Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কারমেলের তাণ্ডবে মায়ের দুঃখপ্রকাশ

গত শুক্রবার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে কারমেল প্রাইমারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে।

স্কুলের সামনে কারমেলের ছাত্রীরা। ফাইল চিত্র।

স্কুলের সামনে কারমেলের ছাত্রীরা। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪১
Share: Save:

কারমেল প্রাইমারি স্কুল চত্বরে অভিভাবকদের তাণ্ডবের জন্য দুঃখপ্রকাশ করলেন নিগৃহীতা শিশুটির মা। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘ওই ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। এ রকম যে ঘটবে, বুঝতে পারিনি। সংবাদমাধ্যমকে কিন্তু আমি ডাকিনি।’’ তাঁর দাবি, স্কুলের কোনও রকম সম্মানহানি হোক, তা তিনি চান না। তবে অভিযুক্ত নাচের শিক্ষক সৌমেন রানার কড়া শাস্তির দাবি তুলেছেন তিনি। বললেন, ‘‘আমার মেয়ে যেন সুবিচার পায়।’’

সেই সঙ্গে তিনি এ দিন জানিয়েছেন, স্কুলে পুরুষ শিক্ষক থাকবেন না, এমন দাবি তিনি কখনও তোলেননি। কারণ, ওই স্কুলেই গানের শিক্ষক এক জন পুরুষ। এবং তাঁকে নিয়ে কারও কোনও অভিযোগ নেই। তাই স্কুলে পুরুষ শিক্ষকদের রেখেই নজরদারি বাড়ানো হোক।

গত শুক্রবার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে কারমেল প্রাইমারি স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর যৌন নিগ্রহের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকদের একাংশ। দলে বেঁধে জোর করে স্কুলে ঢোকা, অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা-সহ পুলিশকে মারধরেরও অভিযোগ ওঠে ওই অভিভাবকদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় এক অভিভাবককে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ। উত্তেজিত অভিভাবকদের বলতে শোনা গিয়েছিল, অভিযুক্তকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে। তাঁরা তাঁকে ‘চাবকিয়ে-পিটিয়ে’ মেরে ফেলতে চান।

আইনের সাহায্য নেওয়ার বদলে স্কুল চত্বরে গিয়ে অভিভাবকদের এ হেন আচরণে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। ওই ছাত্রীর পরিবারের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ। শোনা গিয়েছিল, কয়েক জন অভিভাবককে শুক্রবার তাঁদের সঙ্গে স্কুলে যেতে বলেছিলেন নির্যাতিতা ছাত্রীর পরিবারের লোকজন। ডাকা হয়েছিল সংবাদমাধ্যমকেও।

এ দিন ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘আমার মেয়ের সঙ্গে যে খারাপ কাজ হচ্ছে, এটা বৃহস্পতিবারই স্কুলে গিয়ে জানিয়েছিলাম। কিন্তু, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাতে কোনও আমল দেননি। তাই শুক্রবার অভিযোগ করতে যাব বলে কয়েক জন অভিভাবককে জানাই।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে বিক্ষোভ সংগঠিত করার যে অভিযোগ তাঁদের বিরুদ্ধে উঠেছে, তা ঠিক নয়। তিনি বলেন, ‘‘হোয়াট্‌সঅ্যাপে আমি এমন কোনও বার্তা দিইনি। কে দিয়েছে জানি না।’’

ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই ওই শিক্ষক তাঁর মেয়েকে নিগ্রহ করছেন। মেরে ফেলার মতো নানা হুমকি দেওয়ায় মেয়ে প্রথমে বিষয়টি গোপন করে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েকে মেরে মাটি চাপা দিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছিলেন ওই শিক্ষক। ভয়ে মেয়ে কিছু বলতে পারেনি।’’ কিন্তু গত সপ্তাহের বুধবার বাড়িতে স্কুলের পিকনিক নিয়ে কথা বলার সময়েই হঠাৎ মেয়েটি সব বলতে শুরু করে। ওই মহিলা বলেন, ‘‘স্কুলে গিয়ে সব জানালাম। কিন্তু, আমার মুখের কথায় ওঁরা আমল দিলেন না। তখন আর উপায় ছিল না। হতাশ হয়ে ফিরে গিয়ে চেনাজানা কয়েক জন অভিভাবককে বিষয়টি বলেছিলাম। কিন্তু সেই বলার ফল যে এমন হবে, তা বুঝিনি।’’

প্রশ্ন উঠেছে, শুক্রবার তা হলে তিনি উত্তেজিত অভিভাবকদের শান্ত করার চেষ্টা করলেন না কেন? তাঁর উত্তর, ‘‘আমি বাধা দিয়েছিলাম। কিন্তু অভিভাবকেরা ওই ঘটনার কথা শুনে এতটাই রেগে ছিলেন যে, কোনও চেষ্টাই কাজে লাগেনি।’’

এ দিকে, এ বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বারবার ফোন করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE