Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কলকাতায় প্রথম ভাসমান বাজার তৈরি হচ্ছে পাটুলিতে

ছিল ডোবাখানা। হয়ে উঠবে যেন এক টুকরো পাটায়া! বাইপাসের ধারে পাটুলির ডোবায় ভাসমান বাজার করছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। শহর সৌন্দর্যায়নের এই কাজে হাত দিয়ে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারছে দফতর। এই কারণেই প্রকল্প ঘিরে বাড়তি উৎসাহ দফতরের মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের।

পানি-পথ: পাটুলির এই ডোবাতেই তৈরি হচ্ছে প্রথম ভাসমান বাজার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

পানি-পথ: পাটুলির এই ডোবাতেই তৈরি হচ্ছে প্রথম ভাসমান বাজার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

জয়তী রাহা
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৭ ১৪:৩০
Share: Save:

ছিল ডোবাখানা। হয়ে উঠবে যেন এক টুকরো পাটায়া! বাইপাসের ধারে পাটুলির ডোবায় ভাসমান বাজার করছে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। শহর সৌন্দর্যায়নের এই কাজে হাত দিয়ে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারছে দফতর। এই কারণেই প্রকল্প ঘিরে বাড়তি উৎসাহ দফতরের মন্ত্রী এবং আধিকারিকদের।

পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে খবর, বছর খানেক আগে পাটুলি এলাকার বাইপাস চার লেন করার কাজ শুরু করেছিল কেএমডিএ। রাস্তার ৩০০ মিটার দীর্ঘ অংশের দু’ ধারে অস্থায়ী পাটুলি বাজারের ২২৮টি দোকান এ কাজে অন্তরায় ছিল।

ভাসমান বাজারে ওই ২২৮ জন ব্যবসায়ীকেই পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দফতর। ফলে পাটুলি সংলগ্ন ই এম বাইপাসে চার লেন করতে আর কোনও বাধা থাকছে না। উপরন্তু শহর পেতে চলেছে প্রথম ভাসমান বাজার।

দেশের অন্য ভাসমান বাজার ডাল লেকের সঙ্গে পাটুলির এই ভাসমান বাজারের যথেষ্ট পার্থক্য আছে বলে দাবি কেএমডিএ-র আধিকারিকদের। তাঁদের দাবি, ডাল লেকের ভাসমান মিনা বাজারে ক্রেতাকে বোটে চেপে পৌঁছোতে হয়। তাইল্যান্ড ও দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মতো এখানেও ক্রেতার ভরসা হবে ভাসমান প্ল্যাটফর্ম বা ওয়াকওয়ে।

কেমন হবে এই বাজার?

ডোবার মাঝ বরাবর মূল ওয়াকওয়ে থেকে দু’দিকে ছ’টি করে মোট বারোটি ওয়াকওয়ে যাবে শাখার মতো। সেগুলির বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে থাকবে নৌকা। কাঁচা আনাজ, ফলমূল, মাছ, মুদির দোকান থাকবে সেখানে। শালবল্লার খুঁটির উপরে তৈরি স্থির ওই ওয়াকওয়ে দিয়ে হেঁটে বিভিন্ন নৌকায় পৌঁছে যাবেন ক্রেতা। দু’মিটার চওড়া ওয়াকওয়েতে রেলিং থাকবে। জলের ওঠানামা ভেবে তৈরি হচ্ছে নৌকার নকশা। থাকবে ক্যাফেটেরিয়া, ঝরনা এবং বসার জায়গা।

কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, এখান থেকে মাটি কেটে তৈরি হয়েছিল বাইপাস। এ ভাবেই জল জমার নিচু জায়গা তৈরি হয়েছিল। স্থানীয় লোকে একে বরো পিট বলেন। লম্বায় ৩০০ মিটার, চওড়ায় ৩৫ মিটার এই এলাকা। আশপাশের দু’-একটি এলাকার নিকাশির জল এসে পড়ে এই ডোবায়। কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা জানান, জল থেকে দুর্গন্ধ বেরোলে ক্রেতারা আর আসবেন না। তাই ডোবায় নিকাশির জল ফেলা বন্ধ করে দেওয়া হবে। জলে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে পরিশোধন করতে বিশেষ মেশিন বসানো হবে। বাজারের বর্জ্য ফেলার জন্যে বাইরে থাকবে দু’টি ভ্যাট।

পুরসভার ১১০ নম্বর ওয়ার্ডেই ডোবার ধারে কোনও দখলদারির সমস্যা ছিল না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ডোবার এক দিকে ই এম বাইপাস। অন্য দিকে, পাটুলির রাস্তা। মুখ্যমন্ত্রীর শহর সৌন্দর্যায়ন এবং রাস্তার সম্প্রসারণে পুনর্বাসন মিলে এটা হবে স্বপ্নের প্রকল্প।’’

পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘বছর কয়েক আগে পাটায়া বেড়াতে গিয়ে এই পরিকল্পনা মাথায় আসে। তার পরে বাইপাস সম্প্রসারণে পুনর্বাসন এবং পাশের ওই ঝিল, প্রকল্পের সার্থক রূপ দিতে দু’টি এক সঙ্গে যেন মিলে গেল। তার পরে পুনর্বাসন পাওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেই শুরু করা হয়েছে কাজ। জলের জীব-বৈচিত্র্য ঠিক রাখতে হাইব্রিড মাগুর মাছ ছাড়া হবে।
৫০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। বলাগড় থেকে তৈরি করে আনা হচ্ছে নৌকা। পুজোর মধ্যেই শহরবাসীকে ভাসমান বাজার উপহার দেওয়ার আশা রাখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE