অনিশ্চিত: চেতলার একটি নৈশাবাসে গৃহহীনদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র
শহরের গৃহহীনদের জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে নৈশাবাস তৈরি করে দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের। কলকাতায় গৃহহীনদের যে সংখ্যা, সেই অনুযায়ী নৈশাবাস থাকার কথা ৭০০টি। কিন্তু বাস্তবে তিনটি চালু নৈশাবাসের পাশাপাশি এখনও পর্যন্ত মাত্র ১২টি পরিত্যক্ত ভবনকে নৈশাবাসের জন্য চিহ্নিত করতে পেরেছে কলকাতা পুরসভা। প্রসঙ্গত, নৈশাবাস তৈরি নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে বলে এর আগে পুরসভাকে একাধিক বার শীর্ষ আদালতের ভর্ৎসনার মুখে প়ড়তে হয়েছে। ফলে এখন নৈশাবাস তৈরি নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন পুরকর্তাদের একাংশ।
বর্তমানে গ্যালিফ স্ট্রিট, চেতলা হাট রোড, গৌরীবাড়ি লেন ও নর্দার্ন পার্কে চারটি নৈশাবাস রয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এর মধ্যে গৌরীবাড়ি লেনের নৈশাবাসটি আবার বন্ধ হয়ে রয়েছে। রাজা মণীন্দ্র রোডে আর একটি নৈশাবাস তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলেও সেটি কারা চালাবে, সেই জটিলতায় এখনও তা চালু করা যায়নি। ১২২ নম্বর ওয়ার্ডেও একটি নৈশাবাস তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
পুরসভা সূত্রের খবর, এ মুহূর্তে কলকাতায় গৃহহীনের সংখ্যা ৬৯ হাজার ৭৬৮। এখন প্রতিটি নৈশাবাসে অন্তত ১০০ জন গৃহহীন মানুষের আশ্রয় পাওয়ার কথা। সেই হিসেবে এ শহরে এই মুহূর্তে ৭০০টি নৈশাবাসের প্রয়োজন। অতীতে শীর্ষ আদালতের তরফে নৈশাবাস সংক্রান্ত যে কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, তাদের তরফে বলা হয়েছিল, এক জন মানুষের থাকার জন্য অন্তত ৫০ বর্গফুট জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই হিসেবে ৭০ হাজার গৃহহীন মানুষের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৩৫ লক্ষ বর্গফুট জায়গা, যা প্রায় ২০০ বিঘে জমির সমান! কিন্তু অত পরিমাণ জমি পাওয়া সম্ভব নয় বলেই আপাতত পুরসভা বিভিন্ন দফতরের পরিত্যক্ত ভবনের দিকে নজর দিচ্ছে। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা।
কারণ, যে ১২টি পরিত্যক্ত ভবন এ পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলিতে আদৌ নৈশাবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান পুরসভা। কারণ, ওই ভবনগুলি শিক্ষা দফতরের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরের থেকে এখনও কোনও অনুমতি পাওয়া যায়নি বলেই পুরসভা সূত্রের খবর। এ দিকে, শীর্ষ আদালতের নিয়োগ করা কমিটি কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেছে, আগামী ২০২২ সালের মধ্যেই নৈশাবাস নির্মাণ নিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
পরিত্যক্ত সরকারি ভবনের পাশাপাশি চিহ্নিত করা জমিতেও নৈশাবাস করা সম্ভব কি না, তা জানে না পুরসভা। ফলে পুরো বিষয়টিতে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলেই মনে করছে পুর প্রশাসনের একাংশ। যেমন ১২, ৩৪, ৩৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড়ে সেচ দফতর ও জল পরিবহণ দফতরের কয়েকটি জমি যৌথ পরিদর্শনে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দফতরের থেকে এখনও ছাড়পত্র পাওয়া যায়নি। আবার ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডে যে দু’টি পরিত্যক্ত ভবন পুরসভা চিহ্নিত করেছিল, পুরকর্তারা জানতেন, সে দু’টি কেএমডিএ-র। কিন্তু কেএমডিএ জানিয়ে দিয়েছে, ওই ভবন দু’টি তাদের নয়। তা হলে কাদের? আপাতত সেই খোঁজ চালাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কেআইটি-র কাছ থেকে সূর্য সেন স্ট্রিটের একটি জমি নিয়ে তাতে নৈশাবাস তৈরি করা যায় কি না, আলোচনা চলছে তা নিয়েও। কিন্তু এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। শুধুমাত্র ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড ও গার্ডেনরিচে পুরসভার নিজস্ব যে দু’টি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে, শুধুমাত্র সেগুলিতেই কাজ এগোতে পারে বলে মনে করছেন পুরকর্তারা। এর পাশাপাশি লকগেট এলাকায় একটি জমি দেওয়ার জন্য এইচআরবিসি নীতিগত ভাবে সম্মত হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রের খবর।
এই সব ক’টি উদ্যোগ যদি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়, তার পরেও প্রায় ৬৮৫টির মতো নৈশাবাসের জায়গা চাই বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। নৈশাবাস তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতরের মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘জমি, পরিত্যক্ত ভবন চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। ডিপিআর তৈরির কাজও শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy