Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পুজোতেও বাড়ি ফেরা হল না সীতা ও শুভমের

পুজোর দিনগুলি এসএসকেএম হাসপাতালের শয্যাতেই কাটালেন নাগেরবাজার বিস্ফোরণে আহত সীতা ঘোষ এবং শুভম দে।

হাসপাতালের শয্যায় সীতা ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের শয্যায় সীতা ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০০:১২
Share: Save:

পুজোর দিনগুলি এসএসকেএম হাসপাতালের শয্যাতেই কাটালেন নাগেরবাজার বিস্ফোরণে আহত সীতা ঘোষ এবং শুভম দে।

গাঁধী জয়ন্তীর সকালে আট বছরের ছেলে বিভাসকে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন সীতা। তখনই ঘটে বিস্ফোরণ। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় বিভাসের। পুড়ে গিয়েছিল সীতার শরীরের বিভিন্ন অংশ। ধীরে ধীরে তা শুকোতে শুরু করেছে। কিন্তু মনের ঘা এখনও দগদগে। পরিবারের তরফে তাঁকে সরাসরি জানানো হয়নি ছেলের মৃত্যু সংবাদ। তবে পরিজনেদের মতে, বারবার জিজ্ঞেস করেও কিছু জানতে না পেরে সম্ভবত খারাপ কিছুই আঁচ করছেন সীতা।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, সীতার বাঁ পায়ের ক্ষতস্থান থেকে নতুন করে তরল বেরোচ্ছে। সে কারণে আরও কয়েক দিন সীতাকে হাসপাতালে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের শয্যায় শুয়ে থাকা সীতার শরীরের অন্য অংশ থেকে চামড়া নিয়ে ক্ষতস্থান মেরামত করা হতে পারে। তাঁর দেওর দীপেঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘বাঁ পায়ের ক্ষতস্থানে প্লাস্টিক সার্জারি করা হতে পারে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।’’ তাঁর ডান পায়েও সমস্যা রয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপিতে বাড়ি হলেও অর্জুনপুরে ভাড়া থাকতেন সীতারা। পরিবার সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের আওয়াজে একটি কানে গর্ত হয়ে গিয়েছে সীতার। তাই কানের চিকিৎসাও শুরু হয়েছে। ওষুধ দিয়ে আপাতত কানের চিকিৎসা চলছে। তাতে ফল না হলে অস্ত্রোপচারের কথা ভাববেন চিকিৎসকেরা।

এসএসকেএম হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আরেক আহত মধ্যমগ্রামের গ্রিন পার্কের বাসিন্দা ধূপ বিক্রেতা শুভম দে। তিনি চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর পরিজনেরা। তাঁর মাথায় এখনও স্‌প্লিন্টার রয়েছে। আপাতত ওষুধ দিয়ে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন চিকিৎসকেরা। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি একই রকম বলে মত শুভমের কাকা পিন্টুর। পুজোর কয়েক দিন জ্বর থাকলেও রবিবার ছিল না। তবে রাইস টিউবের মাধ্যমে শুভম খাচ্ছেন। তাঁর ঘাড়েও সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। দিন কুড়ি হাসপাতালের বিছানায় কাটানোর পরে রবিবার আত্মীয়দের কাছে বাড়ি ফেরার আর্জি জানিয়েছেন শুভম। পিন্টুবাবুর কথায়, ‘‘শুভম বলছিল, কাকা আমি বাড়ি যেতে পারব তো! আমি বললাম, নিশ্চয়ই পারবি। এখন কিছুটা স্বাভাবিক কথা বলার চেষ্টা করছে ছেলেটা।’’

নাগেরবাজার বিস্ফোরণে অন্য আহতেরা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও সীতা এবং শুভমই এখনও চিকিৎসাধীন। বিস্ফোরণে বিভাস ছাড়াও মৃত্যু হয়েছে ফল বিক্রেতা অজিত হালদার এবং ধোপা

শরৎ শেঠির। পুজোর দিনগুলি হাসপাতালে কাটানো নিয়ে দুই আহতের পরিবারের বক্তব্য, এখন সীতা এবং শুভমকে সুস্থ করে বাড়ি ফেরানোই তাঁদের লক্ষ্য।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিল বিভাসের পরিবার। আবারও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁরা যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন দীপেঞ্জয়েরা। তাঁদের মতে, ‘‘দিদি যদি আমাদের কাজের ব্যবস্থা করে দেন, তা হলে পরিবারটা বাঁচে।’’ উল্লেখ্য,

বিভাসের পরিবারকে ইতিমধ্যেই দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি ওই পরিবারের কাজের বিষয়টি নিয়েও আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তেমনই

দাবি দীপেঞ্জয়দের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Injury Bomb Blast Nagerbazar Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE