Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মন খারাপ সারাতে শহরের বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন ‘মনের মানুষ’

অভাবের জেরে ক্লাস এইটের পরে পড়াশোনা হয়নি। সংসারের জোয়াল কাঁধে চেপেছিল সেই ১৪ বছর বয়সেই। ক্লান্তি আর অবসাদ যখন চেপে বসত ভিতরে, একা একাই কাঁদত সেই কিশোরী। প্রায় ২৫ বছর পরে সেই মেয়েটিই এখন অন্যদের ‘মন খারাপ’ সারানোর দায়িত্বে।

সহায়: কাউন্সেলিং করছেন মণিকা মজুমদার। ছবি: শৌভিক দে

সহায়: কাউন্সেলিং করছেন মণিকা মজুমদার। ছবি: শৌভিক দে

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৭ ১১:৪৫
Share: Save:

অভাবের জেরে ক্লাস এইটের পরে পড়াশোনা হয়নি। সংসারের জোয়াল কাঁধে চেপেছিল সেই ১৪ বছর বয়সেই। ক্লান্তি আর অবসাদ যখন চেপে বসত ভিতরে, একা একাই কাঁদত সেই কিশোরী। প্রায় ২৫ বছর পরে সেই মেয়েটিই এখন অন্যদের ‘মন খারাপ’ সারানোর দায়িত্বে।

২০০৭ সালে রাজ্যের দু’টি পুরসভার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাউন্সেলিং-এর কাজ শুরু করেছিল এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। ‘জনমানস’ নামে ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল, তৃণমূল স্তরে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা তৈরি। পরে মানসিক স্বাস্থ্যই প্রধান হয়ে ওঠে। অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়। তার পরে বেছে নেওয়া হয় ১৩ জনকে। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন মণিকা মজুমদার। এ রাজ্যের প্রথম ‘কমিউনিটি বেসড মেন্টাল হেলথ কাউন্সেলার’ হিসেবে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।

সোম থেকে শনি, সপ্তাহে ছ’দিন ঘুরে ঘুরে মানসিক স্বাস্থ্যের হাল-হকিকত খোঁজার সঙ্গে পারিবারিক হিংসা, অবসাদ, শিশুদের সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব রয়েছে মণিকাদের। বাড়ি গিয়ে কথা বলার পরে যাঁদের দেখে মনে হয়, আরও কথা বলা দরকার, তাঁদের ডাকা হয় কিয়স্কে। মণিকা জানান, এ ভাবে তাঁর জীবনটাই বদলে গিয়েছে। ‘‘কত রকমের যন্ত্রণা থাকে মানুষের। শুনে মনে হয়, আমার জীবনটাই তো বরং সুখের। খুশিতে বাঁচার কথা বলি সকলকে।’’

তাঁদের কথা লোকে মন দিয়ে শোনেন? মণিকা জানান, অনেক ক্ষেত্রে গোড়ায় কিছু প্রতিরোধ থাকে। ধৈর্য্য ধরে তা ভাঙতে হয়। ‘অধিকাংশ মানুষের তো মনোরোগ নিয়ে ধারণাই নেই। তাই তাঁরা ডাক্তারের কাছেও যান না। দিনের পর দিন কথা বলে, সমস্যার উৎস বুঝে আমরা তা নিরাময়ের চেষ্টা করি।’’ মণিকার দাবি, আটশোরও বেশি মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়েছেন তিনি।

শুধু কাউন্সেলিং নয়, যাঁদের হাসপাতাল পরিষেবা, ওষুধ দরকার, তাঁদের জন্য সেই ব্যবস্থা করা হয়। যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি চলছে, তাদের তরফে রত্নাবলী রায় বলেন, ‘‘প্রাত্যহিক জীবনের নানা খুঁটিনাটি থেকেই মানসিক সমস্যার উৎসটা খোঁজার চেষ্টা করেন এই মেয়েরা। শুরুতে অনেকে পাত্তা দিতেন না। এখন অনেকের কাছেই ওঁদের অবারিত দ্বার।’’

মণিকাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন যে মনোবিদেরা, তাঁদের অনেকের মতে, ‘‘অনেক সময়েই মনের কথা বলতে পারলে অনেকটা শান্তি মেলে। এ জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। মণিকারা অনেকের কাছের জন হয়ে উঠতে পারছেন। কাউন্সেলিং-এর প্রাথমিক বিষয় আমরা শিখিয়েছি। তাতেই অনেকটা কাজ হয়েছে।’’

রাষ্ট্রপতির হাত থেকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নজির গড়ার স্বীকৃতি পেয়েছেন মণিকা। তাঁর আশা, এ স্বীকৃতি আরও অনেক মেয়েকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাউন্সেলিংয়ে উদ্বুদ্ধ করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE