Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আতঙ্কে বিস্ফোরণের এলাকাতেই যান না প্রৌঢ়

ভয় আর আতঙ্ক তাড়া করছে এখনও। তাই যশোর রোডের সেই মিষ্টির দোকানের ধারেকাছেও যান না তিনি। গত ২ অক্টোবর নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায় বিস্ফোরণের জেরে দুই কানেরই শ্রবণশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন।

নাগেরবাজারে বিস্ফোরণ। ফাইল চিত্র।

নাগেরবাজারে বিস্ফোরণ। ফাইল চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪০
Share: Save:

ভয় আর আতঙ্ক তাড়া করছে এখনও। তাই যশোর রোডের সেই মিষ্টির দোকানের ধারেকাছেও যান না তিনি। গত ২ অক্টোবর নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায় বিস্ফোরণের জেরে দুই কানেরই শ্রবণশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন। ডান পায়ের ভিতরে পাথর ঢুকে থাকায় এখনও ভাল করে হাঁটাচলা করতে পারেন না। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, ডান পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। সেই মতো বৃহস্পতিবার রাতে মানিকতলার ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি হলেন আটান্ন বছরের নবকুমার দাস। তিনি আদতে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বাসিন্দা।

গত ২ অক্টোবর সকাল ন’টা নাগাদ প্রবল বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল নাগেরবাজারের কাজিপাড়ায় ওই মিষ্টির দোকান সংলগ্ন এলাকা। মারা গিয়েছিলেন তিন জন। আহতের সংখ্যা ছিল আট। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন প্রৌঢ় নবকুমার। বিস্ফোরণস্থলের খুব কাছেই একটি ফ্ল্যাটে গত কুড়ি বছর ধরে কেয়ারটেকারের কাজ করছেন তিনি। সে দিন বেরিয়েছিলেন রুটি কিনতে। কী ভাবে যে বেঁচে গেলেন, নিজেও জানেন না। নবকুমারের কথায়, ‘‘হঠাৎ বিকট আওয়াজ। তার পরে আর জ্ঞান ছিল না আমার। জ্ঞান ফিরতে দেখি, হাসপাতালে শুয়ে রয়েছি।’’ বিস্ফোরণে তাঁর ডান পায়ের বেশ কিছুটা অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রায় দশ দিন ভর্তি থাকার পরে বাড়ি ফিরে যান তিনি। কিন্তু পরে এক্স-রে রিপোর্টে জানা যায়, ডান পায়ে তিনটি পাথর ঢুকে রয়েছে। চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার তদন্তভার সিআইডি-কে দেওয়ার পরে আহতদের কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়া তদন্তের কাজ প্রায় কিছুই এগোয়নি। যদিও সিআইডি সূত্রের দাবি, তদন্তের কাজ চলছে। নবকুমারের ছেলে সুমন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘আর জি করে ভর্তি থাকাকালীন সিআইডি অফিসারেরা কয়েক বার বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। এখন আর কেউ আসেন না।’’ তাঁর আর্জি, ‘‘এমন ঘটনা যারা ঘটাল, তাদের কড়া শাস্তি চাই। পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করুক।’’

কাজিপাড়ার বিস্ফোরণস্থলে তিনটি দোকান এখনও বন্ধ। তবে ওই এলাকার ধারেকাছে যান না নবকুমার। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘সে দিনের ঘটনাটা বারবার চোখের সামনে ভাসে। ওই জায়গায় যেতেই ভয় লাগে। রুটি কিনতে গেলেও ঘুরপথে অন্য দিকে যাই।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা নবকুমারের কর্মজীবন প্রায় পুরোটাই কাজিপাড়ায় কেটেছে। একমাত্র ছেলে সুমন, পেশায় বেসরকারি কর্মী বাবার সঙ্গেই থাকেন। সুমনের কথায়, ‘‘গত ২ অক্টোবর থেকে বাবাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে বেরিয়েছি। বাবা কানে একেবারেই শুনতে পাচ্ছেন না। এখন অস্ত্রোপচার কতটা সফল হয়, সেটাই দেখার।’’ মানিকতলা ইএসআই হাসপাতালের সুপার ময়ূখ রায় বলেন, ‘‘বিস্ফোরণে আহত ওই রোগীকে বিশেষ নজরদারিতে রেখেছি। মেডিক্যাল টিম তৈরি করে শীঘ্রই ওঁর অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Injury Nagerbazar Bomb Blast Old man R G Kar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE