Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মা উড়ালপুলের বাতিস্তম্ভে ধাক্কা, মৃত্যু প্রৌঢ়ের

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ তপনবাবু মোটরবাইক নিয়ে সায়েন্স সিটির দিক থেকে পার্ক সার্কাসের দিকে যাচ্ছিলেন। তপসিয়া মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি মা উড়ালপুলের ডান দিকের ডিভাইডারের বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারেন।

অঘটন: মা উড়ালপুলের এই অংশে (বাঁ দিকে) বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারায় বুধবার মৃত্যু হয় তপনকুমার দাসের। তাঁর বাইক (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

অঘটন: মা উড়ালপুলের এই অংশে (বাঁ দিকে) বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারায় বুধবার মৃত্যু হয় তপনকুমার দাসের। তাঁর বাইক (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪৬
Share: Save:

মা উড়ালপুল চালু হওয়ার পর থেকে সেখানে দুর্ঘটনার বিরাম নেই।

কখনও স্কুটি পিছলে, কখনও গাড়ি উল্টে, কখনও আবার চিনা মাঞ্জায় আহত হয়েছেন অনেকে। কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুও ঘটেছে। সেই তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন বুধবারের দুর্ঘটনা। এ দিন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরবাইক উল্টে যাওয়ায় মৃত্যু হল প্রৌঢ় চালকের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম তপনকুমার দাস (৬০)। তাঁর বাড়ি দমদমে।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ তপনবাবু মোটরবাইক নিয়ে সায়েন্স সিটির দিক থেকে পার্ক সার্কাসের দিকে যাচ্ছিলেন। তপসিয়া মোড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তিনি মা উড়ালপুলের ডান দিকের ডিভাইডারের বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, উড়ালপুলে বাঁক ঘুরতে গিয়ে পিছন থেকে কোনও গাড়ি বাইকটিকে আঘাত করায় তপনবাবু সম্ভবত নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। ধাক্কার চোটে রাস্তায় ছিটকে পড়েন তিনি। মাথায় থাকা হেলমেট প্রায় উড়ে গিয়ে বেশ কিছুটা দূরে পড়ে। সেটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার সূত্র ধরে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে প্রগতি ময়দান থানা। দুর্ঘটনার পরে বেশ কিছু ক্ষণ উড়ালপুলে পড়ে ছিল তপনবাবুর দেহ। যার জেরে ওই রাস্তায় যানজট হয়। খবর পেয়ে তিলজলা ট্র্যাফিক গার্ডের পুলিশ এসে ওই প্রৌঢ়কে উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

২০১৫ সালের ৯ অগস্ট উদ্বোধনের পর থেকে কার্যত পরপর দুর্ঘটনা ঘটেছে মা উড়ালপুলে। কখনও স্কুটি পিছলে মৃত্যু হয়েছে তরুণীর, কখনও বাঁকের মুখে গাড়ি উল্টে আহত হয়েছেন চালক, কখনও আবার ঘুড়ির মাঞ্জায় গলা-গাল কেটে গুরুতর জখম হয়েছেন বাইকচালকেরা। এত ঘন ঘন দুর্ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে লালবাজারকেও। দুর্ঘটনা ঠেকাতে উড়ালপুলের বিভিন্ন অংশে স্পিড সাইনেজ বোর্ড বসানো হয়েছে। তার পরেও চালকদের একাংশ যে সাবধান হচ্ছেন না, এ দিনের ঘটনা থেকেই তা স্পষ্ট।

দুর্ঘটনার পরে বিভিন্ন সময়ে ট্র্যাফিক পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কখনও আবার উড়ালপুলের গঠনগত ত্রুটি নিয়ে হয়েছে সমালোচনা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা পরিবহণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ পার্থপ্রতিম বিশ্বাস মনে করছেন, ‘‘মা উড়ালপুলে বাঁকজনিত ত্রুটি রয়েছে। দীর্ঘ উড়ালপুল তৈরি করার সময়ে অনেক ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কারণে সেটির জ্যামিতিক আকার পাল্টাতে হয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই উড়ালপুলে একাধিক বাঁক রয়েছে। সেগুলির ব্যাসার্ধ অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ায় গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চালকদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।’’ পার্থপ্রতিমবাবুর আরও পর্যবেক্ষণ, ‘‘উড়ালপুলে রাস্তা তুলনায় ফাঁকা থাকায় চালক অনেক ক্ষেত্রেই গতি-সীমা মানেন না। তখন বাঁকের কথা মাথায় না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, স্পিড সাইনেজ বোর্ড বসানো থাকলেও চালকদের একটি অংশ তার তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ। এক ট্র্যাফিক সার্জেন্টের কথায়, ‘‘গতি-সীমা অতিক্রম করলে চালকদের তিনশো টাকা জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রচুর জরিমানাও হচ্ছে। তা সত্ত্বেও তাঁরা সতর্ক হচ্ছেন না।’’ ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তাও বলেন, ‘‘পুলিশের তরফে বারবার সাবধানে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চালকেরা নিজে থেকে সচেতন না হলে শুধু আইন করে দুর্ঘটনা ঠেকাতে যাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

DEath Accident Maa Flyover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE