Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাইক জ্বালিয়ে, মাথা ফাটিয়ে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব

পুলিশ ও স্থানীয়দের একাংশ জানায়, জুবেরের জামাইবাবু শেখ ফকরুদ্দিন ওরফে ভোলার প্রোমোটারির ব্যবসা রয়েছে। তাঁর সঙ্গেই সানোয়ারের মূল গোলমাল।

তছনছ: আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় একাধিক মোটরবাইকে। নিজস্ব চিত্র

তছনছ: আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় একাধিক মোটরবাইকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০২:০৯
Share: Save:

খাস মহানগরের ঘিঞ্জি বস্তি এলাকায় প্রোমোটারির রমরমা নিয়ে বহু দিন ধরে নানা অভিযোগ রয়েছে। এ বার সেই প্রোমোটারিকে কেন্দ্র করেই গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত কড়েয়ার পাম অ্যাভিনিউ। যার জেরে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি এক যুবক। লালবাজার সূত্রের খবর, এই প্রথম নয়, কড়েয়ার ওই এলাকায় আগেও প্রোমোটারি নিয়ে গোলমাল বেধেছে। এখানে প্রোমোটারি এবং অবৈধ নির্মাণের রমরমা বন্ধ না হলে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকানো যাবে না বলে মনে করছে পুলিশের একাংশ। বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে মূল অভিযুক্ত শেখ সানোয়ার হুসেন।

পুলিশ জানায়, আহত যুবকের নাম শেখ শাহনওয়াজ ওরফে জুবের। এলাকার প্রোমোটার শেখ সানোয়ার ও তার দলবল বুধবার রাত সা়ড়ে বারোটা নাগাদ তাঁকে লাঠি, রড দিয়ে পেটায় বলে অভিযোগ। মাথার পিছনে গুরুতর আঘাত পাওয়ায় জুবেরকে প্রথমে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং পরে বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার অস্ত্রোপচার হলেও তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সানোয়ারের বিরুদ্ধে এর আগেও পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বছর কুড়ির জুবের অটোচালক। প্রোমোটিং ব্যবসার সঙ্গে তাঁর সরাসরি যোগাযোগ নেই। জুবেরের বন্ধুরা বাস ভাড়া করে দিঘায় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। তাই বুধবার রাতে বেরিয়েছিলেন তিনি। তা হলে জুবেরকে মারধর করা হল কেন?

ভাঙচুর করা হয় বাড়িতে ঢুকেও। বুধবার রাতে, পাম অ্যাভিনিউয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের একাংশ জানায়, জুবেরের জামাইবাবু শেখ ফকরুদ্দিন ওরফে ভোলার প্রোমোটারির ব্যবসা রয়েছে। তাঁর সঙ্গেই সানোয়ারের মূল গোলমাল। সেই রাগ মেটাতেই জুবেরের উপরে হামলা হয়েছে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে অভিযুক্তদের ধারালো অস্ত্রের কোপে আহত হন জুবেরের এক আত্মীয়ও। জুবেরের পরিবারের দাবি, এলাকায় ভোলা কয়েকটি আবাসন তৈরি করছিলেন। সানোয়ার সেখানে তোলা চেয়ে হুমকি দিত। এর আগেও কয়েক বার সানোয়ার ও তার দলবল হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ।

পুলিশ জানায়, হামলার পরে জুবেরের ঘনিষ্ঠেরা বদলা নিতে গিয়ে সানোয়ার ও তার সঙ্গীদের চারটি মোটরবাইকে আগুন লাগিয়ে দেয়। সানোয়ারের ডেরা হিসেবে চিহ্নিত একটি ক্লাবে ভাঙচুর করা হয়। তার সঙ্গী আকবর ওরফে বোনার বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। এ দিন সানোয়ারের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। সানোয়ারের বৌদি পরিচয় দিয়ে এক মহিলা জানালেন, সানোয়ার বুধবার রাত থেকেই বাড়িছাড়া। এ বিষয়ে কথাও বলতে চাননি তিনি। সানোয়ারের সঙ্গী আকবরের স্ত্রী গৌরী বেগমের দাবি, তাঁর স্বামী বুধবার রাত দশটায় তপসিয়ায় কাজে গিয়েছিলেন। মাঝরাতে গোলমাল শুনে তিনি পাশেই মেয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। এ দিন ভোরে বাড়ি ফিরলে জুবেরের ঘনিষ্ঠেরা তাঁর বা়ড়ি ভাঙচুর করে।

পুলিশ জানায়, সানোয়ার আগে কড়েয়ার এক দুষ্কৃতী-ব্যবসায়ীর ছত্রচ্ছায়ায় ছিল। বছর দুয়েক ধরে ব্রড স্ট্রিটের দুই দুষ্কৃতীর সঙ্গে ভিড়েছে সে। মধ্য কলকাতার এক দুষ্কৃতীর সঙ্গেও ইদানীং ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে সানোয়ারের। বুধবার রাতে মধ্য কলকাতার ওই দুষ্কৃতীকে নিয়ে এলাকায় আড্ডা দিচ্ছিল সে। পুলিশের দাবি, বুধবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওই দুষ্কৃতীর আসার খবর পেয়ে কড়েয়া থানার এক সাব-ইন্সপেক্টর বাহিনী নিয়ে এলাকায় গিয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই চম্পট দিয়েছিল সানোয়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE