কখনও গভীর রাতে, কখনও শান্ত দুপুরে। নীরবতা ভেঙে খানখান করা প্রবল আওয়াজে মাঝেমধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার পূর্ণদাস রোডের বাসিন্দাদের বুক কেঁপে উঠছে। অভিযোগ, ফুটপাতের একাংশ দখল করে ওই রাস্তাতেই রমরমিয়ে চলছে গাড়ি সারাই। দিন হোক বা রাত, সেই আওয়াজেই ঘুম ছুটেছে তাঁদের। অবস্থা এমনই, এক ধারের ফুটপাতের ‘হাল ফেরাতে’ পুলিশ এবং স্থানীয় পুর প্রতিনিধির দ্বারস্থ হয়েছেন অন্য ফুটপাত সংলগ্ন আবাসনের বাসিন্দারা। অভিযোগ, পুর প্রতিনিধি কিছুই করতে পারেননি। গড়িয়াহাট থানার পুলিশ তদারকিতে গেলেও সমাধান হয়নি।
কলকাতা পুরসভার ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডে পড়ে পূর্ণদাস রোড। ৩০ ফুট চওড়া রাস্তার দু’দিকের চিত্র ভিন্ন। এক দিকে উঁচু ফ্ল্যাট-বাড়ি। অন্য দিকে, নেতাজি কলোনি। এক দিকে গত কয়েক বছরে একের পর এক রেস্তরাঁ তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে গজিয়ে উঠেছে একাধিক গাড়ি মেরামতির গ্যারাজ। অভিযোগ, ফুটপাত দখল করে তৈরি হয়েছে বহু বেআইনি নির্মাণ।
পূর্ণদাস রোডের একটি আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এই এলাকার একটা ঐতিহ্য ছিল। এখন বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠেছে। মাঝরাতে, দুপুরে এখানে মোটরবাইক সারাই হয়। আমি হার্টের রোগী। সাইলেন্সার খুলে বাইক সারানোর সময়ে সেই আওয়াজ সহ্য করা যায় না।’’ এলাকারই সত্তরোর্ধ্ব এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এমনিতে এই রাস্তার এক দিকে গাড়ি পার্কিং অবৈধ। অথচ দখল হয়ে যাওয়া ফুটপাতের সামনেই একের পর এক গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতে হয়। তার উপরে একাধিক রেস্তরাঁ থাকায় গাড়ির ভিড়ে পথ চলাই ঝক্কির। স্থানীয় এক রেস্তরাঁ মালিকের দাবি, ‘‘আমরা ব্যবসা করতে আসি, সমস্যা হয় না। তবে উল্টো ফুটপাতের বেআইনি নির্মাণের একাধিক জায়গায় জল জমে থাকে। সেখানে ডেঙ্গির মশা জন্মানোর ভয় রয়েছে।’’
এক দুপুরে দেখা গেল, গোলপার্ক থেকে ট্র্যায়াঙ্গুলার পার্ক পর্যন্ত পূর্ণদাস রোডের এক ধারে ফুটপাত জু়ড়ে একের পর এক বেআইনি নির্মাণ তৈরি হয়ে রয়েছে। ফুটপাত দখল হওয়ায় সেই রাস্তা দিয়ে হাঁটাই মুশকিল। একের পর এক গ্যারাজ গজিয়ে ওঠায় এখন ওই রাস্তা ‘গ্যারাজ গলি’ নামেই বেশি পরিচিত। এ নিয়েই পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশ।
তবু অবস্থা বদলাচ্ছে না কেন? পুলিশ জানাচ্ছে, ওই এলাকায় বেশ কয়েক বার যাওয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি পুরসভার দেখা উচিত বলে মন্তব্য করলেন দক্ষিণ কলকাতার এক পুলিশ আধিকারিক। স্থানীয় বিজেপি কাউন্সিলর তিস্তা বিশ্বাস দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ মেনে নেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই এলাকার বাসিন্দারা বহু দিন ধরেই গ্যারাজ এবং ফুটপাত দখল নিয়ে অভিযোগ করছেন। আমি চাইলেও কিছু করতে পারছি না।’’ এলাকাটি পুরসভার আট নম্বর বরোর অন্তর্গত। বরো চেয়ারম্যান বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাউন্সিলর অন্য সব কাজ করতে পারছেন, আর এ কাজে সমস্যা হচ্ছে? আমি নিজেই খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy