Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

অধ্যক্ষের ঘরে শূন্য চেয়ারেই নির্মল উপস্থিতি

শাসক দল তৃণমূলের চিকিৎসক বিধায়ক নির্মলবাবু হাসপাতালের রোগী-কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান।

কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ আশিস বসুর পাশেই সবুজ তোয়ালে মোড়া নির্মল মাজির চেয়ার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ আশিস বসুর পাশেই সবুজ তোয়ালে মোড়া নির্মল মাজির চেয়ার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪৯
Share: Save:

অভিযোগ, তাঁর নামে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অনেক কর্তাই কম্পমান। তিনি হাসপাতালে না গেলেও অধ্যক্ষের চেয়ারের পাশেই থাকা তাঁর শূন্য আসনখানিও যেন তাঁর উপস্থিতি জানান দেয় প্রতি মুহূর্তে। তাই বিতর্ক হলেও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষের ঘরে তাঁর চেয়ারের পাশেই নির্মল মাজির চেয়ার বহাল তবিয়তে বিরাজমান। চিকিৎসকদের একাংশ বলেন, সে চেয়ার সরায় এমন সাধ্য কার। ঘটনাচক্রে চেয়ারটি আবার সবুজ রঙের তোয়ালে দিয়ে মোড়া।

শাসক দল তৃণমূলের চিকিৎসক বিধায়ক নির্মলবাবু হাসপাতালের রোগী-কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান। অধ্যক্ষের চেয়ারের পাশেই রাখা নির্মলবাবুর চেয়ার। ঘরে ঢুকলে মনে হবে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দু’জন অধ্যক্ষ। বর্তমানে অধ্যক্ষের চেয়ারটিতে বসেন কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ আশিস বসু। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, নির্মলবাবু হাসপাতালে এলে ওই চেয়ারটিতেই বসেন। এমনও অভিযোগ, যে নির্মলবাবু হাসপাতালে এলে অধ্যক্ষের ঘরটি কার্যত রোগী-কল্যাণ সমিতির ঘরে পরিণত হয়ে যায়। এমনকি নির্মলবাবুর পরিচিত রোগীকে দেখতে ওই ঘরেই ছুটতে হয় কোনও কোনও বিভাগীয় প্রধানকেও। নির্মলবাবু উপস্থিত থাকলে হাসপাতালের অধ্যক্ষও বাধ্য হন নির্মলবাবুর সামনেই হাসপাতালের প্রশাসনিক কাজকর্ম করতে।

নির্মলবাবুর ব্যখ্যা, ‘‘লোকে অনেক কিছুই বলে। চেয়ারটা তো অনেক দিন ধরেই রয়েছে। আমার আলাদা ঘর নেই, তাই মেডিক্যালে গিয়ে ওখানেই বসি।’’ কিন্তু অধ্যক্ষের পদমর্যাদার পাশের চেয়ারে কি রোগী-কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বসতে পারেন? অন্য মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তো চেয়ারম্যানেরা অধ্যক্ষের উল্টোদিকের চেয়ারে বসে কথা বলেন। এই প্রশ্নের উত্তরে ফোন নামিয়ে রাখেন নির্মলবাবু।

এই ছবি শুধু কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই। এসএসকেএমের রোগী-কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সেখানকার কর্মীরা জানান, অরূপবাবু অধ্যক্ষের চেয়ার বা ঠিক পাশের চেয়ারে বসেন না।

এ ভাবে অধ্যক্ষের পাশের চেয়ারে বসা নিয়ে অরূপবাবুকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘‘এই সব বিতর্কে আমি নেই।’’

আরজিকরের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা শান্তনু সেনের কথায়, ‘‘অধ্যক্ষের চেয়ার বা তাঁর পাশে কোনও চেয়ারে বসিনি, বসবও না। উল্টো দিকে বসি।’’ সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী-কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তাপস রায়ের কথায়, ‘‘আমি তো ডাক্তার নই, তাই হয়তো অধ্যক্ষের চেয়ারে বা ঠিক তাঁর আসনের পাশে কোনও চেয়ারে বসতে ইতস্তত বোধ করি। নির্মল মাজি নিজে তো ডাক্তার, তাই হয়তো ওঁর অস্বস্তি হয় না।’’

হাসপাতালের এক প্রবীণ শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘সকলেরই চাকরির ভয় এবং প্রত্যন্ত প্রান্তে বদলির ভয়। তাই কার ঘাড়ে ক’টা মাথা রয়েছে যে নির্মল মাজির চেয়ার সরাবে।’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘এমন হচ্ছে বলে তো শুনিনি। খোঁজ নেব।’’ সোমবার মেডিক্যালের বর্তমান কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ আশিস বসুর কাছেও তাঁর পাশের ওই চেয়ারটি সম্বন্ধে জানতে চাওয়া হয়। তিনি শুধু বলেন,‘‘‘বহুকাল থেকেই চেয়ারটি আছে। আমি এসে আর সরাইনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE