খানাখন্দ: খোঁড়া হয়েছে ডেকার্স লেন। আটকে গিয়েছে বাড়ি থেকে বেরোনোর রাস্তা।শনিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী ও দেশকল্যাণ চৌধুরী
আরও এক বার সেই সিদ্ধান্ত। এবং আরও এক বার সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্ত মহলে সংশয়।
শহরবাসীকে খোঁড়া রাস্তার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পুরসভার জারি করা এক নির্দেশিকা ঘিরে খাস পুরসভার অন্দরেই তৈরি হয়েছে সংশয়। শহর জুড়েই এখন ‘ধরণী দ্বিধা হও’-এর অবস্থা। অলিগলিতে তো বটেই, কখনও-কখনও মূল রাস্তাতেও। কিন্তু হলে কী হবে! দু’ভাগ হওয়া ধরণী সারাতে যা কিছু উদ্যোগ, সবই রয়ে গিয়েছে খাতায়-কলমে। বাস্তবে খোঁড়া রাস্তার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি নেই শহরের। ফলে এই বর্ষাতেও নাগরিকদের ভাগ হওয়া রাস্তা পেরোতে হয় লাফ দিতে হচ্ছে, নয়তো পাল্টে ফেলতে হচ্ছে যাত্রাপথ!
খোঁড়া রাস্তার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে পুরসভায় সম্প্রতি জারি হয়েছে নতুন নির্দেশিকা। খোঁড়া রাস্তা যাতে দ্রুত মেরামতি হয়, তার জন্য দফতরে-দফতরে সেই নির্দেশিকা বিলি করাও হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই নতুন দাওয়াই বাস্তবায়িত হবে কি না, সে নিয়ে গোড়া থেকেই মাথাচাড়া দিচ্ছে নানা প্রশ্ন। পুরকর্তাদের একটা বড় অংশই মানছেন, এই ধরনের সিদ্ধান্ত আগেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কখনওই তা বাস্তবায়িত হয়নি।
গত ফেব্রুয়ারিতেই আন্ত্রিকের সময় আন্তঃবিভাগীয় তথ্যের লেনদেনের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। পুর ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানিয়েছিলেন, পুরসভারই কোনও পাইপলাইনে ছিদ্র দেখা দিয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির ফলেই সেই ছিদ্র হয়েছে। তখনই বোঝা গিয়েছিল, শুধু বাইরের সংস্থাই নয়, নিজেদের দফতরও পুর পরিষেবার কাজের জন্য শহরের কোথায় খোঁড়াখুঁড়ি করছে, সে সংক্রান্ত তথ্য সঠিক ভাবে আদানপ্রদান করে না। এ বিষয়ে তথ্য লেনদেনের জন্য পুরসভার বিভিন্ন দফতরের মধ্যে ‘কো-অর্ডিনেশন’ বৈঠকের উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের পাঁচ মাস পরেও দেখা যাচ্ছে, খোঁড়া রাস্তার বিপদ কাটেনি শহরের! তাই ফের নতুন করে নির্দেশিকা জারি করতে হয়েছে। এক পদস্থ পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘একদমই নতুন নিয়ম নয়! এটা পুরনো নিয়মই। কিন্তু খাতায়-কলমে নিয়ম থাকলেও তা মানা হয় না। তাই আবার নতুন করে তা ঘষামাজা করা হচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, জল সরবরাহ ও নিকাশি দফতরের নানা প্রকল্পের পাইপলাইন বসানোর জন্য বছরভরই রাস্তা খোঁড়ার কাজ চলে। কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায়, পাইপলাইন বসানো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু খোঁড়া রাস্তা সময়মতো সারিয়ে দেওয়া হচ্ছে না। তাই নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে, পুর প্রকল্পের জন্য রাস্তা খোঁড়া হলে তা সারাতে কত খরচ হবে, সড়ক দফতরকে এ বার আগাম জানাতে হবে পুরসভারই জল সরবরাহ ও নিকাশি দফতরকে। যাতে পাইপলাইন বসানো হয়ে গেলে দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু করা যায়। ওই নির্দেশিকায় এ-ও বলা হয়েছে, কবে রাস্তা খোঁড়ার কাজ শুরু হবে, কবেই বা কাজ শেষ হবে, তা-ও সড়ক দফতরকে জানাতে হবে।
তবে এ বারের নির্দেশিকায় বেসরকারি কোনও সংস্থার কথা একবারও উল্লেখ করা হয়নি। এই বিষয়টিকেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন পুর প্রশাসনের একাংশ। কারণ, খোঁড়া রাস্তা নিয়ে যতবারই অভিযোগ উঠেছে, ততবারই পুর কর্তৃপক্ষ বেসরকারি সংস্থার দিকে আঙুল তুলেছেন। ফলে এ বার আলোচনা শুরু হয়েছে যে শহরজুড়ে খোঁড়া রাস্তার পিছনে আসলে পুরসভারই কোনও দফতর দায়ী, তা বোধহয় কর্তৃপক্ষ বুঝতে পেরেছেন। তাই এ বার আর বাইরের কোনও সংস্থার দিকে আঙুল তোলেননি। যদিও এক পুরকর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘বাইরের সংস্থাকে তো আগেই বহুবার বলা হয়েছে। তাই এ বার নিজেদের দফতরের উপরেই জোর দেওয়া হল।’’
তবে এই নির্দেশিকার পরিণতি অতীতের নির্দেশিকাগুলির থেকে আলাদা কিছু হবে কি না, তা এখনও জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy