Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
কেন্দ্র-রাজ্য চুক্তি

বস্ত্র রফতানির অন্যতম কেন্দ্র হবে মেটিয়াবুরুজ

বিশেষজ্ঞেরা বলেন, মেটিয়াবুরুজের দর্জি ও ওস্তাগরদের কাঁচি কথা বলে। তাঁদের দশ আঙুলের কাজ নাকি বিশ্বমানের। কোনও রকম আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ছাড়াই সেখানে ঘরে ঘরে বংশ পরম্পরায় ‘ওস্তাগর’ জন্ম নিচ্ছেন, অথচ কোনও স্বীকৃতি নেই তাঁদের!

কাজ চলছে একটি কারখানায়। রণজিৎ নন্দী

কাজ চলছে একটি কারখানায়। রণজিৎ নন্দী

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৯
Share: Save:

বিশেষজ্ঞেরা বলেন, মেটিয়াবুরুজের দর্জি ও ওস্তাগরদের কাঁচি কথা বলে। তাঁদের দশ আঙুলের কাজ নাকি বিশ্বমানের। কোনও রকম আধুনিক প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি ছাড়াই সেখানে ঘরে ঘরে বংশ পরম্পরায় ‘ওস্তাগর’ জন্ম নিচ্ছেন, অথচ কোনও স্বীকৃতি নেই তাঁদের! কিন্তু এ বার কপাল খুলতে চলেছে মেটিয়াবুরুজের। বস্ত্র রফতানির উৎকর্ষ কেন্দ্র হতে চলেছে কলকাতার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই এলাকা।

মেটিয়াবুরুজের পরিকাঠামো এমন ভাবে গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে আগামী দিনে তামিলনাড়ুর তিরুপুরের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। বাস্তবে তা সফল করতে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের অধীন ‘অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল’। রাজ্যের বস্ত্রশিল্প দফতরের সঙ্গে কাউন্সিল একটি চুক্তিও করেছে। আর প্রকল্পটি রূপায়ণ করবে রাজ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতর। কাউন্সিলের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল বুচাসিয়া জানান, ভারত থেকে এখন ১৭০০ কোটি ডলার মূল্যের বস্ত্র রফতানি হয়। কেন্দ্র আরও ২০০০ কোটি ডলারের রফতানি বাড়াতে চাইছে। এই পরিকল্পনায় মেটিয়াবুরুজ বড় অংশীদার হতে পারে।

সরকারের বক্তব্য, মেটিয়াবুরুজের জামাকাপড়ের কদর দেশ জুড়ে। বিশেষত ছোটদের জামাকাপড় তৈরিতে যথেষ্ট নাম করেছে এই এলাকা। এখানকার প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। স্রেফ বাপ-ঠাকুর্দার কাছে শিখে আসা ‘কাটিং’ দিয়েই বস্ত্রবাজারে ছড়িয়ে পড়ছে রহমান-নজরুল-আলমগির-সুলেমানদের হাতের কাজ। যদিও পরিকাঠামো এবং উন্নত ও প্রযুক্তি-নির্ভর প্রশিক্ষণের অভাবে মার খাচ্ছে ব্যবসা। সরকারের বক্তব্য, এই বিপুল সম্পদকে কাজে লাগাতে চায় তারা।

আপাতত ঠিক হয়েছে, প্রথম ধাপে সেখানে একটি ‘নলেজ সেন্টার’ তৈরি হবে। তার পরে হবে একটি পরিষেবা কেন্দ্র। যেখানে পরীক্ষাগার থেকে গ্রন্থাগার, আধুনিক নকশা বানানোর বিশেষ বিভাগ-সহ বিভিন্ন ধরনের পরিকাঠামো থাকবে। বুচাসিয়া বলেন, ‘‘রাজ্যের সঙ্গে যৌথ সমীক্ষা করেছি। দেখেছি, মেটিয়াবুরুজে তৈরি জামাকাপড় অনায়াসেই আন্তর্জাতিক বাজারে সুনাম কিনতে পারে। তাই বস্ত্র রফতানি শিল্পের উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে এই জায়গাকে।’’ তিনি জানান, অচিরেই মেটিয়াবুরুজের তৈরি করা ছোটদের জামাকাপড় নিয়ে একটি ‘ফ্যাশন শো’ ও প্রদর্শনী হবে। যেখানে দেশের বড় ও মাঝারি বস্ত্র রফতানির সংস্থাগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

এই পরিকল্পনা নিয়ে মেটিয়াবুরুজের বস্ত্র প্রস্তুতকারক সংগঠনের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কয়েক দফা বৈঠক করেছে এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল। সংগঠনকে ‘নলেজ সেন্টার’ তৈরির জায়গা দেখতে বলা হয়েছে। আগামী মাসেই ক্ষুদ্র শিল্প দফতর ও কাউন্সিলের একটি প্রতিনিধিদল মেটিয়াবুরুজ পরিদর্শনে যাবে। তখন নলেজ সেন্টারের জায়গা দেখা হবে। বস্ত্র প্রস্তুতকারক সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লার গর্বিত মন্তব্য, ‘‘যে মানের কাজ এখানে হয়, তা বিপণনের ব্যবস্থা করতে পারলে অনায়াসেই বিদেশের বাজার ধরা সম্ভব।’’

পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি থেকে এখন বছরে প্রায় ২০০০ কোটি টাকার জামাকাপড় রফতানি হয়। যার সিংহভাগই পশ্চিমবঙ্গ থেকে। অনেকের ধারণা, পরিকল্পনা মতো কাজ এগোলে পশ্চিমবঙ্গ একাই ১০ হাজার কোটি টাকার সামগ্রী রফতানি করতে পারবে। ঠিক যে ভাবে বাংলাদেশ বস্ত্র শিল্পের জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। একাই ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে দু’লক্ষ কোটি টাকার বস্ত্র রফতানি করে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Metiabruz Cloth Export Industry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE