণ দফতর। প্রমোদনগর, নোয়াপাড়া মেট্রো, টবিন রোড, ডানলপ, আলমবাজার, বালিখাল হয়ে ১৪ কিলোমিটারের যাত্রাপথে গাড়ি নামানোর জন্য গত মার্চে দফতরের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পান আবেদনকারীরা। কিন্তু এর পরে প্রায় সাত মাস কেটে গেলেও অনুমোদিত রুটে গাড়ি চালাতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ ম্যাক্সি ক্যাবচালকদের।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ জুন। ওই দিন ক্যান্টনমেন্ট হেলথ থেকে নতুন রুটের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল। ক্যাবচালকদের দাবি, উদ্বোধনের মুহূর্তে হেলথের মাঠ-প্রমোদনগর রুটের অটোচালকেরা তাঁদের উপরে চড়াও হন। অটোচালকদের বক্তব্য ছিল, ওই রুটে ম্যাক্সি-ক্যাব চালু হলে তাঁদের বাজার মন্দা হবে। এই ঘটনার পরে অগস্টে ফের রুটে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করেন ক্যাবচালকেরা। কিন্তু এ বার নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে প্রমোদননগর-নোয়াপাড়া রুটের অটোচালকদের রোষে পড়েন ক্যাবচালকেরা।
ক্যাবচালকেরা জানান, আড়াই লক্ষ টাকা ডাউন পেমেন্ট করে পাঁচ বছরের জন্য সহজ কিস্তিতে তাঁরা গাড়িগুলি নিয়েছেন। প্রতি মাসে ইএমআই বাবদ ১০ হাজার ১০০ টাকা করে ব্যাঙ্ককে গুনতে হচ্ছে। এই অবস্থায় বাড়িতে গাড়ি বসিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই রাজচন্দ্রপুর থেকে টবিন রোড পর্যন্ত আপাতত গাড়ি চালাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু কতদিন তা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে সন্দিহান ক্যাবচালকেরা। কারণ, সম্প্রতি নোয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে যাত্রী তোলার জন্য রবি দেব নামে এক ক্যাবচালককে অটোচালকেরা মারধর করেছেন বলে অভিযোগ।
সরকার অনুমোদিত রুটে গাড়ি চালাতে গিয়ে মারধর খেতে হবে কেন? প্রশ্নের প্রেক্ষিতে পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘যত দূর জানি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদতে অটোচালকদের এই বাড়বাড়ন্ত। মানুষের সুবিধার কথা ভেবে প্রথমে প্রস্তাবিত রুট সমীক্ষা করে রিজিওন্যাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি অনুমোদন দিয়েছে। গতিধারা প্রকল্পে ম্যাক্সি ক্যাবচালকেরা এক লক্ষ টাকা অনুদান পেয়েছেন। তার পরে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এর পরেও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের এই পরিণতি দুর্ভাগ্যজনক!’’
গন্ডগোলের ক্ষেত্রস্থলের সঙ্গে যুক্ত শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা প্রকাশ্যে অবশ্য সহযোগিতার কথাই বলছেন। ক্যান্টনমেন্ট হেলথে অটো ইউনিয়ন যিনি নিয়ন্ত্রণ করেন সেই তৃণমূল কাউন্সিলর ধনঞ্জয় মজুমদার বলেন, ‘‘আমাদের এখানে নয়, বরাহনগর এলাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা।’’ প্রমোদনগরের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা দক্ষিণ দমদম পুরসভার সিআইসি প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওঁদের রুট চালিয়েছি। আমার এলাকায় কোনও অসুবিধা হয়নি।’’ বরাহনগর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অঞ্জন পালের কথায়, ‘‘সরকার অনুমোদিত রুটে যে বাধা দেওয়া যায় না, তা নোয়াপাড়া-টবিন রোড রুটের অটোচালকদের বলেছি। এই রুটের ফলে কারও রুজিতে যে টান পড়বে না তা অটোচালকদের বোঝাতে হবে। শীঘ্রই সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে আমি আশাবাদী।’’
উত্তর ২৪ পরগনার আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘পারমিট থেকে অনুদান সবই নিয়ম মেনে হয়েছে। কিন্তু কয়েক জনের বাধায় গাড়ি চালানো যাচ্ছে না বলে শুনেছি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy