Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আপনার চাপেই ছাত্রদের দাবি মানা হচ্ছিল না? নির্মল বললেন...

কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত থাকেন। তাঁদের মধ্যে বড় অংশই অবসরের দোরগাড়ায়। এক বিভাগীয় প্রধানের দাবি, তাঁরা ‘চাপে’ ছিলেন। আর এক জনের বক্তব্য, ‘‘কী করব? অবসরের দিন এগিয়ে আসছে। বড় শক্তির সঙ্গে লড়ব কী ভাবে?’’

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৩
Share: Save:

যাদবপুরের ছায়া কি কলকাতা মেডিক্যালেও?

যে সব চিকিৎসক কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে গত কয়েক দিন কার্যত নীরব ছিলেন, সোমবারের বৈঠকে তাঁরাই এক যোগে জানিয়ে দিলেন, হস্টেল বাসযোগ্য নয়। যে ভাবেই হোক, পড়ুয়াদের দাবি মেনে এই অচলাবস্থা ভাঙা হোক। প্রায় এমনই ঘটেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা সংক্রান্ত বিতর্কে। সেখানে যে শিক্ষকেরা গোড়ায় পড়ুয়াদের দাবির বিরোধিতা করেছিলেন, প্রবেশিকা ফেরার দিন বৈঠকে তাঁরাই ওই দাবিকে সমর্থন জানান। কেন হঠাৎ ওই পরিবর্তন, সে দিনও সেই প্রশ্ন সামনে এসেছিল। যেমন এ দিন এসেছে মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে।

কী হল মেডিক্যালে? কী ভাবে কাটল অচলাবস্থা? যে সিদ্ধান্ত এ দিন ঘোষণা হল, কেন তা আরও আগে ভাবা হল না?

কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত থাকেন। তাঁদের মধ্যে বড় অংশই অবসরের দোরগাড়ায়। এক বিভাগীয় প্রধানের দাবি, তাঁরা ‘চাপে’ ছিলেন। আর এক জনের বক্তব্য, ‘‘কী করব? অবসরের দিন এগিয়ে আসছে। বড় শক্তির সঙ্গে লড়ব কী ভাবে?’’

মেডিক্যালের অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্র অসুস্থ হয়ে এসএসকেএমে ভর্তি হওয়ার পরে কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ হন রামানুজ সিংহ। কিন্তু দিন দুয়েকের মধ্যেই তাঁকে সরিয়ে ওই পদে অস্থায়ীভাবে আনা হয় অশোক ভদ্রকে। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অশোকবাবু দায়িত্ব নিয়েই হস্টেল পরিদর্শন কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। স্থির করেন, প্রবীণ নন, অপেক্ষাকৃত নবীন সদস্যরা ওই কমিটিতে থাকবেন। নিউরো মেডিসিন বিভাগের প্রধান সন্দীপ পাল এবং ক্যানসার বিভাগের প্রধান শিবাশিস ভট্টাচার্যকে নিয়ে কমিটি গড়া হয়। স্থির হয়, তাঁরা হস্টেল পরিদর্শন করে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবেন।

কমিটির সদস্যরা হস্টেল পরিদর্শনের পরে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেননি। কিন্তু সোমবার সকাল ১০টায় কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে যখন তাঁদের কাছে হস্টেলের পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়, তখন তাঁরা সরাসরি জানিয়ে দেন, অবস্থা ভয়াবহ। পড়ুয়াদের ক্ষোভ অযৌক্তিক নয়। দুই হস্টেল সুপার এর বিরোধিতা করলেও বরিষ্ঠ বিভাগীয় প্রধানেরা, যাঁরা আগে চুপ করে থাকতেন, তাঁরাও এ দিন একযোগে কমিটির বক্তব্যে সম্মতি জানান। কলেজ কাউন্সিল সূত্রের খবর, এর পরে অশোকবাবু বলেন, কলেজ কাউন্সিলই সর্বোচ্চ কমিটি। তারা যা বলবে, সেটাই চূড়ান্ত। তারা হস্টেলের পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে স্বীকার করার করার পরেও যদি দাবি মানা না হয়, তা হলে বড় খেসারত দিতে হবে। একে একে প্রশাসনিক স্তরে কয়েকটি ফোন করেন তিনি। জানিয়ে দেন, কলেজ কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত না মানলে এর পরে তাঁরা আর কোনও দায়িত্ব নিতে পারবেন না।

মেডিক্যালের সব স্তরের কর্মীরাই স্বীকার করেছেন, এ দিনের কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকই বিষয়টির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। নিয়ম বহির্ভূতভাবেই এ দিনের বৈঠকে ছাত্রদের প্রতিনিধি, হাসপাতালের ডেপুটি সুপার, সহকারি সুপার, পূর্ত দফতরের প্রতিনিধিদের ডেকে মতামত নেওয়া হয়। এক শিক্ষক-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘অপেক্ষাকৃত নবীনদের নিয়ে হস্টেল পরিদর্শনের ব্যবস্থা এবং এ দিন কলেজ কাউন্সিলের বিশেষ বৈঠক, এ দু’টিই হল কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষের মাস্টারস্ট্রোক। এতেই মো়ড় ঘুরেছে।’’

অশোকবাবুকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য ‘কলেজের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন। সে-ই যখন মানলেন, তখন আরও আগে মানলে বিষয়টি এ ভাবে হাতের বাইরে যেত না। এক বিভাগীয় প্রধান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘নিজেদের বিবেকের কাছে প্রতি নিয়ত জবাবদিহি করতে হচ্ছিল। এর পরেও যদি ছাত্রদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলতাম, তা হলে মুখ তুলে আর ওদের সামনে দাঁড়াতে পারতাম না।’’

গোটা ঘটনায় ফের জড়িয়েছে নির্মল মাজির নাম। মেডিক্যালের চিকিৎসকদের বড় অংশ অভিযোগ করেছেন, অনশন শুরুর পরে নির্মলবাবু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠরাই চিকিৎসকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন। কোনও ভাবেই যাতে পড়ুয়াদের দাবি না মানা হয়, সে ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন তাঁরা। নির্মলবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের মধ্যেই সদিচ্ছা ছিল না। তা ছাড়া, আমি কী করেছি? যা করার তো স্বাস্থ্য ভবন করছে, সরকার করছে।’’

মেডিক্যালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান নির্মলবাবুকে কি তা হলে এত বড় ঘটনায় ঢুকতেই দেয়নি স্বাস্থ্য প্রশাসন? এ বার উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘‘কে বলেছে দায়িত্ব ছিল না? ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিভাগীয় প্রধানদের ফোন করেছি। আমাকে ছাড়া ওখানে কিছুই হয় না।’’ বিভাগীয় প্রধানদের ফোন করেছেন কেন? বিভাগীয় প্রধানদের অনেকেই তো তাঁদের মুখ বন্ধ রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ফোনের কথা স্বীকার করলে কার্যত সেই অভিযোগকে মেনে নেওয়া হচ্ছে না কি? নির্মলের জবাব, ‘‘রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের বৈঠক নিয়ে ব্যস্ত। এত দিকে মাথা দিতে পারছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmal Maji Hunger Strike Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE