মধ্য কলকাতার একটি হোটেল। এ মাসের গোড়াতেই সেখানে এসে ওঠে বাংলাদেশের কিছু লোক। এনআইএ প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছে, মালদহের কালিয়াচকে সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অশান্ত করে তুলতে চক্রান্তের যে জাল বোনা হয়, তার কিছুটা ওই হোটেলে বসেই বুনেছিল বিদেশি আগন্তুকেরা। আর রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের সেই হোটেলের মালিক হলেন মহম্মদ সোহরাব। রেড রোডে কুচকাওয়াজের মহড়ায় ঢুকে পড়া গাড়ির ধাক্কায় বায়ুসেনার এক কর্পোরালের মৃত্যুর ঘটনার পর দুই পুত্র-সহ তৃণমূলের যে নেতা এখনও ফেরার।
কালিয়াচক-কাণ্ডের সঙ্গে কলকাতা যোগের এই রিপোর্ট এনআইএ দেওয়ার ঠিক পরের দিনই ঘটেছে রেড রোডের ওই কাণ্ড। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টে অবশ্য হোটেল মালিক অর্থাৎ সোহরাবের উল্লেখ নেই। তবে হোটেলটি যে বহু বছর ধরে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কালো তালিকায়, সেটা এনআইএ জানতে পেরেছে।
সূত্রের খবর, প্রায় দেড় যুগ আগে থেকেই ওই হোটেল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের নজরদারির আওতায়। সে সময়ে কলকাতা শহরে যে সব বাংলাদেশি জাল নোটের কারবারি ধরা পড়েছে, তাদের অনেকেই ওই হোটেলে উঠত ও সেখানে বৈঠক করত বলে দাবি। হোটেলের মালিক সেই সময় ছিলেন ‘গালকাটা সেলিম’। লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ ও লর্ড সিনহা রোডের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের অফিসাররা সেই সূত্রে সেলিমকে বেশ কয়েক বার জেরা করেছেন। সেলিমের কাছ থেকে পরে হোটেলটি কিনে নেন সোহরাব।
রেড রোড-কাণ্ডের তদন্ত করা কলকাতা পুলিশের সিট বা স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিমের সদস্য এক অফিসারের কথায়, ‘‘সোহরাব যে সন্দেহজনক চরিত্র, সেটা এখন বুঝছি। বাংলাদেশেও ওর ভাল যোগাযোগ।’’
গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ১৯৯৩-এ বৌবাজার বিস্ফোরণ মামলার অন্যতম অভিযুক্ত পারভেজ ওরফে লালা ফেরার। ২৩ বছরে তার সন্ধান পাননি গোয়েন্দারা। লালা ওই মামলার মূল অভিযুক্ত রশিদ খানের শ্যালক। আবার লালার ছেলে শাহনওয়াজ খান ওরফে শানু রেড রোডের ঘটনার পর থেকে বেপাত্তা। শানু আর আম্বিয়া-সাম্বিয়া পরস্পরের বন্ধু।
লালবাজারের এক গোয়েন্দা-কর্তা বলেন, ‘‘পারভেজ বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে আছে। আর সোহরাবের সঙ্গে পারভেজের নিয়মিত যোগাযোগ থাকার বিষয়টি ফলমান্ডির কয়েক জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে জেনেছি।’’ ওই অফিসারের কথায়, ‘‘বাংলাদেশে যে সব ব্যবসায়ী ফল রফতানি করেন, তাঁদের টাকা আটকে গেলে সোহরাব লালাকে দিয়ে বেশ কয়েক বার সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে।’’
তা হলে কি কালিয়াচকের ঘটনার ঠিক আগে বাংলাদেশ থেকে এসে যারা এসেছিল, তারা সোহরাবের পরিচিত? চক্রান্তের বিষয়টি কি সোহরাব জানতেন? ওই অফিসারের কথায়, ‘‘এতে হোটেল মালিকের কী ভূমিকা, সেটা খতিয়ে দেখছি।’’
সোহরাব ২০০৬ সালে জো়ড়াসাঁকো কেন্দ্র থেকে বামফ্রন্ট-সমর্থিত আরজেডি প্রার্থী হিসেবে বিধায়ক হন। কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক অফিসারের কথায়, ‘‘সোহরাবের নাম যখন বামফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে, তখনই সতর্ক করেছিলাম।’’ কেন?
ওই অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘১৯৯৭-৯৮-এ জম্মু ও কাশ্মীরের একটি উগ্রপন্থী সংগঠনের এজেন্ট হিসেবে ফল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আছে সোহরাবের বিরুদ্ধে। তার পরেও সোহরাব টিকিট পান।’’ ওই অফিসারের দাবি, সোহরাবের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের এক ব্যবসায়ীর দহরম-মহরম ছিল, যিনি আবার বামফ্রন্টের ওই জমানায় সরকারের শীর্ষ স্তরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বস্তুত, ওই ব্যবসায়ীর সুপারিশেই টিকিট পান সোহরাব। অবসরপ্রাপ্ত ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘এত প্রভাব বলেই সোহরাবের বিষয়ে আমাদের আর এগোতে বারণ করা হয় উপরহমহল থেকে।’’
কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর সেই সোহরাবই হয়ে যান তৃণমূল নেতা! আর এই জমানাতেও তিনি প্রভাবশালী বলে অভিযোগ উঠেছে।
তবে এই সব ব্যাপারে মহম্মদ সোহরাবের বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মোবাইলে বার বার ফোন করলেও সেটি ‘সুইচড অফ’। এসএমএসে করেও কোনও জবাব মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy