শহিদ মিনার ময়দানে বাজি-বাজার ঘুরে দেখলেন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার।
৯০ ডেসিবেলের গণ্ডি পেরনোর তালিকায় ৯০টি বাজিকে চিহ্নিত করল পুলিশ। পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় সব শব্দবাজিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার চার দিন পরেই এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করল লালবাজার। সোমবার কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের স্বাক্ষর করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বাজির নাম ধরে ধরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তালিকাটি অবশ্য শুধুই শব্দবাজির নয়। যে সব আতসবাজি বেশি শব্দ করে ফাটে বা অন্যান্য কারণে বিপজ্জনক বলে পরিচিত, নিষিদ্ধ হয়েছে সে সবও। পুলিশের তালিকার বাইরে আর কোনও শব্দবাজি থাকলে, তার বিক্রি এবং ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পুলিশ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে ৯০টি বাজির নাম উল্লেখ করার পরে ৯১ নম্বরে বলা হয়েছে: এর বাইরেও ৯০ ডেসিবেল শব্দের যে কোনও বাজি নিষিদ্ধ। অর্থাৎ, অন্য নামে বা মোড়কে ওই ৯০টির বাইরেও শব্দবাজির ব্যবহার রুখতে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞেরা বরাবর বলে আসছেন, ৯০ ডেসিবেল শব্দসীমার মধ্যে খেলনা পিস্তলে ফাটানোর ক্যাপ ছাড়া অন্য কোনও শব্দবাজি হওয়া কার্যত সম্ভব নয়। অথচ গত মঙ্গলবার, ১৮ অক্টোবর চকলেট বোমা, দোদমার মতো ‘কুখ্যাত’ শব্দবাজিকে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এক রকম ছাড়পত্রই দিয়ে দিয়েছিল। শেষমেশ দু’দিন পরে, গত ২০ তারিখ পরিবেশমন্ত্রী যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সব শব্দবাজিকে রাজ্যে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন।
এ দিন কলকাতা পুলিশের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা নিষিদ্ধ ৯০টি বাজির তালিকায় ১৫ নম্বরে চকলেট বোমা আর ২৪ নম্বরে দোদমা রয়েছে। চেন ক্র্যাকার, কালীপটকা, ধানি পটকার মতো শব্দবাজিও নিষিদ্ধ। তবে শুধু শব্দবাজি নয়, উড়ন তুবড়ি, ছুচোবাজি, রকেট বোমার মতো অন্য কারণে বিপজ্জক আতসবাজিও নিষিদ্ধের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে অন্যান্য বছরের মতো। নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে আলো তৈরি করে জোরে ফাটা গোলমাল টোয়েন্টি ফাইভ শটস, কিরণ থার্টি শটস, ওয়ে বাবলি, সিম্ফনি ফিফটি, ম্যাজিক পাইপ, স্কাই ম্যাজিক। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘তালিকায় থাকা ৯০টি বাজির মধ্যে অধিকাংশই শব্দবাজি। সেই সঙ্গে কিছু বিপজ্জনক বাজিও নিষিদ্ধ।’’ পুলিশের এই তালিকা তৈরির কথা শুনে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক, বর্তমানে পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের যদিও বক্তব্য, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা কঠোর হয়েছেন ঠিক কথা। সেই জন্য তাঁদের অভিনন্দন। তবে এই সব পদক্ষেপ আর একটু আগে করা উচিত ছিল। এখন দেরি হয়ে গিয়েছে।’’
লালবাজার সূত্রে খবর, ১৫ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার কেজি-রও বেশি নিষিদ্ধ বাজি আটক করেছে কলকাতা পুলিশ, গ্রেফতার করা হয়েছে চার জনকে ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিন বিকেলেও দক্ষিণ শহরতলির শব্দবাজির আঁতুড়ঘর চম্পাহাটি ও চণ্ডীপুর এলাকা থেকে চকলেট ও দোদমা বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। এসডিপিও বারুইপুর অর্ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী ওই সব এলাকা থেকে ১৭ হাজার চকলেট বোমা আটক করেছে। নিষিদ্ধ শব্দবাজি বিক্রির অভিযোগে দু’জন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে আটক নিষিদ্ধ বাজি।
সারা বাংলা আতসবাজি ব্যবসায়ী সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলেন, ‘‘প্রস্তুতকারকদের ঘর থেকে ৮০টন চকলেট বোমা ব্যবসায়ীদের কাছে চলে গিয়েছে। তার ৮০ শতাংশ আবার সাধারণ ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।’’ বাবলাবাবুর দাবি, ‘‘প্রস্তুতকারকদের কাছে প্রায় ২০ টন চকলেট বোমা আটকে দিয়েছি। ওগুলি বিক্রি হবে না। যেহেতু সরকার ঘোষণা করেছে, পুলিশ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এ ব্যাপারে মামলা জাতীয় পরিবেশ আদালতে বিচারাধীন বলে আমরা বিতর্ক তৈরি করব না, সরকারের সঙ্গে সংঘাতেও যাব না।’’ দীপাবলির তিন দিন পরে, ১ নভেম্বর মামলার শুনানি।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার নিজে সামবার শহিদ মিনার সংলগ্ন ময়দানে বাজির বাজার পরিদর্শন করেন। বেহালা, কালিকাপুর, টালা ও বিজয়গড়ের বাজি বাজারগুলি ঘুরে দেখেন লালবাজারের অন্য শীর্ষকর্তারা।
কালীপুজো ও দীপাবলির রাতে শহরের বড় আবাসনগুলিতে যাতে শব্দবাজি ফাটানো না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে ও প্রচার চালাতে বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন সিপি। সোমবার আলিপুর বডিগার্ডস লাইনে কলকাতা পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে প্রস্তুতি বৈঠক করেন তিনি। এই ব্যাপারে ১০০টিরও বেশি আবাসনের প্রতিনিধিদের নিয়ে পর্ষদ রবিবার বৈঠক করেছে।
বিধাননগরের ডিসি (সদর) নিশাদ পারভেজ জানান, সল্টলেকে বাজি বিক্রির স্থায়ী কোনও বাজার নেই, তাই বিভিন্ন প্রবেশপথে নজরদারি ও গাড়ি পরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে শব্দবাজির সন্ধানে। দীপাবলির সময়ে যে কোনও রকম নাশকতা ঠেকানোর ব্যাপারেও বাহিনীকে সর্তক করে দিয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার।
এ দিনই নবান্নে দমকলের একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কালীপুজোর আগে কোনও দুর্যোগ ঘটুক, চাই না। এ ছাড়া, পুজোয় যে বাজি পোড়ানো হয়, তাতে যেন কারও ক্ষতি না হয়।’’ কালীপুজোর রাতে যদিও প্রতি বারই বহু অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তেমন কিছু ঘটলে যাতে দমকলের গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারে, সেই জন্য পাইলট কার রাখবে পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, শহরে দমকলের দু’টি বড় অফিসের সামনে থাকবে পুলিশের দু’টি পাইলট কার। একটি দমকলের সদর দফতর মির্জা গালিব স্ট্রিটে, অন্যটি চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে দমকলের অন্য অফিসে। এ ছাড়াও শহরের ন’টি থানার সামনে রাখা থাকবে পাইলট ভ্যান। যাদের কাজ হবে, ওই এলাকায় আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি যাতে বিনা বাধায় পৌঁছয়, সেটা নিশ্চিত করা।
সোমবার ছবিগুলি তুলেছেন সুদীপ্ত ভৌমিক এবং শশাঙ্ক মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy