Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এনআরএস থেকে সরছে চক্ষু বিভাগ, ক্ষুব্ধ চিকিৎসকেরা

বিভাগীয় চিকিৎসকদের দাবি, অধ্যক্ষ জবরদস্তি মৌলালি মোড়ে ‘স্টুডেন্টস হেলথ হোম’ ভবনে ওই বিভাগ সরাচ্ছেন।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২২
Share: Save:

ভবন সংস্কারের কাজে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মূল চত্বর থেকে প্রায় তিন বছরের জন্য সরছে চক্ষু বিভাগ। এ নিয়ে বিভাগীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতান্তর চরমে উঠেছে বলে অভিযোগ। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি অংশের মতে, এর জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে পরিষেবা।

বিভাগীয় চিকিৎসকদের দাবি, অধ্যক্ষ জবরদস্তি মৌলালি মোড়ে ‘স্টুডেন্টস হেলথ হোম’ ভবনে ওই বিভাগ সরাচ্ছেন। এতে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন, ছানি, রেটিনার অস্ত্রোপচার, সদ্যোজাতদের চোখের অস্ত্রোপচার এবং জরুরি পরিষেবা ধাক্কা খাবে। নতুন ভবনে জায়গা সঙ্কুলানের জন্য ছাত্রদের ক্লাস নেওয়া কঠিন হবে বলে তাঁদের মত।

এমনকি প্রায় ৭০০ বর্গমিটারের বেশি জায়গা কমবে। সেখানে মেরেকেটে চারটি ওটি টেবিল রাখা যাবে, আগে যেখানে সাতটি ওটি টেবিল থাকত। নতুন ভবনে অনেক যন্ত্র বসানো যাবে না, শয্যা ঠাসাঠাসি করে রাখতে হবে। ছোট হবে লাইব্রেরি এবং সেমিনার রুম। এ সবের ফলে পরিকাঠামোর অভাব দেখিয়ে মেডিক্যাল কাউন্সিল স্নাতকোত্তরের পঠনপাঠন বন্ধ করে দিতে পারে বলে চিকিৎসকদের আশঙ্কা। বিস্তারিত জানিয়ে চিকিৎসকেরা অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য ভবনে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

নীলরতনে জীর্ণ ইউএনবি ভবনের ভার কমাতে উপরের তলাটি ভাঙার পরামর্শ দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। এর পরেই সেখান থেকে একটি বিভাগ সরানোর প্রয়োজন হয়। চক্ষু বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মীদের দাবি, সাত-আট মাস ধরে হাসপাতালের একাধিক বৈঠকে ঠিক হয়, অস্ত্রোপচার হয় না এমন বিভাগ যেমন, নিউরো মেডিসিন, নেফ্রোলজি অথবা পেডিয়াট্রিক মেডিসিনের একটিকে সরানো হবে। কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে একমত হয়। তাঁদের অভিযোগ, তা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ কী ভাবে স্বাস্থ্য ভবন থেকে চক্ষু বিভাগ সরানোর নির্দেশ করিয়ে আনেন?

বিভাগীয় এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘‘রিজিয়োন্যাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’-র (আরআইও) থেকেও সম্প্রতি কর্নিয়া প্রতিস্থাপন ও অস্ত্রোপচারে এনআরএস ভাল কাজ করছিল। এখানকার অতুল বল্লভ আইব্যাঙ্কে কর্নিয়া গ্রাফ্টিং করে অনেক রোগীর দৃষ্টিশক্তি ফেরানো হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সে সব পরিকাঠামো নষ্ট হয়ে যাবে।’’ অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অনেক আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, একমাত্র চক্ষু বিভাগকে সরানো যায়। কারণ, পেডিয়াট্রিকের সার্জারি ও মেডিসিন, নিউরোর সার্জারি ও মেডিসিন এবং নেফ্রোলজি ও ইউরোলজিকে একসঙ্গে থাকতে হবে।’’

চক্ষু বিভাগের প্রধান সমীর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বছরে যত রোগীকে সুস্থ করেন এই বিভাগের চিকিৎসকেরা, নতুন ভবনে গেলে তার অর্ধেকও হবে না।’’ বিভাগ সূত্রের খবর, রেটিনার বিভিন্ন সমস্যার মেরামতে নীলরতনে বছরে একশোর বেশি অস্ত্রোপচার হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে এ সব হত, এক মাস ধরে তা খারাপ হয়ে রয়েছে। নতুন যন্ত্র কিনতে স্বাস্থ্য ভবন ৪৫ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছে। তবু কেনা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল অধ্যক্ষের দিকে। কারণ, নতুন ভবনে ওই যন্ত্র বসানোর জায়গা নেই! অধ্যক্ষের বক্তব্য, ‘‘পরে ওই যন্ত্র কিনে চোখের বহির্বিভাগে বসানো হবে।’’

যা শুনে চিকিৎসকদের প্রশ্ন, ‘‘ওখানে রাখার অর্থ কী? আমরা কি বহির্বিভাগে অস্ত্রোপচার করব?’’ তাঁদের আরও প্রশ্ন, মূল জরুরি বিভাগ থাকবে নীলরতনে, অথচ চোখের জরুরি বিভাগ মৌলালি মোড়ে? আশঙ্কাজনক রোগীকে নিয়ে পরিজনেরা ছুটবেন? ট্রলি না পেলে কী হবে? অস্ত্রোপচারের পরে রোগী শকে গেলে অ্যানাস্থেটিস্টকে মূল ভবন থেকে আসতে হবে, তাতে রোগীর অবস্থা খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শুধু তাই নয়, অনেক সময়েই সদ্যোজাতদের জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হয়। স্টুডেন্টস হেলথ হোমের সামনে গাড়ি দাঁড়ানোর জায়গা নেই, তবে মায়েরা সদ্যোজাতদের আনবেন কী ভাবে?

এত সমস্যা শুনেও অবশ্য অধ্যক্ষের আশ্বাস, ‘‘কোনও কিছুতেই সমস্যা হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student's Health Home NRS Hospital Eye Department
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE