নিশানা: ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন অমল বসু (বাঁ দিকে)। লন্ডভন্ড ঘর (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
ফের শহরে দুষ্কৃতীদের নিশানায় একাকী বৃদ্ধ। ফাঁকা বাড়িতে তাঁকে বেঁধে, খুনের হুমকি দিয়ে লুটপাট চালাল দুই দুষ্কৃতী।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার গভীর রাত থেকে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে যাদবপুর থানার অশ্বিনীনগরে। পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধের বাড়ির একতলার ছাদের দরজার ছিটকিনি ভেঙে ঢোকে দুই যুবক। বৃদ্ধের ঘুম ভেঙে যেতেই তাঁকে ভয় দেখিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এর পরে আলমারি-সহ একাধিক জায়গায় লুটপাট চালিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না এবং টাকা নিয়ে পালায়। টাকার সঙ্গে দু’টি মোবাইলও নিয়ে যাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। কিন্তু মোবাইল ছাড়া তিনি কী ভাবে গ্যাস বুক করবেন, বৃদ্ধ সেই কথা বললে তাঁকে মোবাইলের দু’টি সিম ফেরত দেয় দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, অশ্বিনীনগরের ওই বাড়িতে একাই থাকেন প্রাক্তন রেলকর্মী, ৮৮ বছরের অমল বসু। জুন মাসে তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। বৃদ্ধের ছেলে কাছেই অন্য একটি আবাসনে থাকেন। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অমলবাবুর ঘর লন্ডভন্ড। বাড়িতে ভিড় করেছেন পড়শিরা। খবর পেয়ে চলে এসেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর এবং বরো চেয়ারম্যান তপন দাশগুপ্ত। তখনও অমলবাবুর চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
তদন্তকারীদের অনুমান, ওই বৃদ্ধ যে একা থাকেন তা জানত দুষ্কৃতীরা। তারা বাড়িতে ঢুকে সরাসরি অমলবাবুর কাছে জানতে চায়, লক্ষাধিক টাকা কোথায় রয়েছে। পুলিশ জেনেছে, টাকার বিষয়টি নিয়ে সোমবার সকালে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন বৃদ্ধ। তাঁর আত্মীয়দের দাবি, সেই কথা কোনও ভাবে জানতে পেরেই হানা দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
মঙ্গলবার দায়ের করা অভিযোগে অমলবাবু জানিয়েছেন, সোমবার রাত দুটো নাগাদ হঠাৎই তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি দেখেন, ঘরে অচেনা দু’জন ঘোরাঘুরি করছে। বৃদ্ধকে দেখে তারা বলে, ‘কোথায় টাকা রেখেছিস, দিয়ে দে।’ অমলবাবুর কথায়, ‘‘ওই দু’জন আমার গলায় একটি স্ক্রু-ড্রাইভার এবং কোমরে ধারালো কিছু ধরে বলে, চিৎকার করলে খুন করব। টাকাটা বার করে দে। আমি তখন বলি, আমাকে মারিস না। তোদের যা লাগবে, আলমারি খুলে নিয়ে নে।’’ এ দিন সকালেও ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কাঁপছিলেন বৃদ্ধ। পুলিশ জানিয়েছে, অমলবাবুর আওয়াজ যাতে বাইরে না যায় সে জন্য ঘরের সব জানলা বন্ধ করে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃদ্ধের থেকে দু’টি আলমারির চাবি নিয়ে নেয় দুই দুষ্কৃতী। কিন্তু নিজেরা আলমারি খুলতে না পারায় তাঁকেই বলে খুলে দিতে। আলমারি খুলতেই সেটির ভিতরে থাকা পাঞ্জাবি দিয়ে অমলবাবুর হাত এবং চাদর দিয়ে তাঁর পা বেঁধে ফেলে তারা। বৃদ্ধের ছেলে সিদ্ধার্থ বসু বলেন, ‘‘আমাদের এক আত্মীয় রাতে বাড়ি থাকবেন না বলে তাঁর কিছু সোনার গয়না বাবার কাছে রেখে গিয়েছিলেন। দুষ্কৃতীরা টাকার সঙ্গে তা-ও নিয়ে গিয়েছে। যাওয়ার আগে ফ্রিজে থাকা চকলেটও খেয়েছে।’’ এ দিন ভোর চারটে নাগাদ অমলবাবু কোনও রকমে হাতের বাঁধন খুলে বেরিয়ে চিৎকার করলে ছুটে আসেন পড়শিরা। তখনই ঘটনাটি জানাজানি হয়। প্রতিবেশী উত্তম দাস এবং সঞ্জীব দাস জানান, তাঁদের পাড়ায় আগে কখনও এমন ঘটেনি। তাঁদের সন্দেহ, বাড়ির পাশের পাঁচিল দিয়ে ছাদে উঠে দরজা ভেঙে দুষ্কৃতীরা ঢোকে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধের বয়ান অনুযায়ী দুষ্কৃতীদের বয়স ৩০-এর মধ্যে। কারও মুখ ঢাকা ছিল না। দু’জনেই বাংলায় কথা বলছিল। ওই বাড়িতে সোমবার দুই মিস্ত্রিকে কাজে লাগানো হয়েছিল বলে জেনেছেন তদন্তকারীরা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy