প্রতীকী ছবি।
গত এক বছরে মাটি ও খড়ের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বৃষ্টির দাপট বেশি থাকায় মাটি ও খড় কিনে আনতে হচ্ছে বাইরে থেকে। প্রতিমার কাঠামো তৈরির বাঁশ, কাঠ থেকে শুরু করে শাড়ি বা অলঙ্কার— প্রায় সব কিছুরই দাম বেড়েছে চড়চড় করে। তার উপরে আবহাওয়ার কারণে প্রতিমা শুকোতেও দেরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে সমস্যায় পড়েছেন রাজ্যের মৃৎশিল্পীরা। তাঁদের অভিযোগ, ঠাকুর গড়ার খরচ অনেকটা বাড়লেও মিলছে না প্রতিমার দাম। ফলে মুনাফা তো দূর, খরচই উঠছে না প্রতিমার কারিগরদের। মৃৎশিল্পীদের অনেকেই তাই চিন্তায়। সরকারি সহায়তা চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছে ‘মৃৎশিল্পী সমিতি’ এবং ‘মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতি’র মতো সংগঠনগুলি।
কুমোরটুলিতে কলকাতার বড় পুজোর ঠাকুর গড়তে ব্যস্ত মিন্টু পাল। তার মধ্যেই তিনি জানালেন, এক নৌকা মাটির দাম ১২ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। খড়, বাঁশ, কাঠ— সব কিছুরই এ বছর চড়া দাম। মিন্টুবাবুর কথায়, ‘‘বাজেট কিন্তু বাড়াচ্ছে না পুজো কমিটিগুলি। এ অবস্থায় লাভ তো দূরের কথা, ঠাকুর গড়ার কাজই মুশকিল হয়ে পড়ছে।’’
বেড়েছে বাঁশ ও কাঠের দামও। এক বর্গফুট কাঠের দাম ৩০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০০ টাকা। এক-একটি বাঁশের দাম ১৫০ থেকে বেড়ে এখন ২২০ টাকা। শিল্পী শঙ্কর পাল বললেন, ‘‘রাস্তার যা হাল, শক্তপোক্ত কাঠামো না করলে ঠাকুর রাস্তাতেই ভেঙে পড়বে। তাই বাঁশ আর কাঠ লাগছে বেশি। অথচ, ঠাকুরের দাম বাড়ছে না।’’
কলকাতা ও শহরতলির পাশাপাশি ভুগছেন জেলার মৃৎশিল্পীরাও। কারণ, দূষণের জেরে বহু জায়গায় স্থানীয় নদীর মাটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিমা গড়লে ধরছে ফাটল। দেগঙ্গার মৃৎশিল্পী দীপক পাল বললেন, ‘‘এখানকার নদীপাড় থেকে এক ট্রলি মাটি এক হাজার টাকায় কিনতাম। সেই মাটিতে কাজ হচ্ছে না। প্রতিমার গড়ন সুন্দর আর মসৃণ করতে প্রয়োজন গঙ্গার মাটির। কুমোরটুলি ঘাট থেকে মাটি কিনে আনতে এক ট্রলির দাম পড়ছে চার হাজার টাকা। কী করে পারা যাবে!’’
গত বছর বন্যায় ধানের জমি জলে ডুবে ছিল। এ বছরও চলছে বর্ষা। তাই খড়ের জোগান কম। প্রতিমার কাঠামোর খড় তাই বর্ধমান থেকে আনতে হচ্ছে। বেড়াচাঁপার প্রতিমা শিল্পী কাশীনাথ মণ্ডল বলেন, ‘‘আগে এক কাহন (১৬০০ আঁটি) খড় মিলত ৮০০ টাকায়। বর্ধমান থেকে সেটাই আনতে লাগছে ২৫০০ টাকা।’’
দেগঙ্গার পালপাড়া থেকে প্রতিমা যায় কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায়। মৃৎশিল্পী সুদিন পাল বলেন, ‘‘কলকাতার পুজোকর্তারা নতুন আদলের প্রতিমা অর্ডার দিয়ে যান। কিন্তু বাড়তি খরচের টাকা মেলে না।’’ এ বিষয়ে উত্তর কলকাতার একটি পুজো কমিটির সম্পাদক রানা দাস বলেন, ‘‘আসলে বিভিন্ন কল-কারখানা বন্ধ। বি়জ্ঞাপন নেই। তেমন চাঁদাও উঠছে না তাই বাজেটও কমানো হচ্ছে।’’
যা শুনে মিন্টু থেকে সুদিনের মতো শিল্পীদের আক্ষেপ, ‘‘আমরা বংশ-পরম্পরায় ঠাকুর গড়ছি। আর্থিক ক্ষতি হলেও তো এই পেশা ছাড়তে পারছি না। তবে আর বোধহয় উপায় নেই!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy