Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ডাক্তার-পরিজন দ্বন্দ্ব রোধে শিবির ন্যাশনালের

সাধারণত, হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মৃত্যুর পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ তীব্র হয়। সেই সব এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩২
Share: Save:

রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। তার প্রেক্ষিতে আক্রান্ত চিকিৎসক। পাল্টা বিক্ষোভে জুনিয়র চিকিৎসকেরা। রোগীর পরিজন আর চিকিৎসকদের এ হেন ‘প্রতিবাদে’ একাধিক বার অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে ‘সচেতনতা’কেই হাতিয়ার করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সাধারণত, হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের মৃত্যুর পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ তীব্র হয়। সেই সব এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। আর এ বার ওই সব এলাকা যেমন—তিলজলা, তপসিয়া, পার্ক সার্কাস, এন্টালি, গোরাচাঁদ রোডের বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছতে চাইছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে গিয়ে তাঁরা বিনামূল্যে রক্তচাপ মাপা, রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা-সহ একাধিক শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা করবেন। ডিজিটাল প্রোজেক্টরের মাধ্যমে মানবদেহ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক বিভিন্ন ছবি দেখানো হবে। হবে আলোচনাও। দেখানো হবে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন নথিপত্র। ‘ক্ষুব্ধ’ বাসিন্দাদের কাছ থেকে তাঁদের বক্তব্য শুনবেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালে অপ্রীতিকর ঘটনার পরে আইনের রাস্তা কেমন হবে, তার পাঠও দেওয়া হবে শিবিরে। এমনই বেশ কিছু সচেতনতা শিবির হতে চলেছে ‘বিক্ষুব্ধ’ এলাকাগুলিতে।

শিবিরে শুধুমাত্র চিকিৎসকেরা নন, তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশকর্মীরা। যৌথ ভাবেই এই শিবিরের আয়োজন করতে চলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ। ‌এ নিয়ে ইতিমধ্যেই পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কবে থেকে তা শুরু হবে, তা নিয়ে অবশ্য এখনই মুখ খুলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বিমলবন্ধু সাহা বলেন, ‘‘মানুষকে সচেতন করতে শিবিরের আয়োজন নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আরও কয়েকটি বৈঠকের পরেই দিন ক্ষণ স্থির হবে।’’

প্রসঙ্গত, গত কয়েক দিন আগে রোগী-মৃত্যুর জেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। পাল্টা বিক্ষোভে সামিল হন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি ছিল, নিরাপত্তা বৃদ্ধির। সে বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ হলেও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য জুনিয়র চিকিৎসকদের তাইকোন্ডো শেখার ‘পরামর্শও’ দেন। যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন ছিল, পরিস্থিতি সামলাতে ক়ী তাইকোন্ডোকে ‘অস্ত্র’ করে পরিজনদের সঙ্গে মারধরে জড়াবেন! তাই এ হেন পরিস্থিতির মোকাবিলায় ‘সচেতনতা’কেই ভরসা করতে চান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে, শুধুমাত্র নিরাপত্তা
কঠোর করেই বিক্ষোভে রাশ টানা যায় না। পাল্টা আত্মরক্ষার জন্য তাইকোন্ডোর ব্যবহারে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে।

তাই, এই ধরনের পরিবেশ যাতে হাসপাতাল চত্বরে সৃষ্টি না হয়, সে জন্য মানুষকে সচেতন করার দিকেই জোর দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এক আধিকারিকের মতে, ‘‘মারধর, ভাঙচুর বা পাল্টা মারধর— কোনও কিছুতেই অবস্থার পরিবর্তন করা যথেষ্টই কষ্টসাধ্য। মানুষকে সচেতন করা গেলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো যাবে। তাই এমন শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে।’’ প্রসঙ্গত, গত জানুয়ারি মাসে রোগী-মৃত্যুতে চিকিৎসকের গাফিলতির অভিযোগ তিন বার উত্তপ্ত হয়েছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE