Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের বিরুদ্ধে নালিশ নিখোঁজ বৃদ্ধার পরিবারের

শুক্রবার বিকেলে উত্তর বন্দর থানায় গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগটি দায়ের করেছেন সঞ্চারী দে নামে এক মহিলা। তিনি নিমতলা ঘাট থেকে বানের তোড়ে গঙ্গায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বৃদ্ধা মিতালি চৌধুরীর (৬১) পুত্রবধূ।

এমন বানের তোড়েই ভেসে যান মিতালিদেবী। ফাইল চিত্র

এমন বানের তোড়েই ভেসে যান মিতালিদেবী। ফাইল চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১৮
Share: Save:

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হল পুলিশের কাছেই!

শুক্রবার বিকেলে উত্তর বন্দর থানায় গিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগটি দায়ের করেছেন সঞ্চারী দে নামে এক মহিলা। তিনি নিমতলা ঘাট থেকে বানের তোড়ে গঙ্গায় নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বৃদ্ধা মিতালি চৌধুরীর (৬১) পুত্রবধূ। তাঁর অভিযোগ, বান আসার খবর থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ওই রাতে ঘাটে উপস্থিতদের সতর্ক করেনি। বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে, তাঁদেরই আত্মীয়, প্রসেনজিৎ মজুমদার নামে এক যুবকের। শনিবার রাত পর্যন্ত খোঁজ মেলেনি তাঁর শাশুড়ি মিতালিদেবীরও!

গত মঙ্গলবার রাতে মীরা কুন্ডু নামে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ নিয়ে নিমতলা শ্মশানে যান তাঁর আত্মীয়েরা। শেষকৃত্যের পরে অস্থি বিসর্জনের জন্য গঙ্গায় নেমেছিলেন তাঁর মেয়ে অন্বেষা। সঙ্গে ছিলেন পরিজনেরাও। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ কিছু বুঝে ওঠার আগেই বানের তোড়ে মীরাদেবীর আত্মীয়দের মধ্যে ন’জন গঙ্গায় ভেসে যান। দ্রুত আট জনকে উদ্ধার করা গেলেও তাঁদের মধ্যে প্রসেনজিৎ নামের যুবককে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। ওই রাত থেকে নিখোঁজ মিতালিদেবী। পুলিশ জানায়, বুধ, বৃহস্পতি এবং শুক্রবার দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েও তাঁর খোঁজ মেলেনি। শনিবারও অভিযান চালানো হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। এর মধ্যেই পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছে তাঁর পরিবার। সেই সঙ্গে সামনে এসেছে, ঘাটে লাগানো ১৬টি ক্যামেরার মধ্যে অধিকাংশই বন্ধ রাখা হয়েছে। পুলি‌শের যুক্তি, এর পিছনে রয়েছে ধর্মীয় কারণ!

উত্তর বন্দর থানার সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক যদিও বান আসার খবর না জানানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সতর্ক ঠিকই করা হয়েছিল। কেউই হয়তো সেই কথায় কান দেননি।’’ যদিও এর উল্টো সুর শোনা গিয়েছে নিমতলা পুলিশ পোস্টের আধিকারিকদের কাছে। এই পোস্টটিও উত্তর বন্দর থানার। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেছেন, ‘‘বান যে আসছে, সে রকম খবর ছিল না। থাকলে ঠিক সতর্ক করা হয়। আগে সতর্ক করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছে আমাদের। তবু কাজ তো ছাড়িনি। জোয়ার-ভাটার খবর ছিল।’’ এ দিকে, খবর না থাকার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। তিনি জানান, জোয়ার-ভাটার খবর নিয়মিত থানায় জানানোর পাশাপাশি বান আসার খবর থাকলে তা-ও জানানো হয় থানাকে। পুলিশ পোস্টগুলিতে সেই খবর পৌঁছে দেওয়া থানারই কাজ। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘এ ছাড়াও বান আসার আগে ঘাটের ৪০ কিলোমিটার লম্বা এলাকায় আমাদের বোট সাইরেন বাজিয়ে সতর্ক করে আসে। সে দিনও সতর্ক করেছে। থানা যদি না-ও জানিয়ে থাকে, আমাদের বোট পুলিশ পোস্টের নজর এড়ানোর কথা নয়।’’ রিভার ট্র্যাফিক পুলিশের আর এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘আমাদের বোট সতর্ক করে ফিরে আসার পরে হয়তো গঙ্গায় নেমেছিলেন মীরাদেবীর আত্মীয়েরা। পুলিশ পোস্টের উচিত ছিল সতর্ক করা।’’ কলকাতা পুলিশের ডিসি (বন্দর) ওয়াকার রাজা বলেন, ‘‘পরিবারের অভিযোগ শুনেছি। একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। এখন কী করা যাবে! এর পর থেকে ঘাটে কড়া প্রচার চালানো হবে।’’

সঞ্চারীর অবশ্য অভিযোগ, ‘‘পুলিশ আদতে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে। সকলেই একে অপরের উপরে দোষ চাপাচ্ছে। ওই রাতে পুলিশ পোস্টে আদৌ কোনও পুলিশ ছিল কি না, দেখা দরকার। আমি লড়াই জারি রাখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drown Sudden Tide Nimtala Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE