Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শিশুকে মেয়াদ পেরনো ওষুধ, হুলুস্থুলু কামারহাটিতে

দেড় বছর আগেই তার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ অসুস্থ এক শিশুকে সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওযুধই খাওয়ানো হয়। বাড়িতে পড়ে থাকা ওষুধ ভুল করে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে এমন নয়। একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে, এক জন প্রশিক্ষিত নার্স ওই ওষুধ খাইয়েছেন। ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত নার্স-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মেয়াদ শেষ হয়েছে ডিসেম্বর, ২০১৩-য়।—নিজস্ব চিত্র।

মেয়াদ শেষ হয়েছে ডিসেম্বর, ২০১৩-য়।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৫ ১১:৪৫
Share: Save:

দেড় বছর আগেই তার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ অসুস্থ এক শিশুকে সেই মেয়াদ উত্তীর্ণ ওযুধই খাওয়ানো হয়। বাড়িতে পড়ে থাকা ওষুধ ভুল করে খাইয়ে দেওয়া হয়েছে এমন নয়। একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে, এক জন প্রশিক্ষিত নার্স ওই ওষুধ খাইয়েছেন। ঘটনার তদন্তে নেমে অভিযুক্ত নার্স-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার সকালে কামারহাটির ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় দীপ্তাংশু কোলে নামে তিন বছরের শিশুকে। তড়কা জ্বর, পায়খানা এবং বমির উপসর্গ নিয়ে তাকে সেখানে ভর্তি করেন শিশুটির মা শুভ্রা কোলে। দীপ্তাংশুর বাবা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। সারা দিন ধরে চিকিত্সা হওয়া সত্ত্বেও বিকেল পর্যন্ত ছেলের শারীরিক অবস্থার কোনও না হওয়ায় শুভ্রাদেবী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ওই দিন সন্ধ্যায় যাঁরা নার্সিংহোমে দীপ্তাংশুকে দেখতে গিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে তিনি সেই উদ্বেগের কথা জানান। সেই সময় তিনি এ কথাও জানান, ছেলেকে সকালে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ওষুধ খাইয়েছেন নার্স। ওষুধের প্যাকেটের গায়ে মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ দেখে সে কথা নার্সকে জানানোয় তিনি তা ছুড়ে ফেলে দেন ডাস্টবিনে। শুভ্রাদেবীর কাছে এ কথা শুনে তাঁর এক প্রতিবেশী ফেলে দেওয়া সেই ওষুধের প্যাকেটটি ডাস্টবিন তুলে আনেন। দেখা যায়, যে ওষুধটি দীপ্তাংশুকে খাওয়ানো হয়েছে তার মেয়াদ ২০১৩-র ডিসেম্বর মাসেই শেষ হয়ে গিয়েছে।


সিল করে দেওয়া হয়েছে সেই মেডিসিন স্টোর। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

এর পর নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে সে কথা জানানো হয়। যদিও তাঁরা অভিযোগ স্বীকার করতে চাননি। দু’পক্ষের ভেতর বচসা বাধে। ঘটনার জেরে ওই দিন গভীর রাত পর্যন্ত ওই নার্সিংহোমে গণ্ডগোল চলে। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এসে ওই নার্সিংহোমের মেডিসিন স্টোরে তল্লাশি চালায়। স্যালাইন-সহ বেশ কিছু মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ মেলে সেখানে। সেগুলি বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরে শিশুটিকে ওই এলাকার অন্য একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয়।

ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই শিশুটির পরিবারের তরফে আমাদের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ ওই নার্সিংহোমের মালিকের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। এই ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে অভিযুক্ত নার্স বাসন্তী মিত্র, নার্সিং হোমের দুই ফার্মাসিস্ট সুরজিত্ গুপ্ত এবং সোমনাথ পোদ্দারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ মজুত রাখা এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে তা বিক্রি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বেলঘরিয়া থানার তরফে এ দিন তাঁদের ব্যারাকপুর আদালতে হাজির করা হবে বলে সূত্রের খবর। তবে, নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। এরই মধ্যে এ দিন কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা এবং চেয়ারম্যান পারিষদ স্বাস্থ্য বিমল সাহা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ওই নার্সিংহোমে যাবেন বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

expired medicine police kamarhati agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE