Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বিপাকে পুরসভা

পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে স্বাস্থ্যভবনের এক আধিকারিক জানান, জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত কামারহাটি পুরসভায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ জন।

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৮ ০৩:১০
Share: Save:

মশা মারতে তথ্য গোপন হচ্ছে। এই প্রবণতার জন্যই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ছে স্বাস্থ্যভবনের আধিকারিকদের।

ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হচ্ছেন একাধিক রোগী। অথচ এলাকার বাড়িগুলোতে ঘুরে এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভাই খুঁজে পাচ্ছে না সমীক্ষকের দল। কোনও নির্দিষ্ট একটি পুরসভা নয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একাধিক পুরসভার সমীক্ষার রিপোর্ট এই প্রবণতা দেখে মাথায় হাত ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্তাদের।

পরিস্থিতি বোঝাতে গিয়ে স্বাস্থ্যভবনের এক আধিকারিক জানান, জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত কামারহাটি পুরসভায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ জন। পানিহাটি পুরসভায় ১২ জন। অথচ সমীক্ষক দলের রিপোর্টে তার প্রতিফলনই নেই! খড়দহ, বরানগর, উত্তর দমদম-সহ একাধিক পুরসভা এই তথ্য গোপনের প্রবণতার শিকার। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, এ জন্য কামারহাটি পুরসভার দু’জন কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। উত্তর দমদম পুরসভার ১৪ এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে সমীক্ষক দল এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা খুঁজে পায়নি। কিন্তু স্বাস্থ্যভবনের প্রতিনিধিরা যেতেই এডিসের লার্ভা ধরা পড়েছে। একই ঘটনা খড়দহ পুরসভার ১ এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। সম্প্রতি সল্টলেকের শুভান্নে যে বৈঠক হয় সেখানেও এ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

এ বছর রীতিমতো ক্যালেন্ডার করে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে নেমেছে স্বাস্থ্যভবন। কিন্তু তথ্য গোপন করার এই প্রবণতায় সেই কর্মসূচি ধাক্কা খাচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যভবনের আধিকারিকেরা। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘রিপোর্ট বলছে, এলাকায় ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী মশার লার্ভা নেই। অথচ স্বাস্থ্য ভবনের প্রতিনিধিরা পরিদর্শনে গিয়ে সেই লার্ভা পাচ্ছেন!’’ আরেক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সমীক্ষক দলের রিপোর্ট বলছে, এলাকায় কারও জ্বর হয়নি। তাহলে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কী ভাবে?’’ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এডিস ইজিপ্টাইয়ের উৎসস্থল খুঁজে বার করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে সমীক্ষক দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেখানেই গলদ! ফলে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে প্রচুর টাকা খরচ করেও ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ধাক্কা খাচ্ছে।

তথ্যে গরমিলের বিষয়টি স্বীকার করে বিভিন্ন পুরসভার আধিকারিকদের বক্তব্য, স্বাস্থ্যকর্মীরা অবসর নেওয়ায় কাউন্সিলরদের সুপারিশে নিযুক্ত মহিলাদের উপরে ভরসা করতে হচ্ছে পুরসভাগুলোকে। তাঁদের উপরে নিয়ন্ত্রণ নেই পুর আধিকারিকদের। ব্যারাকপুর মহকুমার একটি পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘নিজের ওয়ার্ডের কোথাও লার্ভা মিললে তা রিপোর্টে না দেখাতে সমীক্ষক দলের উপরে চাপ তৈরি করছেন কোনও কোনও কাউন্সিলর। প্রমাণ করা যাবে না, তাই সব জেনেও চুপ থাকতে হচ্ছে।’’

উত্তর দমদমের চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) মহুয়া শীল বলেন, ‘‘বাড়ি বাড়ি সমীক্ষক দলের কাজে সত্যিই ঘাটতি রয়েছে। যা রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে তা অবাস্তব। ওঁদের বোঝাচ্ছি। কাউন্সিলরদেরও এ নিয়ে বলেছি।’’ তবে উল্টো মতও রয়েছে। পানিহাটি পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সমস্যা নেই তা বলছি না। কিন্তু পানিহাটি এবং কামারহাটি পুরসভা জঞ্জাল তুলে ফেলবে কোথায়? আমাদের তো ডাম্পিং গ্রাউন্ড নিয়েই সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া লার্ভার হদিস মিললেই যে ডেঙ্গি হবে তা তো নয়। দুটো বিষয়কে এক করা উচিত নয়।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা অবশ্য এই যুক্তিকে ‘অজুহাত’ হিসাবেই দেখছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue prevention Municipalities
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE