Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

অনাত্মীয়ের ভালবাসায় মায়ের দুধ মিলছে মা-হারা শিশুর

কারণ, মাত্র ১১ দিন বয়সি মেয়েকে মাতৃহারা করেছে ডেঙ্গি। বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে বুধবারই মৃত্যু হয়েছে বাগুইআটি অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা, কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল রুনু বিশ্বাসের (২৮)।

রুনু বিশ্বাস

রুনু বিশ্বাস

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

খাটের উপরে গোলাপি রঙের মশারির নীচে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে সদ্যোজাত। পাশে ছড়ানো নানা খেলনা। রাখা রয়েছে দুধের বোতল, জলের পাত্র। পাশে বসেই ছোট্ট বোনের তদারকি চালাচ্ছে দুই মাসতুতো দাদা-দিদি, পাঁচ বছরের আমানত এবং বছর এগারোর অনুষ্কা। শুধু নেই মায়ের পরশ। তাই ঘুমের মধ্যেও কেঁপে কেঁপে উঠলে বা হাত-পা ছুড়লে মায়ের স্পর্শ মেলে না তার। তবে এক অনাত্মীয়ের ভালবাসায় মায়ের দুধ অবশ্য মিলছে।

কারণ, মাত্র ১১ দিন বয়সি মেয়েকে মাতৃহারা করেছে ডেঙ্গি। বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে বুধবারই মৃত্যু হয়েছে বাগুইআটি অশ্বিনীনগরের বাসিন্দা, কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল রুনু বিশ্বাসের (২৮)। গত ২৫ অক্টোবর জ্বর নিয়ে ভিআইপি রোডের এক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা রুনু। সেখানেই গত ২৬ অক্টোবর শিশুকন্যার জন্ম দেন তিনি। পরিবার সেই সদ্যোজাতের নাম রাখে জ্যোতিষ্কা। পরে রুনুর অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতাল বদলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। ফলে মা-হারা সেই শিশু এখন থাকছে তার মেজো মাসি রিঙ্কু আগরওয়ালের কাছে। বৃহস্পতিবার রিঙ্কু বলেন, ‘‘জ্যোতিষ্কার মতো ছোট বাচ্চার বুকের দুধই মূল খাদ্য। চিকিৎসকেরা বলেন, বুকের দুধ না পেলে বাচ্চার মস্তিষ্কের বিকাশ হয় না। বড় সৌভাগ্য যে, আমাদেরই ফ্ল্যাটেরই তিনতলার বাসিন্দা সুচেতনা দত্ত মাস দুয়েক আগেই কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। বলতেই এক কথায় রাজি হয়ে যান তিনি। ফিডিং বোতলে জ্যোতিষ্কার জন্য বুকের দুধ ভরে পাঠাচ্ছেন সুচেতনা।’’

এ দিন ওই আবাসনে রিঙ্কুদের ছ’তলার ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখা যায়, শোয়ার ঘরে আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে জ্যোতিষ্কার জন্য। বোনকে সামান্যতম উসখুস করতে দেখলেই মা-বাবাকে ছুটে খবর দিচ্ছে তারা। তাদের ইচ্ছে, বোন বড় হলে সকলে একসঙ্গে ঘুরতে যাবে। রিঙ্কু বললেন, ‘‘আসলে কী ঘটেছে, ওদের কোনও ধারণাই নেই।’’

কথার মাঝেই সামান্য কেঁদে উঠল শিশুটি। সাবধানে বোনঝিকে কোলে নিয়ে মাসি রিঙ্কু বলেন, ‘‘রাতেও ঘুমের মধ্যে কেঁদে ওঠে ও। তখন আমি বা আমার স্বামী ওকে কোলে নিয়ে বসে থাকি। একটু আদর করে দিলেই ফের ঘুমিয়ে পড়ে।’’ পাশে বসা রিঙ্কুর স্বামী মণীশ বললেন, ‘‘এক মুহূর্তও ওকে মশারি ছাড়া রাখছি না আমরা। রুনুর ঘটনায় খুব ভয় পেয়ে গিয়েছি।’’

কথায় কথায় ওঠে রুনুর প্রসঙ্গ। জ্বরে কেউ কী করে এ ভাবে শেষ হয়ে যেতে পারে? এ প্রশ্নের উত্তর এখনও পাননি রিঙ্কুরা। যেমন উত্তর মেলেনি সদ্যোজাতকে নিয়ে এ ভাবে কত দিন কাটাতে পারবেন তাঁরা? সেই প্রশ্নেরও। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই অবশ্য বললেন, ‘‘নিজের দুই সন্তানকে মানুষ করছি। জ্যোতিষ্কাকেও ঠিক সামলে নেব। কিন্তু ও এত ছোট অথচ সরাসরি বুকের দুধ খেতে পারছে না। এটাই চিন্তার।’’ সুচেতনা অবশ্য বললেন, ‘‘জ্যোতিষ্কাও আমার মেয়ের মতোই। ওর পাশে আমি সর্বক্ষণ আছি।’’

কথাবার্তার মাঝেই আমানত ফের খবর দেয়, ‘‘বোন কাঁদছে। ওর খিদে পেয়েছে!’’ দ্রুত উঠে পড়া মাসির চোখে-মুখে তখন উৎকণ্ঠা। তার মধ্যেই বলে গেলেন, ‘‘ওরা বোনকে খুব চোখে চোখে রেখেছে।’’ বুধবার রুনুর দেহ যখন বাড়িতে আনা হয়, তখন ওদের কাছে জ্যোতিষ্কাকে রেখেই বোনকে শেষ বিদায় জানাতে গিয়েছিলেন রিঙ্কু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Newborn Constable Death Dengue
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE