প্রতিবাদ: পুর অধিবেশনে যখন গোলমাল চলছে, তখন বাইরেও কংগ্রেসের বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
নারদ-কাণ্ডে গত মার্চে কার্যত ভেস্তে গিয়েছিল পুরসভার বাজেট অধিবেশন। সেই বিষয়েই এক মাস পর মঙ্গলবার মেয়র এবং ডেপুটি মেয়রের পদত্যাগের দাবিতে অধিবেশন কক্ষ উত্তাল হল বিরোধীদের বিক্ষোভে। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে বিরোধী কাউন্সিলরদের কেউ হাতে প্লাকার্ড নিয়ে, কেউ লালকার্ড দেখিয়ে হুইসেল বাজিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। প্রতিবাদে রুখে দাঁড়ান শাসক দলের বেশ কয়েক জন কাউন্সিলর। প্ল্যাকার্ড, বাঁশি, পোস্টার কাড়তে টানাটানি চলে। হয় ধস্তাধস্তিও। পুরসভার চেয়ারপার্সন মালা রায় আপ্রাণ থামানোর চেষ্টা করেন। শেষমেশ অধিবেশন কক্ষ বয়কট করেন বিরোধীরা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় কিন্তু নিজের আসনে বসে চুপচাপ দেখে গিয়েছেন সব। একটা কথাও বলেননি।
পুরসভার বাইরেও এ দিন বিক্ষোভ দেখান প্রদেশ যুব কংগ্রেসের সমর্থকেরা। মেয়রের কুশ পুতুল পোড়ানো হয়। আন্দোলনকে হঠাতে পুলিশ লাঠিও তোলে। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় কংগ্রেসের কর্মী সমর্থকদের। কংগ্রেসের দাবি, পুলিশ শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর লাঠি চালিয়েছে। তাদের মারধর করেছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
আরও পড়ুন: অ্যাপোলো-কাণ্ডে ‘শেষ’ দেখতে চান গুঞ্জার মা-বাবা
এ দিন দুপুর একটায় পুরসভার অধিবেশন শুরু হয়। সদ্য প্রয়াত প্রাক্তন এক বিধায়ক মহম্মদ ইয়াকুবের স্মরণে নীরবতা দিয়ে শুরু হয় অধিবেশন। নীরবতা ভাঙতেই রে রে চেঁচিয়ে উঠলেন বিরোধী কাউন্সিলরেরা। বলতে থাকেন, ‘ঘুষ কাণ্ডে সিবিআই এফআইআর করেছে মেয়র ও ডেপুটি মেয়রের বিরুদ্ধে। তাঁদের পদত্যাগ করতে হবে।’ পরবর্তী বিষয় ঘোষণা করার সময়ই পাননি চেয়ারপার্সন মালা রায়। আচমকাই বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকেন। তা দেখে ক্ষেপে যান শাসক দলের কাউন্সিলর অনিন্দ্যকিশোর রাউত, তপন দাশগুপ্তেরা। প্ল্যাকার্ড কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। চলে ঠেলাঠেলি, ধস্তাধস্তি। এর মধ্যেই হঠাৎ লাল কার্ড নিয়ে হাজির সিপিএম কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তী। হুইসল বাজিয়ে লাল কার্ড তুলে চিৎকার করে বলতে থাকেন মেয়রকে পদত্যাগ করতে হবে। তাল মেলান বাম কাউন্সিলর রত্না রায়মজুমদার, চয়ন ভট্টাচার্য, দেবাশিস মুখোপাধ্যায়েরা। লাল কার্ড প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে তা ফেলে দেন শাসক দলের ওই কাউন্সিলরেরা। চলে আর এক প্রস্ত ধস্তাধস্তি। মিনিট ১৫ ধরে চলে এই পর্ব।
শাসক দলের কাউন্সিলরেরা বিরোধীদের হাতে থাকা বাঁশি, প্ল্যাকার্ড, পোস্টার সবই কেড়ে নেন। এর পরই বিরোধীরা অধিবেশন কক্ষ বয়কট করেন। কংগ্রেসের প্রকাশ উপাধ্যায় এবং সিপিএমের রত্না দেবীর বক্তব্য, ‘‘দেশবন্ধু, সুভাষচন্দ্রের মতো মনীষীদের বসা চেয়ার আজ কলঙ্কিত করেছেন বর্তমান মেয়র। তাঁর পদত্যাগের দাবিতেই বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে।’’ বার বার প্রশ্ন করা হলেও মেয়র শোভনবাবু বিরোধীদের এই আচরণের কোনও জবাব দিতে চাননি।
একই ঘটনায় পুরসভার বাইরে যুব কংগ্রেসের নেতা রোহন মিত্রের নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখায় কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশবাহিনী প্রস্তুত ছিল পুরসভার চারপাশে। শুরু থেকেই শক্ত হাতে তা রোখার চেষ্টায় বলপ্রয়োগও করে পুলিশ। রাস্তা অবরোধ করে ওই বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ মিছিলের বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy