Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি-ঘরের ক্ষতি যাচাইয়ের তথ্যভাণ্ডার নেই কলকাতায়

শুধু কড়া নিয়ম নয়, ভূমিকম্পের মতো বিপদে বাড়ি-ঘর বাঁচানোর প্রস্তুতি নিতে জরুরি সেগুলির ধরন নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্যভাণ্ডার। সেই তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ কলকাতায় শুরুই হয়নি। শহরের কত শতাংশ বাড়ি ভূমিকম্পে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এই তথ্য দিল্লি, বেঙ্গালুরু, গুয়াহাটি, গ্যাংটক শহরের জানা। কলকাতার তথ্যভাণ্ডার এখনও শূন্য। ফলে রিখটার স্কেলে এই শহর তীব্র ভূকম্পের মুখে পড়লে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানো ছাড়া কোনও উপায় নেই।

গার্গী গুহঠাকুরতা
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

শুধু কড়া নিয়ম নয়, ভূমিকম্পের মতো বিপদে বাড়ি-ঘর বাঁচানোর প্রস্তুতি নিতে জরুরি সেগুলির ধরন নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্যভাণ্ডার। সেই তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ কলকাতায় শুরুই হয়নি।

শহরের কত শতাংশ বাড়ি ভূমিকম্পে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এই তথ্য দিল্লি, বেঙ্গালুরু, গুয়াহাটি, গ্যাংটক শহরের জানা। কলকাতার তথ্যভাণ্ডার এখনও শূন্য। ফলে রিখটার স্কেলে এই শহর তীব্র ভূকম্পের মুখে পড়লে অন্ধকারে হাতড়ে বেড়ানো ছাড়া কোনও উপায় নেই। শনিবারের তীব্র ভূমিকম্পের পরে এই তথ্যই উঠে এল বিশেষজ্ঞদের মুখে।

সাধারণ ভাবে ‘সিজমিক জোন’ বা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার জন্য একটা মাপকাঠি রয়েছে। চ্যুতির পরিমাণের হিসেবে যার মাত্রা ‘জোন-১’ থেকে সর্বোচ্চ ‘জোন-৬’ পর্যন্ত ভাগ করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ এলাকাই ‘জোন-৩’-এর আওতায় পড়ে। অর্থাৎ, ঝুঁকির পরিমাণ যেখানে মাঝারি। উপকূলবর্তী এলাকাগুলি ‘জোন-৪’-এর মধ্যে পড়ে।

এই ঝুঁকির মোকাবিলায় বাড়ি-সহ বিভিন্ন নির্মাণের সার্বিক মূল্যায়ন জরুরি। অর্থাৎ, ভূমিকম্পের সময়ে সেগুলির উপর কতটা প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়মিত যাচাই করা হয় সেই মূল্যায়নে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (শিবপুর)-র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওই মুল্যায়ন করেই বাড়ি ও অন্যান্য নির্মাণের ‘সিজমিক রেটিং’ করা হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই গড়ে ওঠে একটি শহরের নির্মাণ কাজের তথ্যভাণ্ডার।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ওই তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট শহরের যে-সব বাড়ি বা পরিকাঠামো বিপজ্জনক, সেগুলির ত্রুটি সারাই করা অনেক সহজতর হয়।

তথ্যভাণ্ডারের পাশাপশি ভূমিকম্প সংক্রান্ত নির্মাণের নিয়মও মেনে চলা সমান জরুরি। ভূমিকম্পের ধাক্কা সামলাতে নির্মাণের ক্ষেত্রে কী কী করণীয় তা ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’-এ স্পষ্ট বলা আছে। সেই নিয়মকানুন মেনে চললে বিপদের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক দীপঙ্কর চক্রবর্তীর বক্তব্য, অনেক সময়েই দেখা যায় যে ছোট ও সাধারণ (একতলা বা দু’তলা) বাড়ির নকশা তৈরির সময়ে এই ভূমিকম্পের বিষয়টিই সে ভাবে গুরুত্ব পায় না। হয় নকশায় সেটা বাদ পড়ে যায়, নয়তো ভুলচুক থেকেই যায়। তবে বহুতলের ক্ষেত্রে এই নিয়ম তুলনায় অনেক বেশি প্রাধান্য পায় বলে তাঁর মত। যেমন বাড়ি তৈরির সময়ে জমির মাটি পরীক্ষা (সয়েল টেস্টিং) করার কথা। বহুতলের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম যতটা মানা হয়, ছোট বাড়ির ক্ষেত্রে আদৌ কতটা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন থেমে থাকে না, তেমনই ভূমিকম্প সংক্রান্ত ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ড কোড ১৮৯৩-ও মাঝে মধ্যে বদলেছে। ১৯৮৪ সালে যে নিয়ম ছিল, তা আরও অনেক কড়া হয় ২০০২ সালে। সে ক্ষেত্রে তার আগে তৈরি করা বাড়িতে ভূমিকম্পের প্রতিরোধ ব্যবস্থা তেমন না-ও থাকতে পারে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার পৃথ্বীরাজ ঘোষ ও দীপঙ্করবাবুর দাবি, এতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। কারণ সিজমিক রেট্রোফিটিং নামে এক প্রযুক্তির সাহায্যে সেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছুটা নেওয়া যায়। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য।

বহুতলের ক্ষেত্রে এই নিয়মের কড়াকড়ির কথা জানিয়েছেন আবাসন নির্মাতারাও। মার্লিন গোষ্ঠীর সুশীল মোহতা জানান, ‘সিজমিক জোন-৩’-এর নিয়ম মেনেই এখানে নির্মাণকাজ চলে। তিনি বলেন, ‘‘এখানকার মাটির চরিত্র নির্মাণের পক্ষে সহায়ক। ভিত তৈরির ক্ষেত্রে অনেকটা গভীরে যাওয়া যায়। ফলে ভিত মজবুত করা সম্ভব।’’ উদাহরণ স্বরূপ তিনি জানান, দক্ষিণ কলকাতার সাউথ-সিটি প্রকল্পের ভিত ৪৫ মিটার মাটির গভীর পর্যন্ত করা হয়েছে, যা বস্তুত ১৫ তলা বাড়ির সমান।

একই সুরে জৈন গোষ্ঠীর ঋষি জৈন জানান, শিলিগুড়ির সর্বোচ্চ বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রেও ভূমিকম্প সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে চলা হয়েছে। কারণ তাঁর দাবি, সব বড় নির্মাতা গোষ্ঠীই এই নিয়ম মেনে চলবে। না হলে এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে বাড়ির সঙ্গে গুঁড়িয়ে যাবে সংস্থার ভাবমূর্তি।

নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই-এর দাবি, ভূমিকম্প নিয়ে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে ক্রেতাদের মধ্যেও। বাড়ি কেনার সময়ে তাঁরা এখন এ ধরনের বিষয় খতিয়ে দেখে নিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE