ফাইল চিত্র।
অটো-দৌরাত্ম্যের অভিযোগ জানানোর বাক্স বসানো হচ্ছে না রাস্তার মোড়ে মোড়ে। নিজের বাতলানো দাওয়াই থেকে নিজেই পিছিয়ে এলেন রাজ্যের ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। বুধবার তিনি জানিয়েছেন, অটোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে অভিযোগকারীকে থানাতেই যেতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযোগ জানানোর বাক্স থাকবে। তবে তা থানার গায়ে। সেখানে শুধু অটো নয়, সব বিষয়েই অভিযোগ জানানো যাবে!’’
অটো-দৌরাত্ম্য নিয়ে সম্প্রতি একাধিক বার জনরোষের মুখে পড়েছে প্রশাসন। উল্টোডাঙা-জোড়াবাগান, উল্টোডাঙা-করুণাময়ী, টালিগঞ্জ-গড়িয়া, গড়িয়া-যাদবপুর, তারাতলা-জোকা-সহ কিছু রুটে প্রশাসনিক নির্দেশিকা ছাড়া ইচ্ছেমতো ভাড়াবৃদ্ধির অভিযোগ ওঠে। চাহিদা মতো ভাড়া না পেয়ে যাত্রী-নিগ্রহেরও অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি উল্টোডাঙা-সল্টলেক রুটে অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়া নিয়ে দুর্ব্যবহারের অভিযোগে চালকদের সঙ্গে যাত্রীদের বচসা বাধে। প্রতিবাদে উল্টোডাঙায় বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। তখনই অটো ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাধনবাবু ঘোষণা করেন, রাস্তায় অভিযোগ জানানোর বাক্স বসানো হবে। সেখানে অভিযোগ পেলেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে। ক্রেতা-সুরক্ষা দফতর থেকে গড়িয়াহাট, সল্টলেক ও উল্টোডাঙায় ‘অভিযোগ বাক্স’ রাখার পরিকল্পনা হয়।
এর পরে কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস। গত মঙ্গলবারই উল্টোডাঙায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন যাত্রীরা। পুজোর আগে অটোর ‘দাদাগিরি’ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অভিযোগ জানানোর বাক্সের দেখা মেলেনি। মন্ত্রীর মন্তব্যের বাস্তবতা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। এ দিন অবশ্য সাধনবাবু নিজেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর ভাবনা বাস্তবায়িত হওয়ার নয়। তিনি বলেন, ‘‘ভেবে দেখলাম, থানার গায়ে বাক্স লাগালেই সুবিধা হবে। রাস্তায় বাক্স বসালে কেউ ভেঙে দিতে পারে।’’ মন্ত্রীর এখনকার ভাবনা অনুযায়ী, সরকারি কর্মীরা ওই সব বাক্স থেকে অভিযোগপত্র তুলে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেবেন। ‘‘কিছু অভিযোগপত্র নবান্নেও পাঠানো যেতে পারে,’’ বললেন তিনি।
যদিও মন্ত্রীর এই পিছিয়ে আসাকে প্রশাসনের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখছেন অনেকে। অটো ইউনিয়নগুলির উপরে সরকারের কোনও কর্তৃত্ব যে নেই, এতে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে বলে মত বিরোধীদের। কংগ্রেস নেতা প্রকাশ উপাধ্যায় বললেন, ‘‘সরকারই মানুষকে বিপদে ফেলছে। অটো ইউনিয়নগুলিতে সব তৃণমূলের লোক। ওঁদের সামলানোর ক্ষমতা এই সরকারের নেই। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে।’’ সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম আবার বলছেন, ‘‘মন্ত্রী হয়তো থানার গেটের বাইরে প্রণামীর বাক্স রাখার কথা বলছেন। তা ছাড়া, ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী পরিবহণ দফতরের কথা বলে দিচ্ছেন। এতেই বোঝা যায়, রাজ্যের প্রশাসন কতটা দুর্বল।’’ বিরোধীরা যা-ই বলুন, মন্ত্রীর আশা, ‘‘সমস্যা মিটে যাবে। থানার গায়ের একটি বাক্সেই সব কাজ হয়ে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy