Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

দুঃস্থ শিশুদের মুখে হাসি ফোটাল ‘মুসকান’

ঘুম ভাঙে ঘুপচি ঘরের নোংরা বিছানায়। স্বপ্নটা কী কোনও দিন সত্যি হবে? ভাবতে ভাবতেই চোখের কোল ছলছল করে ওঠে।

শিশুদের সঙ্গে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

শিশুদের সঙ্গে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।

অমৃত হালদার
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ১৬:৩৬
Share: Save:

সন্ধ্যা নামে শোভাবাজারের অন্ধকার গলিটায়। কম দামি মেকআপ আর ঝলমলে পোশাকের ভিড় তখন গলির মাথায়। খদ্দেরদের আনাগোনা, দর কষাকষি আর দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া।

এই দেখতে দেখতে ছোট্ট দু’চোখে রাত নামে। স্বপ্নে তখন খোঁজ চলছে জাদু কাঠির। এক বেলার ভাতের থালাটা কেমন করে যেন পাঁচতারা হোটেলের খাবার ভরা প্লেট হয়ে যাচ্ছে। এমন কতই না অদ্ভুত স্বপ্ন তখন ছোট্ট চোখগুলোয়।

ঘুম ভাঙে ঘুপচি ঘরের নোংরা বিছানায়। স্বপ্নটা কী কোনও দিন সত্যি হবে? ভাবতে ভাবতেই চোখের কোল ছলছল করে ওঠে। কথায় বলে, অন্ধকার গুহার অন্য পাশেই তাকে আলোর হাতছানি। ওদের জীবনেও তেমন করেই এক দিন আলো আসে। ডিসেম্বরের শীতে ধীরে ধীরে যখন গোটা শহর সাজতে শুরু করেছে উৎসবের রঙে, শোভাবাজারের দুঃস্থ ১৯ শিশু তখনই উপহার পেল একটা অন্য রকম আলো ঝলমলে দিন। ওদের নিয়েই একটা অন্য স্বাদের অনুষ্ঠান হল রাজারহাটের এক পাঁচতারা হোটেলে।

আরও পড়ুন: জি ডি বিড়লায় চলছে বৈঠক, বাইরে বিক্ষোভ

কারও মা যৌনকর্মী। কারও বাবা আবার রিকশাচালক। ক্রিসমাসের সময় যখন সবাই মেতে ওঠে উৎসবে, তখন ওদের জীবনে উৎসবের কোনও চিহ্ন থাকে না। জীবনের ষোলো আনাই শুধু ‘দুচ্ছাই’! অন্যের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের গুঁতো খেতে খেতে বড় হয়ে ওঠা।

হাজির ছিলেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, পল্লবী চট্টোপাধ্যায় এবং অারিয়ান ভৌমিক।—নিজস্ব চিত্র।

যদি তাদের জীবনের একটা দিন পাল্টে দেওয়া যায়, তবে কেমন হয়? যে পাঁচতারা হোটেলের বাইরে দিয়ে যেতে যেতে মুখ হাঁ হয়ে যায়, তার ভিতরে বসে পেট পুরে খাবার খাওয়ানোর একটা ব্যবস্থা যদি করা যায়। মোদ্দা কথা তাদের মুখে হাসি ফোটানোর একটা ছোট্ট প্রয়াস চালানো। এমন ভাবনাই এসেছিল ‘রোট্রাক্ট ক্লাব অব সোনার’ এবং ‘রোট্রাক্ট ক্লাব অব আমতলা’র সদস্যদের মাথায়। পাশে পেয়ে যান চিত্র সমালোচক রামকমল মুখোপাধ্যায়কে। তিনিই এই অনুষ্ঠানটির নাম দেন ‘মুসকান’। এগিয়ে আসে নভোটেল হোটেল কর্তৃপক্ষ ও অ্যাসর্টেড মোশন পিকচার্স প্রাইভেট লিমিটেড।

গত ৪ ডিসেম্বর ওই হোটেলেই হয়ে গেল দুঃস্থ শিশুদের নিয়ে এক অনুষ্ঠান। হাজির ছিলেন অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, পল্লবী চট্টোপাধ্যায়, টোটা রায়চৌধুরী, আরিয়ান ভৌমিকের মতো এক ঝাঁক তারকা। অর্পিতা সেখানে বলেন, ‘‘সারা ক্ষণ ব্যস্ততা। তাঁর মধ্যে ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারলাম। এটা আমার প্রাপ্তি।’’ সবাইকে দুঃস্থ শিশুদের জন্য কিছু কাজ করার জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন পল্লবী এবং আরিয়ান।

পাঁচ তারার দারুণ সব খাবার আর সান্তাবুড়ো থেকে উপহার পেয়ে বেজায় খুশি শিশুরা। দিনের শেষে সবার মুখে মিষ্টি হাসির ঝিলিক। জাদুকাঠির ছোঁয়া মিলল যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE