Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আগুনে ‘আত্মঘাতী’ বৃদ্ধা, জখম স্বামী

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এবং সমীরবাবু ও তাঁর প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদের কারণে অরুণাদেবী প্রথমে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন। তার পরে স্বামীকে জড়িয়ে ধরেন। তাতেই অগ্নিদগ্ধ হন ওই বৃদ্ধ। 

সমীরবাবু ও অরুণাদেবীর ফ্ল্যাট। নিজস্ব চিত্র

সমীরবাবু ও অরুণাদেবীর ফ্ল্যাট। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩০
Share: Save:

অশীতিপর এক দম্পতিকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করল পুলিশ। শুক্রবার গভীর রাতে ইএম বাইপাসের কাছে গরফা থানা এলাকার পূর্বাচল কালীতলা রোডের মন্দিরপাড়ায়। তিনতলার একটি ফ্ল্যাট থেকে অগ্নিদগ্ধ ওই স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে চিকিৎসকেরা বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। বৃদ্ধ ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম অরুণা রায়চৌধুরী (৭০)। স্বামীর নাম সমীর রায়চৌধুরী (৮০)। ওই বৃদ্ধ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে এবং সমীরবাবু ও তাঁর প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদের কারণে অরুণাদেবী প্রথমে নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন। তার পরে স্বামীকে জড়িয়ে ধরেন। তাতেই অগ্নিদগ্ধ হন ওই বৃদ্ধ।

পুলিশের দাবি, সমীরবাবু তাদের জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত দেড়টার কিছু পরে তিনি ঘুমের মধ্যেই পায়ে ছেঁকা অনুভব করেন। পায়ের রোগে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধ কোনও মতে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে দেখেন, ঘর ধোঁয়ায় ভর্তি। স্ত্রী তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। সর্বাঙ্গ জ্বলছে তাঁর। সমীরবাবু কিছু বুঝে ওঠার আগেই বৃদ্ধা স্বামীকে বারবার জড়িয়ে ধরেন। প্রাণ বাঁচাতে এক সময়ে স্ত্রীকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন বৃদ্ধ। ধাক্কা খেয়ে স্ত্রী ঘরের মেঝেতে পড়ে গেলে ঘর লাগোয়া বাথরুম থেকে জল এনে তাঁর গায়ে ঢালতে থাকেন বৃদ্ধ। তাঁর চিৎকারে চারতলা আবাসনের প্রতিবেশীরা দৌড়ে আসেন এবং গরফা থানায় খবর দেন।

পুলিশ জানায়, রায়চৌধুরী পরিবারের ওই ফ্ল্যাট থেকে কেরোসিনের জেরিক্যান-সহ আরও কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই রাতেই বৃদ্ধ দম্পতির ছেলে শুভজিৎ ও বৌমাকে ফোনে খবর দেওয়া হয়। শুভজিৎ সপরিবার পুণেতে থাকেন। সেখান থেকে শনিবারই তাঁরা কলকাতায় রওনা দেন।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সমীরবাবুর ফ্ল্যাটে তালা মেরে দিয়েছে পুলিশ। আবাসনে তাঁদের প্রতিবেশীরা জানালেন, বৃদ্ধের আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে। চাকরি সূত্রে দেশের নানা জায়গায় ঘুরে ২০০৫ সাল নাগাদ মন্দিরপাড়ায় ওই ফ্ল্যাটটি কেনেন তিনি। বছর কয়েক আগে শুভজিৎ চাকরি নিয়ে অন্য রাজ্যে চলে যান। তার পর থেকে প্রায়ই ওই দম্পতির বাদানুবাদ হত। অশান্তি মেটাতে একাধিক বার পুলিশকেও ওই ফ্ল্যাটে আসতে হয়েছে। তাতেও সমস্যা মেটেনি। প্রথম দিকে প্রতিবেশীরা স্বামী-স্ত্রীকে বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। বিফল হয়ে তাঁরা হাল ছেড়ে দেন। এক প্রতিবেশী জানান, ওই দম্পতির ছেলেকে তাঁরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করতে। ছেলে সস্ত্রীক বছরে এক-দু’বার এলেও বেশি দিন থাকতেন না।

সমীরবাবুর এক প্রতিবেশী জানান, রাজু নামে স্থানীয় এক যুবকই দেখভাল করতেন ওই দম্পতিকে। বাইপাসের ধারে রাজুর গাড়ি সারানোর গ্যারাজ রয়েছে। ওই রাতে সমীরবাবুর চিৎকার শুনে তাঁর নীচের তলার এক প্রতিবেশী ও আবাসনের অন্য দিকের এক প্রতিবেশী দৌড়ে যান। তাঁরা গিয়ে দেখেন, ফ্ল্যাটের কোল্যাপসিবল গেটে তালা দেওয়া নেই। গেট সরিয়ে ভিতরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, সর্বত্র ধোঁয়া। সমীরবাবুর ঘর থেকে সেই ধোঁয়া বেরোচ্ছে। প্রতিবেশী এক মহিলা প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঘরে ঢুকে দেখেন, অরুণাদেবী মেঝেতে পড়ে আছেন। উঠে দাঁড়াতে অক্ষম সমীরবাবু বিছানায় বসেই প্রতিবেশী মহিলার দিকে হাত বাড়িয়ে তাঁকে বাঁচানোর অনুরোধ করছেন।

বৃদ্ধকে কোনও ভাবে শোয়ার ঘর থেকে বার করে আনেন ওই মহিলা। প্রতিবেশীরাই ফোন করে রাজুকে ডেকে আনেন। রাত দুটো নাগাদ গরফা থানার পুলিশ পৌঁছয়। একটি অ্যাম্বুল্যান্সে প্রথমে অরুণাদেবীকে তুলে বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে অন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে যাওয়া হয় সমীরবাবুকে।

ওই দম্পতির আর এক প্রতিবেশী জানান, অরুণাদেবীর মানসিক অবসাদের চিকিৎসা চলছিল। সমীরবাবুর জন্য সম্প্রতি একটি রিকশার ব্যবস্থা করে দেন রাজু। ওই রিকশাচালকই তিনতলা থেকে নীচে নামিয়ে সমীরবাবুকে মাঝেমধ্যে দোকান-বাজারে নিয়ে যেতেন এবং ফের তিনতলায় তুলে দিতেন। বছরখানেক ধরে প্রতিবেশীদের সঙ্গেও তেমন কথাবার্তা ছিল না ওই দম্পতির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Woman Fire Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE