নজরে: এই পরিত্যক্ত কারখানাতে কী হত, তাই এখন খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবার, নাগেরবাজারে। নিজস্ব চিত্র
নাগেরবাজারের কাজিপাড়ার নিরাপদ রাস্তা কি বিস্ফোরক সরবরাহে ব্যবহার করা হত? প্রশ্নটা বিস্ফোরণের পর থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। প্রশ্নের উত্তর পেতে নাগেরবাজারের কাজিপাড়া সংলগ্ন এলাকায় কোনও পরিত্যক্ত জায়গায় সকেট বোমা তৈরির কারখানা গড়ে ওঠেছে কি না, তা নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে সিআইডি।
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার এ রকমই একটি কারখানার সন্ধান মিলল নাগেরবাজার এলাকায়। পরিত্যক্ত কারখানার ভিতরে কোথাও ছড়িয়ে রয়েছে বৈদ্যুতিক সামগ্রী, কোথাও বা ধাতব পাইপ, বস্তা। কোথাও আবার পড়ে রয়েছে মদের বোতল, গ্লাস। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় বহু দিন কেউ ঢোকেননি ভিতরে। কারখানার ভিতরে ঢুকলে অবশ্য টের পাওয়া যায়, মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকে। সিআইডি-র এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘এলাকার বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞাবাদ করা হচ্ছে। সেই সূত্রে কারখানার সঙ্গে যোগ রয়েছে এ রকম এক জনের উপরে বিশেষ নজরও রয়েছে।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, বছর কুড়ি আগে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। দক্ষিণ দমদম পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ ওই কারখানার দেখভালের জন্য কয়েক জন কর্মী রেখেছেন। কারখানার গেট সব সময়ে তালাবন্ধ থাকে। বাইরের লোক ঢুকতে পারেন না।’’ সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, কারখানাটির পিছনের দিকেও একটি রাস্তা রয়েছে। সেখান দিয়ে কেউ যাতায়াত করেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিন ওই কারখানার সামনের বন্ধ গেটে বার কয়েক ধাক্কা দিলে এক ব্যক্তি বেরিয়ে আসেন। কিছুটা নিমরাজি হয়েই গেট খুললেন। কথায় কথায় নিজের হকর্মী সম্পর্কে তিনি জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ছুটি নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন সহকর্মী। নাগেরবাজারে ফিরেছেন মঙ্গলবার রাতে। এখন তিনি কোথায়? প্রশ্নের প্রেক্ষিতে ওই ব্যক্তি জানান, বড়বাজারের এক দোকানে সহকর্মী ডিউটি করতে গিয়েছেন। কারখানার পিছনে পরিত্যক্ত অংশে যাওয়া নিয়ে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে ওখানে কেউ যাননি। ওখানে গোখরো সাপও দেখা গিয়েছে। খুব বেশি ভিতরে না যাওয়াই ভাল।’’
কারখানার পিছনের অংশে গিয়ে দেখা গেল, পরিত্যক্ত জায়গায় মানুষের আনাগোনার ছাপ যথেষ্টই। চারদিকে আগাছায় ভরা ভাঙাচোরা একটি বিশাল হলঘরের ভিতরে বসানো হয়েছে একটি বড় নতুন করোগেটেড শিট। ওই ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে ধাতব পাত্র। ওই বড় হলঘরের পাশের ছোট ঘরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে পড়ে মদের বোতল ও গ্লাস। বসার জন্য বস্তাও রাখা। অন্য প্রান্তে একটি ঘরে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে পড়ে আছে সুইচবোর্ড, মিটার বাক্স। একটি বোর্ড থেকে বেরিয়ে আছে একগুচ্ছ তার। ওখানেই পড়েছিল বেশ কিছু লোহার পাইপও। কারখানার পিছনের ওই পরিত্যক্ত অংশে এতক্ষণ ধরে কেন ঘোরাঘুরি চলছে, তা দেখতে আসেন ওই ব্যক্তি। ফের গোখরো সাপের ভয় দেখিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসতে বলেন তিনি।
কারখানার গেট থেকে বেরিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গেল সিআইডি গোয়েন্দারা তদন্তের কাজে ব্যস্ত। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, নাগেরবাজারে ব্যবহার করা সকেট বোমা স্থানীয় কোনও জায়গায় তৈরি হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থলের পিছনের পরিত্যক্ত কারখানায় এমন কার্যকলাপ হত কি না, সে বিষয়ে তদন্তের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারী আধিকারিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy