অঘটন: সিআইটি রোডে এই রিকশায় ধাক্কা মারে একটি বাস। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
এক দিকে বেপরোয়া গতি। সঙ্গে দোসর রেষারেষি। শহর জুড়ে বাসের এ হেন দাপট যে কোনও ভাবেই বন্ধ হচ্ছে না, ফের তার প্রমাণ মিলল বৃহস্পতিবার। শহরের দুই প্রান্তের দু’টি ঘটনায় মৃত্যু হল এক জনের। গুরুতর আহত আরও তিন জন।
এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ প্রথম ঘটনাটি ঘটে সিআইটি রোড ও আনন্দ পালিত রোডের সংযোগস্থলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২৪০ রুটের একটি বাস বেপরোয়া গতিতে মৌলালি থেকে পার্ক সার্কাসের দিকে যাচ্ছিল। সেই সময়ে আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে যাত্রী-বোঝাই ওই বাস। মহম্মদ সেলিম ও অতনু ঘোষ নামে দুই পথচারী ও একটি রিকশাকে ধাক্কা মেরে কিছুটা এগিয়ে যায় সেটি। তার পরে রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে আটকে যায়। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বাসের ধাক্কায় দুই পথচারীই জখম হন। তাঁদের মধ্যে মহম্মদ সেলিমের (৩৫) চোট ছিল গুরুতর। রিকশাটি উল্টে গিয়ে আহত হন চালক গুড্ডু সাউও। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে মহম্মদ সেলিমকে ভর্তি করা হলেও কিছু ক্ষণ পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। অন্য দু’জনকে অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই শ্যামবাজারে বাসের রেষারেষির জেরে মাথায় গুরুতর চোট পান উলুবেড়িয়ার বাসিন্দা দেবাশিস দাস। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ে মেট্রো স্টেশনের কাছে বছর চৌত্রিশের ওই যুবক শ্যামবাজার-আমতলা ওপি রুটের একটি মিনিবাসে উঠছিলেন। পিছনেই ছিল ওই একই রুটের আর একটি মিনিবাস। আচমকাই সেটি তীব্র গতিতে সামনের বাসকে ওভারটেক করে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে ঘটে বিপত্তি। সামনের বাসের গা ঘেঁষে পিছনের বাসটি যাওয়ার সময়ে দু’টির মাঝে পড়ে গিয়ে জখম হন দেবাশিস।
যাত্রীদের চেঁচামেচিতে ছুটে আসেন স্থানীয় লোকজন। রক্তাক্ত অবস্থায় দেবাশিসকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে দেবাশিসের দাদা এসে তাঁকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় তখনও চাপ চাপ রক্ত। অন্যান্য বাস আটকে দিয়েছেন এলাকার মানুষ। অভিযোগ, প্রতিদিনই নিয়ম ভেঙে মেট্রো স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে মিনিবাসগুলি।
এ দিন দু’টি ঘটনাতেই উত্তেজিত জনতা বাস আটকে ভাঙচুর চালায়। বাসের রেষারেষির প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সকালে সিআইটি রোডের ঘটনায় এন্টালি থানার
পুলিশবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। চালক-সহ বাসটিকে আটক করে নিয়ে যায় তারা। দুপুরের ঘটনায় শ্যামবাজার-আমতলা ওপি রুটের যে মিনিবাসটি ওই যুবককে জখম করে, সেটিকে এবং তার চালককে আটক করেছে পুলিশ।
উপরের দু’টি অঘটন অবশ্য বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। মঙ্গলবার দুপুরেও রাজাবাজারে বাসের রেষারেষিতে ডান পায়ে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, আজ শুক্রবার তাঁর অস্ত্রোপচার হতে পারে। গত সপ্তাহেই বাসের রেষারেষিতে পড়ে হাত কাটা গিয়েছিল বাঘা যতীনের বাসিন্দা এক প্রাক্তন অধ্যাপকের। ওই দিনই আবার গোলপার্ক এলাকায় বাস থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় এক তরুণীর। সে ক্ষেত্রে অভিযোগ ছিল ওই তরুণী নামার আগেই বাস চালিয়ে দিয়েছিলেন চালক। গত শুক্রবার একই ঘটনা ঘটে তারাতলাতেও। সেখানে এক বৃদ্ধা নামার আগেই বাস ছেড়ে দেওয়ায় তিনি টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান। ওই বাসের চাকাতেই তাঁর দু’টি পা কেটে যায়। পরে তিনি মারা যান।
শহর জুড়ে বেপরোয়া বাস সম্পর্কে প্রশ্ন করতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পান্ডেকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তা বেজে গিয়েছে। মেসেজ করা হলেও উত্তর আসেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy