Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ক্যানসারজয়ী শিশুদের জন্য হাসপাতালে এ বার খেলাঘর

বুধবার ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ’-এর ওই রিহ্যাব সেন্টারের খেলাঘরে (প্লে-রুম) টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা, সাত বছরের স্বপ্নেন্দ্রীয় চক্রবর্তী। গত ১৪ জানুয়ারির জন্মদিন পার্ক সার্কাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালের ঘরেই পালন করেছে সে।

আধুনিক: ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্‌থ-এ চালু হওয়া রিহ্যাব সেন্টার। নিজস্ব চিত্র

আধুনিক: ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্‌থ-এ চালু হওয়া রিহ্যাব সেন্টার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

যেন হারিয়ে না যায় ওরা! সেই লক্ষ্যেই সুস্থ হয়ে ওঠা শিশু ক্যানসার রোগীদের জন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় রিহ্যাব সেন্টার চালু করল পার্ক সার্কাসের এক বেসরকারি হাসপাতাল।

বুধবার ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ’-এর ওই রিহ্যাব সেন্টারের খেলাঘরে (প্লে-রুম) টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে দুপুরের খাবার খাচ্ছিল দক্ষিণেশ্বরের বাসিন্দা, সাত বছরের স্বপ্নেন্দ্রীয় চক্রবর্তী। গত ১৪ জানুয়ারির জন্মদিন পার্ক সার্কাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালের ঘরেই পালন করেছে সে। চাইলে বাড়ি যেতে পারত। কিন্তু ইনস্টিটিউটের শিশুদের সঙ্গেই জন্মদিন পালন করবে বলে সে বাড়ি যায়নি। স্বপ্নেন্দ্রীয়রা যাতে সেখানেই ভাললাগার একটা পরিসর খুঁজে পায়, সেই লক্ষ্যেই তৈরি হয়েছে ওই রিহ্যাব সেন্টার। শিশুদের ক্যানসার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার পার্থ সরকার জানান, ঠাকুরপুকুরের একটি ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পরে গত ছ’বছরে ১৫৭৬টি শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু ‘ফলো আপ’ চিকিৎসা করানোর জন্য এসেছে মাত্র ৩২ জন! চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, কত জন ক্যানসার রোগী হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন, তার পরিসংখ্যান রাখছে ‘ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’। কত রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই খবর রাখেন। কিন্তু ‘ফলো আপ’ না করানোর জন্য সুস্থ হয়ে ওঠা শিশুরা কী ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে, তাদের পরিণতিই বা কী হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনও রেকর্ড নেই! ফলো-আপ ঠিক মতো না হলে শিশুদের শরীরে অনেক সময়েই ক্যানসার ফিরে আসে। যার জেরে মৃত্যুও হয় তাদের।

পার্থবাবুর কথায়, ‘‘ক্যানসার চিকিৎসায় বিপুল খরচ বহন করার পরে ফলো আপের জন্য অভিভাবকেরা শিশুকে অনেক ক্ষেত্রেই আনতে চান না। যার ফলে দেহে ক্যানসার ফিরে এসে সুস্থ শিশুদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। সরকারি স্তরে এ নিয়ে প্রচার প্রয়োজন। ক্যানসার আক্রান্তদের নিয়ে যে সমস্ত ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, তা-ও কাটানো উচিত।’’ ফলো-আপের জন্য শিশুরা এসে ভর্তি হলে তাদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখার জন্যই প্রয়োজন রিহ্যাব সেন্টারের।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

রিহ্যাব সেন্টারের প্রয়োজনীয়তার কথা বোঝাতে গিয়ে পার্ক সার্কাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটের প্রধান চিকিৎসক দীপশিখা মাইতি বলেন, ‘‘ক্যানসার সেরে যাওয়ার পরেও শিশুরা পরবর্তী ক্ষেত্রে অনেক রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিলে ফিজিয়োথেরাপির প্রয়োজন হয়। হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়ায় অনেক সময়ে উঠতে, বসতে সমস্যা হতে পারে। কানেও সমস্যা হতে পারে। তা থেকে কথা বলতে অসুবিধা হয়।’’ শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক চাপ তৈরি হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।

দীপশিখা জানান, সুস্থ হয়ে ওঠা শিশুদের গ্রহণ করার প্রশ্নে সমাজে একটা ছুতমার্গ কাজ করে। সে ক্ষেত্রে আক্রান্তের কাউন্সেলিং দরকার। এ নিয়ে কাজ করা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মতে, সুস্থ হলেও অনেক স্কুলই এ ধরনের শিশুকে রাখতে চায় না। ‘ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ’-এর অধিকর্তা, চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘আক্রান্ত শিশুদের মনের জোর জোগানোটা খুব জরুরি। তারই অঙ্গ হিসেবে রিহ্যাব সেন্টারে ‘প্লে থেরাপি’, ‘মিউজিক থেরাপি’ চালু করা হয়েছে। এ ধরনের পরিষেবা খুব জরুরি।’’ আপাতত নিখরচায় পরিষেবা চালু হলেও আগামী দিনে আরও সাহায্যের প্রয়োজন বলে এ দিন জানান ওই হাসপাতালের ডেপুটি চিফ অপারেটিং অফিসার আরাধনা ঘোষ চৌধুরী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer Police Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE