প্রতীক্ষা: চার বছর পরেও ছেলে অভিষেকের (বাঁ দিকে) সন্ধানে হার মানতে নারাজ গীতা ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র
কথা কাটাকাটির পরে মায়ের উপরে রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ছেলে। তার পর থেকে চার বছর ধরে টালিগঞ্জের করুণাময়ীর বাসিন্দা গীতা ভট্টাচার্য শুধু খুঁজেই চলেছেন ছেলে অভিষেককে।
কলকাতা পুলিশ মহলে, যাঁরা নিখোঁজদের খুঁজতে সাহায্য করেন, গীতা এখন তাঁদের কাছে পরিচিত নাম। গত চার বছরে যখনই তিনি ছেলের সম্পর্কে কোথাও সামান্যতম তথ্য পেয়েছেন, চাপ দিয়েছেন পুলিশকে। কখনও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা, কখনও মুর্শিদাবাদ— কলকাতা থেকে পুলিশকে সঙ্গে করে ছুটে গিয়েছেন। কিন্তু, ছেলের খোঁজ পাননি।
পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন, গীতার এই হার না মানা মনোভাব তাঁদের অবাক করেছে। চার বছর ধরে তিনি একার চেষ্টাতেই ছেলের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তেমন কোনও সূত্র হাতে না এলেও হাল ছাড়েননি ষাট বছরের প্রৌঢ়া।
পুলিশ জানায়, গত ৩ মে হঠাৎ একটি অজানা নম্বর থেকে মিসড কল আসে গীতাদেবীর মোবাইলে। সে দিনই ছিল অভিষেকের জন্মদিন! মায়ের মনে হয়, ‘তবে কী জন্মদিনের দিন দূরে কোথাও বসে অভিমানে মিসড কল করল ৩২ বছরের ছেলেই!’ নতুন করে শুরু হয় খোঁজ। ফের তিনি পুলিশের কাছে পৌঁছন ওই নম্বর নিয়ে। যে নম্বর থেকে ফোন এসেছিল সেখানে তিনি পাল্টা ফোন করলে কেউ ধরছিল না। কলকাতা পুলিশ জানিয়ে দেয়, নম্বরটি জনৈক সতীশ দাসের। যাঁর বাড়ি ত্রিপুরার ধর্মনগরের ইছাইতুল গ্রামে।
দেওর অমর দে এবং আরও এক আত্মীয়কে নিয়ে ১৩ জুলাই বিমানে চেপে আগরতলা পৌঁছন গীতা। আগরতলা থেকে ধর্মনগরের ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল। অমরবাবু জানান, সে দিনই কোনও কারণে ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়। স্টেশন থেকে বাসে চেপে রাতে ধর্মনগর পৌঁছন তাঁরা। হোটেলে থেকে পরের দিন সকালে অটোয় চেপে ইছাইতুল গ্রামে পৌঁছন। গ্রামে পৌঁছে জানা যায়, অতি সাধারণ মানুষ সতীশ দোকানে ওষুধ সরবরাহের কাজ করেন। ছবি দেখে অভিষেককে চিনতেও পারেননি। মনে করতে পারেননি কেন তিনি গীতাদেবীর নম্বরে ফোন করেছিলেন।
অমরবাবুর কথায়, ‘‘আমার দাদা রাজ্য সরকারের শ্রম দফতরে চাকরি করতে করতে মারা যান। বৌদি সেই চাকরি পান। গত বছর অক্টোবরে বৌদি অবসর নিয়েছেন। জমানো যত টাকা, অবসরের পরে যত টাকা পেয়েছেন সব জলের মতো খরচ করে ফেলছেন শুধু ছেলেকে ফিরে পেতে।’’ গীতার কথায়, মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনার পরে অভিষেক আর পড়েনি। এক সময়ে মোবাইল সংস্থায় চাকরি করতেন। পরে তা-ও ছেড়ে দেন। ২০১৪ সালের ৮ অগস্ট সকালে মায়ের সঙ্গে ছেলের কথা কাটাকাটি হয়। বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান অভিষেক।
এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘আমরা সব সম্ভাব্য জায়গায় খুঁজে দেখেছি, পাইনি। গীতাদেবী বিজ্ঞাপনে ফোন নম্বর দিয়েছিলেন। সেই নম্বরে মজা করে কেউ কেউ ফোন করেছেন। এমন লোকদের থানায় নিয়ে এসে সতর্কও করে দেওয়া হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy