প্রযুক্তির হাত ধরে সরকারি বাসে চুরির পরিমাণ কমেছে। বেড়েছে আয়। তাতে উৎসাহিত পরিবহণ দফতরের কর্তারা। এ বার তাই সরকারি পরিবহণে কার্যত ‘ক্যাশলেস’ লেনদেন চালুর কথা ভাবছেন তাঁরা।
কেমন সেই সাফল্য?
পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগম (ডব্লিউবিটিসি) সূত্রের খবর, জওহরলাল নেহরু আর্বান রিনিউয়াল মিশন (জেএনএনইউআরএম)-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় আসা মোট ৬৩২টি বাসে বৈদ্যুতিন মেশিনের মাধ্যমে টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। বছরখানেক ধরেই এই বাসগুলিতে যাত্রীদের থেকে টাকা নিয়ে মেশিন থেকে টিকিট বার করে দিচ্ছেন কন্ডাক্টর। আগের মতো ছাপানো টিকিট দেওয়ার ব্যবস্থা উঠে গিয়েছে। পরিবহণ কর্তাদের দাবি, এতেই চুরির পরিমাণ অনেকটা কমেছে। এক পরিবহণ কর্তা হিসেব দিচ্ছেন, ‘‘মেশিন চালু হওয়ার আগে বাস-পিছু যা আয় হত, তা এখন প্রায় ২৭% বেড়ে গিয়েছে।’’
কী ভাবে এই বৃদ্ধি সম্ভব হল?
পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এখন কন্ডাক্টরেরা যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যে টিকিট দেন, তাতে কোথা থেকে কোথায় ওই যাত্রী যাচ্ছেন তা লেখা থাকে। তা ছাড়াও কোন সময়ে টিকিট দেওয়া হচ্ছে, কোন বাসের টিকিট— লেখা থাকে সেই সব তথ্যও। এক কর্তার কথায়, ‘‘এখন ট্র্যাফিক অফিসারেরা মেশিনে লগ-ইন করে সহজেই জানতে পারছেন সংশ্লিষ্ট কন্ডাক্টর নির্দিষ্ট একটি সময়ের ব্যবধানে কত টিকিট কেটেছেন। সেই মতো তাঁর ব্যাগ পরীক্ষা করে তা যাচাইও করে নিতে পারছেন তাঁরা। আর এই সংখ্যা জানতে পারছেন না কন্ডাক্টরেরা। জানতে হলে তাঁকেও লগ-ইন করতে হচ্ছে। আবার, কন্ডাক্টরেরা বারবার লগ-ইন করলে তা-ও ধরা পড়ে যাচ্ছে পরীক্ষকদের চোখে।’’ ফলে যাত্রীকে ফাঁকি দিয়ে আগের মতো কম-বেশি টিকিট দেওয়া কন্ডাক্টরের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
সিএসটিসি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রযুক্তির এই কড়াকড়িতে প্রথম ধাপে বেশ কয়েক জন কন্ডাক্টর ধরা পড়েছেন। এর পরেই চুরির সংখ্যা কমেছে। টিকিট বিক্রির পরিমাণ একলাফে ২৭ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।’’
এই সাফল্যের পরেই পুরোপুরি ‘ক্যাশলেস’ টিকিট ব্যবস্থা চালুর উপরে জোর দিচ্ছেন পরিবহণ কর্তারা। তাঁরা মনে করছেন, এতে বাসের আয়ের উপরে অনেক বেশি স্বচ্ছতা আসবে। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্মার্ট কার্ড চালু হচ্ছে নতুন প্রকল্পের জেএনএনইউআরএম বাসগুলিতে। এর ফলে যাত্রীরা অনলাইনে কিংবা টিকিট কাউন্টার থেকে স্মার্ট কার্ডে টাকা ভরে রাখতে পারবেন। মেট্রো রেলে স্মার্ট গেটে কার্ড ঠেকালে যেমন যাত্রীর গন্তব্যের টিকিটের মূল্য বাদ যায়, তেমনই স্মার্ট কার্ড নিয়ে বাসে উঠে তা কন্ডাক্টরকে দিলে তা থেকে টিকিটের নির্দিষ্ট মূল্য বাদ যাবে। অর্থাৎ, যাত্রীর অ্যাকাউন্ট থেকে তা সরাসরি চলে যাবে নিগমের অ্যাকাউন্টে। কোনও নগদ লেনদেন ছাড়াই।
পরের ধাপে স্মার্ট কার্ডের পাশাপাশি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট কাটার ব্যবস্থাও চালু হবে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। এক কর্তা বলেন, ‘‘আগামী মাসের মধ্যে মোবাইল অ্যাপ চালু হয়ে যাবে। সেখানে যাত্রী বাসে উঠে নিজেই তাঁর গন্তব্য লিখে টিকিট কেটে নিতে পারবেন। টিকিট কাটার পরে কন্ডাক্টরের কাছে তার তথ্য পৌঁছলে তিনি যাত্রীর হাতে টিকিট দিয়ে দেবেন। অথবা এককালীন পাসওয়ার্ডের (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি) মাধ্যমে টাকার লেনদেন হবে। নগদ লেনদেন থাকবেই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy