Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

টানাপড়েনে মশার দাপট বেড়েই চলেছে বিধাননগরে

বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধাননগর পুরসভায় মেয়র পদে পরিবর্তনের সময়ে কয়েক মাস ধরে পরিষেবার গতি হয়েছিল শ্লথ। আবার উৎসবের মরসুমেও মশা নিয়ন্ত্রণের কাজের গতি কমেছে। ফলে মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকানো যায়নি।

বাড়ির পাশে এ ভাবেই আগাছায় ভরেছে ঝিল। বাগুইআটির অশ্বিনীনগরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বাড়ির পাশে এ ভাবেই আগাছায় ভরেছে ঝিল। বাগুইআটির অশ্বিনীনগরে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কাজল গুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

দেড় মাসে মশকবাহিনীর ঝড়ো ইনিংসে বিধাননগরে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজের সব হিসেব বদলে দিল। ইতিমধ্যে দুই মহিলার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত প্রায় ৯০০। বেসরকারি মতে আরও বেশি।

কিন্তু কেন এমন হল?

বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিধাননগর পুরসভায় মেয়র পদে পরিবর্তনের সময়ে কয়েক মাস ধরে পরিষেবার গতি হয়েছিল শ্লথ। আবার উৎসবের মরসুমেও মশা নিয়ন্ত্রণের কাজের গতি কমেছে। ফলে মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকানো যায়নি।

পুরকর্তাদের অবশ্য দাবি, মেয়র পরিবর্তনের সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজের কোনও যোগাযোগ নেই। তবে তাঁরা মানছেন পুজোর আগে ও পরে বৃষ্টি এবং উৎসবের মরসুমে কিছু দিনের ছুটির কারণে কাজের গতি কিছুটা কম ছিল। পুরকর্তাদের মতে, উৎসবের মরসুমে বিপুল পরিমাণে প্লাস্টিক, থার্মোকলের পাতা কিংবা যত্রতত্র আবর্জনা পড়েছে। তাতে বৃষ্টির জল জমে মশার বাড়বাড়ন্ত বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন কর্তৃপক্ষ।

প্রশ্ন উঠেছে, এর আগেও বিধাননগরে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। সে ক্ষেত্রে কি অতীত থেকে শিক্ষা নেয়নি পুর প্রশাসন?

পুরসভা সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে জ্বর এবং ডেঙ্গি মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩১০৫। ২০১৮ সালে সেই সংখ্যা কমে হয় ৯৭৮। এই বছরে অক্টোবর পর্যন্ত ইতিমধ্যে সেই সংখ্যা হয়েছে ৯০০। ফলে গত বারের থেকেও আক্রান্তের সংখ্যা এ বার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে প্রশাসনিক স্তরে।

পুরকর্তাদের দাবি, প্রতিটি ওয়ার্ডেই মশা নিয়ন্ত্রণে নির্দিষ্ট পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। বছরভর তথ্য সংগ্রহ ও সচেতনতার প্রচারের কাজ হয়। খালগুলিতে নৌকা নামিয়ে মশার তেল স্প্রে করা হয়েছে। জলাশয়ে গাপ্পি মাছও ছাড়া হয়েছে। ড্রোন ব্যবহার করে বিভিন্ন এলাকার ছবি তোলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় মেডিক্যাল ক্যাম্পও করা হয়েছে। মাইকে ঘোষণা থেকে শুরু করে লিফলেট এবং হোর্ডিং-ব্যানারেও প্রচার চালানো হয়েছিল বলে পুরসভার দাবি।

কিন্তু তাতেও মশার বংশবৃদ্ধি সামলানো গেল না কেন?

পুরসভার যুক্তি, মানুষ সচেতন হচ্ছেন না। পুরকর্তারা জানান, সম্প্রতি উদয়ন পল্লিতে এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। সেই বাড়িতেই পরিদর্শনে গিয়ে তিনটি পাত্র থেকে লার্ভা মিলেছে। এ ছাড়াও এলাকায় অনেক বাড়িতেই খোলা পাত্রে জল জমিয়ে রাখা, কচু কাছ, কলা গাছ না কাটা, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার প্রবণতা দেখা গিয়েছে। একই অবস্থা দেখা গিয়েছিল রাজারহাটের পার্থনগরী এলাকায়। সেখানেও এক মহিলার মৃত্যু হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, খাল, বিল, জলাশয় থেকে শুরু করে ফাঁকা মাঠ, ঝোপজঙ্গল সময়ে সাফ করা হচ্ছে না। যত্রতত্র ডাবের খোলা, টায়ার-টিউব, রঙের বালতি থেকে শুরু থার্মোকলের পাতা ফেলার প্রবণতা রুখতেও ব্যর্থ হয়েছে পুরসভা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জনমত তৈরির ক্ষেত্রে প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাব রয়েছে। ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখেই কড়া পদক্ষেপ নিতে সাহস দেখাচ্ছে না পুরসভা। যদিও প্রশাসনের পাল্টা দাবি, বছরভর লাগাতার প্রচার চলছে। উল্টে মশা নিয়ন্ত্রণের কাজে গেলে অনেক জায়গাতেই পুরকর্মীদের বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয় না।

বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ প্রণয় রায়ের দাবি, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটানো হয়েছে। বছরভর মশা নিয়ন্ত্রণ এবং সচেতনতার কাজ করা হচ্ছে। তিনি জানান, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাত্র ২৬৫ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সমস্যা দেখা দিয়েছে উৎসবের মরসুমেই। তবে সচেতনতার প্রচারে কাজ না হলে এ বার কড়া পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানান প্রণয়বাবু। ইতিমধ্যে ১০০টি বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে নোটিস পাঠিয়ে সতর্ক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Dengue Mosquito Bidhannagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE