Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষানবিশ চালকের ধাক্কা, মৃত্যু মহিলার

রাস্তার ধারে একটি মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মহিলা। আচমকা একটি গাড়ির ধাক্কায় তিনি ছিটকে পড়েন। মাথা ও কোমরে গুরুতর চোট লাগে।

অঘটন: বৃহস্পতিবার আটক হওয়া গাড়িটি। (ইনসেটে) সরস্বতী হালদার। নিজস্ব চিত্র

অঘটন: বৃহস্পতিবার আটক হওয়া গাড়িটি। (ইনসেটে) সরস্বতী হালদার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৫০
Share: Save:

রাস্তার ধারে একটি মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক মহিলা। আচমকা একটি গাড়ির ধাক্কায় তিনি ছিটকে পড়েন। মাথা ও কোমরে গুরুতর চোট লাগে। পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় ওই মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা গিয়েছেন। দুর্ঘটনার পরেই সরু গলি দিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে যান চালক। ঘণ্টাখানেক তল্লাশি চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার পরে পুলিশ জানতে পারল, তাঁর কাছে ছিল লার্নার্স লাইসেন্স।

বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে গড়িয়াহাট থানা এলাকার অশ্বিনী দত্ত লেনে। মৃতার নাম সরস্বতী হালদার (৩৬)। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বৈদ্যপুরে। তিনি বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। এ দিনও গড়িয়াহাট-বালিগঞ্জ এলাকায় কাজের জন্য এসেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি পণ্ডিতিয়া রোড থেকে বেপরোয়া গতিতে এসে সরস্বতীকে ধাক্কা মারে।

লালবাজার সূত্রের খবর, ঘটনার পরেই অভিযুক্ত চালক গাড়ি নিয়ে দেশপ্রিয় পার্কের দিকে চলে যান। কিছু ক্ষণ পরে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ দেশপ্রিয় পার্কের কাছ থেকে গাড়িটি আটক করে। কিন্তু তখন চালকের খোঁজ মেলেনি। এর পরেই গাড়ির মালিকের সন্ধানে নামেন তদন্তকারীরা। জানা যায়, স্থানীয় এক জল ব্যবসায়ী গাড়িটির মালিক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, গাড়ি ধোয়ানোর জন্য তিনি এলাকারই এক চালককে এ দিন বলেছিলেন।

শেষমেশ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও গাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুপুর দেড়টা নাগাদ পুলিশ পণ্ডিতিয়া রোড থেকে ধরে অভিযুক্ত চালক সুমিত শর্মাকে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, জেরায় সুমিত জানিয়েছেন, তাঁর কাছে ‘লার্নার্স লাইসেন্স’ রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে তিনি ওই লাইসেন্স পান। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সেটি বৈধ রয়েছে।

স্ত্রী অসুস্থ, পুলিশের কাছ থেকে এই খবর পেয়ে হাসপাতালে পৌঁছন সরস্বতীর স্বামী লক্ষ্মণ হালদার। তখনই তিনি পুরো ঘটনা জানতে পারেন। লক্ষ্মণ জানান, দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁদের সংসার। বড় মেয়ে পুনম এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। কিছু দিন পরেই শুরু পরীক্ষা। মেয়ের পড়ার ক্ষতি যাতে না হয়, সে জন্য তাকে মায়ের অসুস্থতার খবর দেননি তিনি। লক্ষ্মণ বলেন, ‘‘ওর মা অসুস্থ, সেটাই বলতে পারিনি। এখন কী ভাবে জানাব, ওদের মা আর বেঁচে নেই?’’

এলাকাবাসীরা জানান, অশ্বিনী দত্ত লেনে সকাল থেকে গাড়ি ধোয়ার কাজ চলে। বিভিন্ন বয়সের মানুষ ওই রাস্তায় প্রাতর্ভ্রমণ করেন। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, যাঁরা ওই রাস্তায় গাড়ি ধুতে নিয়ে আসেন, তাঁদের গাড়ি চালানোর যোগ্যতা আছে কি না, সেটা দেখবে কে? একই প্রশ্ন তুলেছে মৃতার পরিবার। তাঁদের বক্তব্য, গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে নিয়ম মাফিক গাড়ি চালালে বিপদ এড়ানো যায়। যাঁর হাতে মালিক গাড়ি তুলে দিচ্ছেন, তাঁর চালানোর অনুমতি আদৌ আছে কি না, সেটা যাচাই করাও জরুরি। না হলে এমন দুর্ঘটনা কোনও দিনই বন্ধ হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Woman Car Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE