Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুল হল অ্যাকাডেমি, গানের স্যরই ‘গ্রুমার’

ইউটিউব, ইন্টারনেটের জমানায় কান জুড়ে বিচিত্রতর শব্দের হট্টগোল। হারমোনিয়াম বা একটু রেস্তদার ঘরের সম্পদ পিয়ানো— একেলে ফ্ল্যাটবাড়িতে বিরল হলেও নেটের কল্যাণে নানা কিসিমের বাজনা এখনও অধরা নয়।

গান-ধারী: চলছে গানের ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

গান-ধারী: চলছে গানের ক্লাস। নিজস্ব চিত্র

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ০২:৩৮
Share: Save:

বঙ্গজীবনের অঙ্গ হিসেবে ভোরবেলা গলা সাধার কথা এই তো সে দিন সুমনের গানেও শোনা গিয়েছিল। আড়াই দশক আগের ছবিটা কী ভাবে পাল্টে গিয়েছে!

তখনও বিকেলে বাড়ি আসেন গানের দিদিমণি। বরপক্ষের সামনে হারমোনিয়ামটা টেনে ভীরুস্বরে ‘হে সখা মম হৃদয়ে রহো’ ধরেন হবু কনে। কলকাতার শব্দরেখা থেকে সাবেক রেডিয়োর সিগনেচার টিউনের মতো সেই ‘সা-রে-গা-মা-পা’ও এখন অতীত। কিন্তু তা বলে বাঙালির রোজনামচা বেসুর হয়ে গিয়েছে কি না, জোর গলায় বলা যাবে না!

পেল্লায় বাক্স ঘাড়ে মেট্রোয় দমদম থেকে টালিগঞ্জ পেরিয়ে যে কিশোরী নিয়মিত বাঘা যতীনে ‘ভায়োলিন’ ক্লাসে যাচ্ছে, তার বাবা বলেন, ‘‘মিতুল এই বাজনার ক্লাসটায় দারুণ আনন্দ পায়! পারতপক্ষে কামাই করতেই চায় না!’’ সেই সুমন যুগে মিতুলের বাবা উজ্জ্বল দত্ত ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হস্টেলে বন্ধুদের গিটার হাতেই সড়গড় হয়েছিলেন। সেই শখের গিটার-চর্চার তুলনায় পরের প্রজন্মের গানবাজনা ঢের সংগঠিত বলে অনেকেরই মত।

ইউটিউব, ইন্টারনেটের জমানায় কান জুড়ে বিচিত্রতর শব্দের হট্টগোল। হারমোনিয়াম বা একটু রেস্তদার ঘরের সম্পদ পিয়ানো— একেলে ফ্ল্যাটবাড়িতে বিরল হলেও নেটের কল্যাণে নানা কিসিমের বাজনা এখনও অধরা নয়। কিন্তু শেখার ঝোঁক কতটা আন্তরিক আর কতটা হুজুগ— তা মাপবে কে? লোপামুদ্রা মিত্র বলছেন, একদা তাঁর গানের সঙ্গে গিটার বাজানোর শিল্পী খুঁজে পেতে টানাপড়েনের কথা! ‘‘তখন সকলের হাতে হাতে গিটার, কিন্তু জুতসই সহশিল্পী পেতে আমি তো নাজেহাল,’’ বললেন লোপা। তবে রূপঙ্কর মনে করেন, এখনকার ছোটদের শেখাটা আগের থেকে পোক্ত হচ্ছে।

তা বলে বদলটা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। হাজরা থেকে হাতিবাগানে গানের টিউশন করতে যাওয়া দিদিমণিরা কই? তবে পাড়ার গানের স্কুলগুলো ধুঁকলেও দক্ষিণী-গীতবিতানেরা আজও স্বমহিমায়। ক্যালকাটা স্কুল অব মিউজ়িক বা অ্যাব্রাহাম মজুমদারের অ্যাকাডেমির ধ্রুপদী পাশ্চাত্য সঙ্গীত চর্চাও থমকে নেই। রূপঙ্কর বলেন, ‘‘পাড়ার গানের স্কুলগুলোই অ্যাকাডেমি হচ্ছে। গানের দিদিরা এখন গ্রুমার! স্বপ্ন দেখাচ্ছে রিয়েলিটি শো!’’

কিন্তু রিয়েলিটি শোয়ের জন্য মাসের পর মাস পড়াশোনা জলাঞ্জলি দিয়ে পড়ে থাকাটা স্বাভাবিক বলে মানবেন না লোপা। আর রূপঙ্কর বলছেন, ‘‘রিয়েলিটি শোয়ের সাফল্যে প্রথম কয়েক বছর ২০-২৫ লক্ষ টাকা রোজগার করাটাই বা খারাপ কেন বলব! আমাদের সময়ে গান গেয়ে বিয়ে করতে যাওয়ার সে যা টেনশন!’’

লোপা-রূপঙ্করদের আগের প্রজন্ম প্রমিতা মল্লিক সব যুগেই ভাল-খারাপ মিশে থাকা দেখছেন! তাঁর দাবি, ‘‘রিয়েলিটি শোয়ের জন্য কণ্ঠের যত্ন নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে।’’ কিন্তু চটুল অঙ্গভঙ্গি সর্বস্ব নাচের শোয়ের প্রভাব শহরে-গ্রামে এক ধরনের গভীর সামাজিক ক্ষত তৈরি করছে বলে মনে করেন এই প্রবীণ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। আজ, বৃহস্পতিবার বিশ্ব সঙ্গীত দিবসে শিল্পীদের একটাই আক্ষেপ— সুযোগ থাকলেও তাৎক্ষণিক গ্ল্যামারের মোহে মন দিয়ে গান শোনার প্রবণতা ক্রমশ কমছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Music schools Music academy Instant glamour
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE