Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

‘মরতে চাই!’ ওষুধভর্তি শিশি দেখিয়ে বন্ধুদের বলেছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীটি

মেয়েটি তখন তাঁদের জানায়, মা ও সৎ বাবা তাকে মারধর করেন। নিয়মিত খেতেও দেওয়া হয় না। বেশির ভাগ দিন না-খেয়েই তাকে স্কুলে যেতে হয়। তাই সে আর বাড়ি ফিরতে চায় না। দিদিমার কাছে যাওয়ার জন্য ব্যাগে করে জামাকাপড় নিয়েই সে দিন স্কুলে গিয়েছিল সে। 

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০১:২২
Share: Save:

বাড়িতে রাখা নানা রকমের ওষুধ একসঙ্গে অনেকগুলো খেয়ে ফেললেই আত্মহত্যা করা যায় বলে ভেবেছিল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীটি। তাই ওষুধভর্তি শিশি ব্যাগে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল সে। বন্ধুদের তা দেখিয়ে বলেছিল, ওই ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে চায়। কোনওভাবে শিক্ষিকার কানে যায় সেই কথা। এর পরে সোজা প্রধান শিক্ষিকার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই শিক্ষিকাদের চাপে ভেঙে পড়ে ওই বালিকা জানায়, কী ভাবে দিনের পর দিন তার উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছে তার মা এবং সৎ বাবা। মঙ্গলবার সকালে সুভাষগ্রামের কোদালিয়া প্রাথমিক স্কুলে এই ঘটনার পরে ওই দিন রাতেই গ্রেফতার করা হয় মেয়েটির মা ও সৎ বাবাকে। বুধবার তাঁদের বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন মঞ্জুর করেন।

ওই দিন সকালে স্কুলে প্রার্থনার পরে প্রধান শিক্ষিকা দোলনচাঁপা রায়চৌধুরীর ঘরে ওই ছাত্রীকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক শিক্ষিকা। সেখানেই মেয়েটিকে চেপে ধরেন শিক্ষিকারা। মেয়েটি তখন তাঁদের জানায়, মা ও সৎ বাবা তাকে মারধর করেন। নিয়মিত খেতেও দেওয়া হয় না। বেশির ভাগ দিন না-খেয়েই তাকে স্কুলে যেতে হয়। তাই সে আর বাড়ি ফিরতে চায় না। দিদিমার কাছে যাওয়ার জন্য ব্যাগে করে জামাকাপড় নিয়েই সে দিন স্কুলে গিয়েছিল সে।

এর পরেই ওই ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলের দু’জন শিক্ষক সোনারপুরে তার দিদিমার কাছে যান। এ দিকে, প্রধান শিক্ষিকা যোগাযোগ করেন
স্থানীয় কাউন্সিলর তথা রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাসের সঙ্গে। শেষে তাঁর পরামর্শেই সোনারপুর থানায় খবর দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: ভালবাসার অভাবেই কি এই অবক্ষয়

ওই ছাত্রী এবং দিদিমার সঙ্গে কথা বলে তার পরে অভিযুক্তদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। চাইল্ড লাইনে খবর দেওয়া হলে ওই ছাত্রীকে হোমে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। থানা সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যায় তাকে নরেন্দ্রপুরের একটি হোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানিয়েছেন, মেয়েটি এর আগেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল বলে তাঁদের জানিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কয়েক দিন আগে মেয়েটি গলায় ফাঁস লাগানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। লরির তলায় ঝাঁপও দিতে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ছোটবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছিল ওই বালিকা। তখন থেকেই ধানখেত এলাকার সুভাষপার্কে মা ও দিদিমার সঙ্গে থাকত ওই বালিকা। তার গৃহশিক্ষকের সঙ্গে সে সময়ে মেয়েটির মায়ের আলাপ ও ঘনিষ্ঠতা হয়। বিয়ের পরেও একই বাড়িতে থাকতেন তাঁরা। মাস ছয়েক আগে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তাঁরা আলাদা থাকতে শুরু করেন।

মেয়েটির দিদিমা জানিয়েছেন, স্বামী-স্ত্রীয়ের মধ্যে ঝগড়ার জেরে তাঁর মেয়ে একবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন। তার পরেই তাঁদের অন্যত্র চলে যেতে বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘নাতনি আমাকে ছেড়ে যেতে চায়নি, ওর মা জোর করে ওকে নিয়ে গিয়েছিল। আমি মাঝেমধ্যে স্কুলে গিয়ে ওকে খাবার দিয়ে আসি।’’ কলকাতায় রাতে আয়ার কাজ করেন তিনি। তাই নাতনিকে নিজের কাছে রাখতেও পারেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: অভিযুক্তরা রাজ্য ছেড়ে পালিয়েছে, সন্দেহ পুলিশের

জেরায় ওই দম্পতি জানিয়েছে, সংসার চালাতে শহরে আয়ার কাজ করেন ওই বালিকার মা। সেই কারণে বাড়িতে অনেক রকমের ওষুধ থাকত। তিনি সারা দিনই প্রায় বাড়িতে থাকেন না। মেয়ের দেখাশোনাও সে ভাবে করতে পারেন না। অনেক সময়ে তাঁদের বাসি ভাত খেয়েও থাকতে হয়। তবে সন্তানের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন ওই দম্পতি। বুধবার আদালতে যাওয়ার পথে ওই বালিকার মা বলেন, ‘‘আমি সারাদিন বাড়ি থাকতাম না। ওর বাবা ওকে দেখাশোনা করত। আমরা ওকে কোনও দিন মারধর করিনি।’’ আর তার সৎ বাবার দাবি, ‘‘স্কুলে যেতে চাইত না। সেই কারণে বকুনি দিয়েছি বেশ কয়েক বার। কিন্তু কোনও দিন গায়ে হাত তুলিনি।’’

দিদিমা অবশ্য বলছেন, ‘‘স্কুলের দিদিমণিরাই নাতনিকে অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছেন। যা আমি করতে পারিনি।’’

শহরের প্রতি মুহূর্তের হেডলাইন, কলকাতার যে কোনও ব্রেকিং নিউজ পেতে ক্লিক করুন আনন্দবাজার পত্রিকার কলকাতা বিভাগ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Medicine Molestation Child School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE