Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলেজ স্কোয়ারের তালা খুলবে বই বিক্রির ভাগ্য

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দাবিই হোক বা রাজ্য সরকারের চোলাই-বিরোধী অভিযান, বহু আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে কলেজ স্কোয়ার। প্রত্যেক বারই মিছিলে আর স্লোগানে বিঘ্নিত হয়েছে বইয়ের ব্যবসা।

পথের-দাবি: গেটে তালা পড়ার পরের দিন শনিবারই ফের মিছিল কলেজ স্কোয়ারের সামনে

পথের-দাবি: গেটে তালা পড়ার পরের দিন শনিবারই ফের মিছিল কলেজ স্কোয়ারের সামনে

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

কলেজ স্কোয়ারে মিটিং-মিছিল বন্ধ করার যে সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি সরব হলেও বেজায় খুশি বইপাড়ার কয়েকশো বই-বিক্রেতা। তাঁদের দাবি, গণতান্ত্রিক অধিকারের দোহাই দিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে প্রায় প্রতি দিনই মিটিং-মিছিল করত একাধিক সংগঠন। তার জেরে বই বিক্রির ব্যবসা বাধা পাচ্ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তে এ বার স্বস্তির নিঃশ্বাস প্রায় তিনশোর বেশি বই-বিক্রেতার।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দাবিই হোক বা রাজ্য সরকারের চোলাই-বিরোধী অভিযান, বহু আন্দোলনের সাক্ষী থেকেছে কলেজ স্কোয়ার। প্রত্যেক বারই মিছিলে আর স্লোগানে বিঘ্নিত হয়েছে বইয়ের ব্যবসা। গত বৃহস্পতিবার তারকেশ্বরের
প্রশাসনিক বেঠকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র ইলিয়াস আখতারের দাবিই এক ধাক্কায় বই বিক্রির ব্যবসাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে বলে দাবি করলেন বিক্রেতারা।

ওই বৈঠকে ইলিয়াস মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, কলেজ স্কোয়ারে নিত্যদিন মিটিং-মিছিলের জেরে তাঁদের পড়াশোনায় অসুবিধা হয়। সমস্যা সমাধানের আর্জি জানাতেই তাঁর আবেদন লুফে নিয়ে মঞ্চে থাকা কলকাতা পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ওই চত্বরে মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ করা উচিত। আইন করে ওই চত্বরে মিটিং-মিছিল বন্ধ করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তড়িঘড়ি লালবাজার থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়, আগামী ৫ জুন থেকে কলেজ স্কোয়ারে সমস্ত রকম মিটিং-মিছিল নিষিদ্ধ। এর পরেই সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কিন্তু বই-বিক্রেতারা কী বলছেন?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেটের উল্টো দিকে বিদ্যাসাগর উদ্যান। যে কোনও মিটিংয়ে এখানেই মঞ্চ তৈরি করা হয়। জমায়েত থেকে মাইকে ঘোষণা হয় এই মঞ্চ থেকেই। ঠিক এর পাশেই চল্লিশ বছর ধরে বই বিক্রি করছেন সিদ্ধার্থ দাঁ। তিনি জানান, দিন যত যাচ্ছে, সংগঠনও বাড়ছে। আর তার সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মিটিং-মিছিলের সংখ্যা। যার জন্য ক্রেতারা দোকানে আসতে পারেন না। এলেও তাঁদের কথা ভাল ভাবে শোনা যায় না।

কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া।

তিনি জানান, মিটিং-মিছিল-জমায়েতের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যেত। ফুটপাথে উঠে আসতেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের ঠেলায় ক্রেতারাই দোকানের সামনে ঘেঁষতে পারতেন না। নাগাড়ে মাইকের শব্দে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলাই যেত না। সিদ্ধার্থবাবু বলেন, ‘‘মিটিং-মিছিলের খবর শুনলেই ভয়ে ভয়ে থাকতাম। ব্যবসার খুব ক্ষতি হত। এই সিদ্ধান্তের ফলে আমাদের ব্যবসা বেঁচে গেল।’’

আর এক বই-বিক্রেতা সমীর দেবনাথও বেজায় খুশি। তিনি বলেন, ‘‘সরকারের এই সিদ্ধান্তের পরে মনে হচ্ছে, কোনও বড় যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলাম।’’ ওই চত্বরে বই-বিক্রেতাদের তিনটি সংগঠন রয়েছে। ‘কলেজ স্কোয়ার হকার্স অ্যাসোসিয়েশন’, ‘স্যার আশুতোষ বুকসেলার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘কলেজ স্ট্রিট ব্যবসায়ী সমিতি’। তারা একযোগে সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। ‘বিদ্যাসাগর উদ্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সিংহ বলেন, ‘‘যে চত্বরে এতগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তিনশোর বেশি বইয়ের দোকান এবং পাশে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে কোনও মিটিং-মিছিল হওয়াই উচিত নয়। যে কারণে মিটিং-মিছিলের বিরুদ্ধে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। তার মধ্যেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আমরা স্বস্তি পেলাম।’’

তবে শনিবার ফের কলেজ স্কোয়ারে বিক্ষোভ দেখায় ডিএসও। তাদের দাবি, সরকারের ওই নির্দেশিকা প্রত্যাহার করতে হবে। রাস্তা আটকে সরকারের নির্দেশিকার প্রতিলিপি পোড়ানো হয়। তবে বই-বিক্রেতেরা জানান, সরকার যদি তাঁদের কোনও সহযোগিতা চায়, তা করতে
তাঁরা প্রস্তুত।

নিজস্ব ও ফাইল চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE